কোচবিহার, ১৬ আগস্ট- প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি বাঁধ ভাঙায় উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়েছে। একদিনেই ৯ জনের মৃত্যুর খবর। কোচবিহারে ৫ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। দক্ষিণের পাশাপাশি উত্তর দিনাজপুরের হালও বেশ খারাপ। ফুলহার, গঙ্গা ও মহানন্দার জলে বিপদ বাড়ছে মালদহের। তবে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। দুর্যোগ না কাটায় এখনও উত্তরবঙ্গের দিকে ট্রেন বা বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না। কোচবিহারে জল নামার সঙ্গে সঙ্গে আসছে দুঃসংবাদও। মঙ্গলবার জেলায় ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এদিন তুফানগঞ্জের বলরামপুর ও মারুগঞ্জে কালজানি নদী থেকে তিন যুবকের দেহ মেলে। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। কালজানি নদী থেকে বনবাসী অধিকারী নামে এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে। কোচবিহার পুর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পূর্ণিমা বণিক তিনদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। এদিন তাঁর দেহ পাওয়া যায়। পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া এলাকায় তোর্সার ভাঙন ক্রমশ বড় আকার নিয়েছে। জেলার দিনহাটার গিতালদহে ধরলা নদীর ভাঙন চিন্তা বাড়াচ্ছে। গত কয়েকদিনের মতো উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিস্থিতির খোঁজ নেন। বছরের অন্য সময় নিস্তেজ। টানা বৃষ্টির জলে আপাত নিরীহ আত্রেয়ী, টাঙ্গন ও পুনর্ভবা নদী ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। তিনটি নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়েছে। বানের জলে এই জেলায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। চকভৃগু এলাকার মংলু সিং জলে তলিয়ে মারা যান। আভারানি সরকার নামে এক বৃদ্ধা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু তাঁর বাড়ির সমান এক মানুষ সমান জল থাকায় তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়নি। বিনা চিকিৎসায় মারা যান তিনি। জেলার বংশীহারীর নারায়ণপুরে রাস্তা পেরোনোর সময় জলের তোড়ে ভেসে গণেন্দ্র মাহাতো নামে এক বৃদ্ধ মারা যান। বুনিয়াদপুরে বাড়ির সামনে জলে ডুবে মৃত্যু হয় সুফল মুর্মুর। জলবন্দিদের উদ্ধার জন্য জেলা প্রশাসন মালদহের থেকে ১৫টি স্পিডবোট চেয়েছে। কিন্তু রবিবার বিকেল পর্যন্ত তা পৌঁছায়নি। বাধ্য হয়ে কয়েকটি ডিঙি নৌকা নিয়ে উদ্ধারকাজের চেষ্টা চলছে। বালুরঘাটের ত্রিধারা এলাকায় আত্রেয়ী নদীর বাঁধ ভেঙে বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এলাকা ডুবে। খাবারের অভাব। যার জেরে চকভৃগুতে রেশন নিয়ে বিক্ষোভ হয়। পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুরেরও বানভাসি অবস্থা। কুলিক নদীর জলে রায়গঞ্জ পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ড জলের তলায়। যা নজিরবিহীন। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক জলের তলায়। শিলিগুড়ি মোড় এবং নাগর এলাকা ডুবেছে। জলবন্দিদের উদ্ধারে নাগরে নামানো হয়েছে স্পিডবোট। কুলিক, নাগর ও গামারি নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। জেলায় ২৭টি ত্রাণ শিবির খুলেছে প্রশাসন। যেখানে ঠাঁই হয়েছে ১৮ হাজার দুর্গতর। উত্তরবঙ্গের আর এক জেলা মালদহের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। গঙ্গা, ফুলহার, মহানন্দার জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ফুলহারের জলে হরিশচন্দ্রপুরের ১৫টি গ্রাম ইতিমধ্যে প্লাবিত। আত্রেয়ী নদীর বাড়তি জলে বামনগোলার কয়েকটি গ্রাম ডুবেছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসক জরুরি বৈঠক করেন। এদিকে কুমলাই নদীর বাঁধ ভেঙে ধুপগুড়ি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবেছে। প্রায় ২ হাজার মানুষ জলবন্দি। তবে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি কিছুটা কমলেও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন। এনবিএসটিসির কর্মীরা রাস্তার বেড়িয়ে দেখেন অনেক জায়গাতেই জল রয়েছে। বিকল্পভাবে বাস চালানোর চেষ্টা চলছে। তবে সোমবার ধর্মতলা থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে রওনা দেওয়া বাসগুলি আটকে রয়েছে রায়গঞ্জে। রেলের ট্র্যাকেরও একই দুর্দশা। এমএ/ ১২:২৭/ ১৬ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2wN9qol
August 16, 2017 at 06:28AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন