জেদ্দা, ০৭ আগস্ট- বিদেশে যাবার উত্তেজনায় সঠিক খবরাখবর নিতে ভুলে যায় অনেকেই, ফলে সহজেই মানুষ প্রতারণার ফাঁদে পড়েন এবং সেদেশে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। কেউ কেউ আবার বিষয় সম্পত্তি নিলামে তুলে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে বিদেশ পাড়ি দেয়, তাই দেশে ফিরেও ভাল কিছু করার আসা থাকে না। ফলে সেখানেই মানবেতর দিন কাটাতে হয় তাদের। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে তেলসমৃদ্ধ এবং আয়তনে বড় দেশ সৌদি আরব। যে সৌদি আরব একসময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য স্বর্গ ছিল, সেই সৌদি আরবেই আজ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে অসংখ্য বাংলাদেশি। কাজ না পেয়ে বেকার বেকার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরাচ্ছে অনেকে। রক্ষণশীল ধর্মীয় মূল্যবোধ, নতুন নতুন কাজের সুযোগ ও ভালো বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ থাকায় বহু আগ থেকেই বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজের খোঁজে সৌদি আরবে যাওয়া শুরু করে। সেখানে কনস্ট্রাকশন, ড্রাইভিং, ইলেকট্রিশিয়ান, ওয়েলডিং, ক্লিনার, প্লাম্বিং, টেইলারিং, ক্যাটারিং, খনি শ্রমিক, হোটেল কর্মচারি, কার্পেন্টার, হেয়ার স্টাইলার, সিকিউরিটি গার্ড, সেলসম্যান, এগ্রিকালচার ও হাউজ কিপিং ইত্যাদি পেশায় কাজ করার অবারিত সুযোগ ছিল। সৌদি আরবে বর্তমান কর্মসংস্থানের হালচাল নিয়ে কথা বলেন, মনির হোসেন চৌধুরী। তিনি জানান, সেখানকার অনেক বাংলাদেশি মোবাইলফোন ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল. তবে এখন প্রবাসীদের জন্য এই ব্যবসার সুযোগ প্রায় বন্ধ। আরবরা নিজেদের হাতে নিয়ে নিচ্ছে মোবাইলফোনের ব্যবসা। সাথে সাথে গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসাও তারা ধীরে ধীরে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নিচ্ছে, তাই এই ব্যবসাও বেশিদিন টিকবেনা বলে আশংঙ্খা করছেন তিনি। বেশি টাকায় ভিসা কিনে বিদেশে গেলেও শ্রমিকেরা প্রায়ই নতুন নতুন প্রতারণার শিকার হয়। দালাল কিংবা তার এজেন্সি শ্রমিককে পূর্ব-প্রতিশ্রুত কাজ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। চাকরিতে প্রতিশ্রুত বেতনের ক্ষেত্রেও গরমিল দেখা দেয়। ফলে বিদেশ নামক সোনার হরিণের বাস্তব চিত্র দেখে তারা হতাশ হন। দেশীয় দালাল ও নিয়োগকর্তারা পারস্পরিক যোগসাজসে গ্রুপ ভিসার নামে জাল ভিসা দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত শ্রমিক বিদেশে নিয়ে যায়। তাছাড়া কেউ কেউ সুনির্দিষ্ট কাজের ভিসায় না গিয়ে বেশি বেতনের আশায় তথাকথিত ফ্রি-ভিসায় যায়। মনির বলেন, এসব অনিয়মের ফলে কাজের খোঁজে বিদেশে গিয়েও তাদের বেকার থাকতে হয়। অনেক বেশি ভিসা খরচের বিনিময়ে বিদেশে গিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, খরচের টাকা তুলতে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ও অমানুষিক পরিশ্রম করে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায় অনেকে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। বিদেশি শ্রমিকদের অনেকেই প্রচলিত আইন-কানুন ভঙ্গের কারণে তাদের সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী জেল-জরিমানা, শিরোচ্ছেদ বা ফাঁসির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সৌদি এই প্রবাসীর মতে, অতীতে আমাদের শ্রমিকের একটি অংশ এসব অমার্জনীয় অপরাধের কারণে শাস্তি পেয়ে তাদের পেশাগত জীবন একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তেমনি বিদেশে আমাদের দেশের সম্মান নষ্ট করেছে। তিনি আরও জানান, ড্রাইভিং পেশায় জড়িতদের অবস্থাও খুব একটা । ফলে অনেকেই বেকার পড়তে পারে । এ অবস্থায় কোম্পানির সাথে কন্ট্রাক্ট ভিসা ছাড়া সেদেশে পাড়ি জমানো ঝুকিপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করেন আল-কাসিম প্রদেশ বিএনপির নেতা মনির। যারা কন্ট্রাক্ট জবে যাচ্ছে তারা ৮০০-১০০০ রিয়াল পর্যন্ত উপার্জন করছে। এর বাইরে কোন ওভারটাইম করার সুযোগও নেই সেদেশেঢ় কর্মীদের। মূলত কন্সট্রাকশনের কাজে যুক্ত হত ফ্রি ভিসায় যাওয়া প্রবাসীরা। বর্তমানে সৌদির কস্ট্রাকশন কাজের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কাজের অভাবে ভুগছে সেদেশের প্রবাসী শ্রমিকরা। তবে আশার কথা হল, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তদারকিতে সরকার কর্ম ভিসায় সৌদিতে শ্রমিক পাঠাবে বলে জানিয়েছে। কর্মী পাঠানোর খরচ নিয়ন্ত্রণ করে সবকিছু নিয়মমাফিক হলে ২০১৭ সালের মধ্যে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে সৌদি আরবে। এমএ/ ০৯:৫৫/ ০৭ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2uzOvm1
August 08, 2017 at 04:03AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন