কলকাতা, ১১ আগষ্ট- এমএ পাশ করার পর পিএইচডি করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ সেটাই ছিল তার অপরাধ৷ আর সেই অপরাধেই এক তরুণী বধূকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে৷ বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের দমদম এলাকার সুভাষনগর থেকে ঐ তরুণীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়৷ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করার পর গবেষণা করতে চেয়েছিলেন শ্রাবন্তী৷ কিন্তু তার শ্বশুরবাড়ির লোক তা মেনে নিতে পারেননি৷ তাদের যুক্তি ছিল, পড়াশোনার নামে বাইরে গিয়ে বদসঙ্গে মিশবে গৃহবধূ, যা কোনওমতেই মেনে নেয়া যায় না৷ কিন্তু এই ফতোয়া মেনে নিতে পারেননি মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা ২৩ বছরের ওই তরুণী৷ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে৷ শ্রাবন্তীর বাবার বাড়ির অভিযোগ, সেই রাগেই তাদের মেয়েকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন৷ পুলিশ তার স্বামী বিশ্বদেব মিত্রকে গ্রেন্তার করেছে৷ দমদম থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, খুনের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে৷ শ্বশুরবাড়ির অবশ্য বক্তব্য, শ্রাবন্তী আত্মহত্যা করেছেন৷ পুলিশ সূত্রে খবর, ৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা শ্রাবন্তীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় দমদমের রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা হোসিয়ারি ব্যবসায়ী বিশ্বদেব মিত্রর৷ পরিবারের অভিযোগ, ১৫ দিন যেতে না যেতেই মেয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু করে বিশ্বদেবের বাড়ির লোকজন৷ প্রথমদিকে শ্রাবন্তী মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করছিলেন৷ কিন্তু পরে সব কিছু তিনি বাপেরবাড়িতে জানান৷ শ্রাবন্তীর মামা প্রবীর পাল বলেন, ঘটনার কথা শুনে আমরা বিশ্বদেবের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলি৷ এরপর কিছুদিন সব ঠিকঠাক থাকলেও ফের ওরা শ্রাবন্তীর ওপর অত্যাচার শুরু করে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, এমএ পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার ইচ্ছে ছিল মেয়ের৷ তাতেই আপত্তি ছিল স্বামী এবং বাকিদের৷ ওই সময় শ্রাবন্তী সন্তানসম্ভবা হয়ে ওঠেন৷ তার মা সুপ্রীতি বসু বলেন, বিশ্বদেব মেয়েকে বলেছিল, এখনই বাচ্চা মানুষ করার ক্ষমতা আমার নেই৷ সুতরাং গর্ভপাত করতে হবে৷ এটা মানতে পারেননি শ্রাবন্তী৷ অভিযোগ, তখন তাকে বলা হয়, গর্ভপাত করালে পড়াশুনোর অনুমতি দেয়া হবে৷ লেখাপড়ার নেশায় শ্রাবন্তী এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান৷ তবে পুরোটাই ছিল মিথ্যে প্রতিশ্রুতি৷ গর্ভপাতের পর সব কিছু ভুলে যায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন৷ এমনকী,এমএ পাশ করলেও তাকে রবীন্দ্রভারতী থেকে ফলাফল আনতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ৷ তাকে নিয়মিত মারধরও করা হত৷ শ্রাবন্তীর মামা প্রবীরের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির আপত্তি থাকলেও ভাগ্নির পড়াশোনার ইচ্ছে ছিল৷ আর ওই ইচ্ছে দূর করার জন্যই ওর ওপর অত্যাচার বাড়ে৷ বুধবার সেই অত্যাচার চরমে পৌঁছায় বলে দাবি তরুণীর পরিবারের৷ ফোন এবং এসএমএসের মাধ্যমে মা ও দিদিকে জানিয়েছিলেন শ্রাবন্তী৷ শুনেই ছুটে আসেন মা সুপ্রীতি৷ তিনি এসে কথাও বলেন বিশ্বদেবের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে৷ তবে বৃহস্পতিবার সকালেই তাদের ফোন করে জানানো হয়, মেয়ে আত্মহত্যা করেছে৷ ঘটনার কথা বৃহস্পতিবার সকালে ছুটে আসেন শ্রাবন্তীর পরিবারের সদস্যরা৷ পরিবারের দাবি, মেয়ের গলার দাগ থেকেই স্পষ্ট, এটা খুনের ঘটনা৷ এর পরেই তারা যান দমদম থানায়৷ সেখানে গিয়েই শ্বশুরসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন৷ আর সেই অভিযোগের পরই দমদম থানার পুলিশ বিশ্বদেবের বাড়িতে এসে দেখেন, পুরো বাড়িতে তালা বন্ধ৷ যদিও তল্লাশি চালিয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেন্তার করেছে পুলিশ৷ জেরার মুখে সে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলেই দাবি করেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি জোন ২ ধ্রুবজ্যোতি দে বলেছেন, শ্রাবন্তীর স্বামীকে আমরা ইতিমধ্যেই গ্রেন্তার করেছি৷ বাকিদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই সত্য সামনে আসবে৷ শ্রাবন্তী বুধবার তার বাড়ির সদস্যদের যে এসএমএসগুলি পাঠিয়েছিলেন, তদন্তে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই দাবি পুলিশের৷ সূত্র: এই সময় আর/১৭:১৪/১১ আগষ্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2wOQPXX
August 12, 2017 at 12:43AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন