সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট সহ দেশের ছয় সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনগুলো হল- রংপুর, গাজীপুর, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল। সম্প্রতি সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন প্রস্তুতি সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
আগামী ডিসেম্বরের শেষার্ধে রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাকি পাঁচ সিটি কর্পোরেশনে আগামী বছরের মাঝামাঝি ধাপে ধাপে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিটি কর্পোরেশনগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছে ইসি সচিবালয়। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ছয় সিটি কর্পোরেশনে সংশ্লিষ্ট জেলা ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অনেক সময় বাকি থাকলেও সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা সরব হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তারা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেছেন। নির্বাচন অফিসগুলোয়ও খোঁজখবর নিচ্ছেন। কেউ কেউ নির্বাচনের যোগ্যতা-অযোগ্যতার শর্ত, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার ক্ষেত্রে কী কী করণীয়, তা নির্বাচন অফিস থেকে জেনে নিচ্ছেন। এমনকি পুরনো মনোনয়নপত্রের ফরমও নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করছেন কেউ কেউ। তারা জানান, সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতায় ছয় সিটিতে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে।
ছয় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের বিষয়ে ইসির অবস্থান জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, কমিশন সভায় রংপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, রংপুর সিটি নির্বাচনের এখনও কয়েক মাস বাকি। আমরা আগেভাগেই এ বিষয়ে আলোচনা করেছি, যাতে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাকি পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন কখন হবে, তা নিয়ে কমিশন সভায় কোনো আলোচনা হয়নি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সীমানা পুনর্নির্ধারণ, জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন প্রস্তুতি সংক্রান্ত কমিটির এক বৈঠক বৃহস্পতিবার কমিশন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা জানান, সিটি কর্পোরেশনগুলোয় নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করতে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে সিটি কর্পোরেশনগুলোর সীমানা পরিবর্তন বা এ সংক্রান্ত কোনো পদক্ষেপ বা আইনগত জটিলতা রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগাযোগ করতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এসব সিটিতে সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র কোন কোন প্রতিষ্ঠানে হতে পারে এবং ওইসব প্রতিষ্ঠানের কী অবস্থা, তা খোঁজখবর নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনে ভোটার হালনাগাদ ও ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুতের বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে।
আরও জানা গেছে, কমিশন সচিবালয় থেকে ছয় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়েছে। বেশ কিছু তথ্য কমিশনে এসে পৌঁছেছে।
বিশেষ করে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রস্তুতিসংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য যেমন- সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা, বিগত নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা, আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য কেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যাসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি পাঁচ সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিসগুলো থেকে ভোটার সংক্রান্ত তথ্য নিয়েছে কমিশন সচিবালয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্পোরেশনের মেয়াদ, পরীক্ষার সময়সূচি ও অনুকূল আবহাওয়ার বিষয় বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ আগামী বছরের ১৮ মার্চ, গাজীপুরে আগামী বছরের ৪ সেপ্টেম্বর, ওই বছরের ৮ সেপ্টম্বর সিলেট, ২৫ সেপ্টম্বর খুলনা, ৫ অক্টোবর রাজশাহী ও ২৩ অক্টোবর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত জেএসসি ও জেডিসি, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং স্কুলগুলোয় বার্ষিক পরীক্ষা রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলবে। ওই মাসেই প্রথমে খসড়া পরে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিলের শেষদিকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়ে জুন পর্যন্ত চলতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে আগামী ডিসেম্বরের শেষার্ধে রংপুর সিটির নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সিটিতে দু-একটি ওয়ার্ডে ইলেকট্রুনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার যুগান্তরকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ভোটারদের হাতে স্মার্টকার্ড দেয়ার কার্যক্রম ২০ আগস্ট শুরু হচ্ছে। আমরা চাই, ভোটের আগে ভোটারদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে। পাশাপাশি নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব তথ্য কমিশন থেকে চাওয়া হয়েছে, তা পাঠানো হয়েছে।
ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী বছরের ৮ মার্চ গাজীপুর, ১৩ মার্চ সিলেট, ৩০ মার্চ খুলনা, ৯ এপ্রিল রাজশাহী ও ২৭ এপ্রিল বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কাউন্টডাউন বা ক্ষণগণনা শুরু হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এসব সিটিকে ভোট গ্রহণ করতে হবে।
ইসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালের ১৫ জুন বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে একই দিন ভোট হয়েছিল। কিন্তু ওইসব সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সভার দিন থেকে কর্পোরেশনের মেয়াদ পাঁচ বছর হওয়ায় কমিশন ধাপে ধাপে এসব সিটিতে ভোট নেয়ার চিন্তা করছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোস্তফা ফারুক বলেন, ভোট গ্রহণের এখনও অনেক সময় রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করতে পারব। রাজশাহীর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সব পদক্ষেপ নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নিতে অনেকের আগ্রহ দেখছি। নির্বাচন অফিসে এসে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে অনেকেই খোঁজখবর নিচ্ছেন। একই ধরনের তথ্য জানিয়েছেন বাকি তিন সিটি কর্পোরেশন-সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2vCa4F3
August 14, 2017 at 08:00PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন