সিলেটে অবাধে চলছে নাম্বার বিহীন অটোরিকশা-পুলিশের নামে কোটি টাকার টোকেন বানিজ্য

বাপ্পি চৌধুরী : সিলেট জুড়ে অবাধে চলছে নাম্বার বিহীন অটোরিকশা। সিলেটে অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ২০ সহস্রাধিক। অবৈধ বা নম্বরবিহীন অটোরিকশা শুধু চলাচলই নয়, নম্বরবিহীন এসব অটোরিকশা ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকান্ড হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গাড়ির নম্বর না থাকায় অপরাধ করে নিরাপদে সটকে পড়ে অপরাধীরা। যার ফলে সহজে চিহিৃত করাও সম্ভব হয়না এসব সুচতুর অপরাধীদের । এ নিয়ে কারো যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই।
এ ছাড়া এসব সিএনজি অটোরিকশায় চলছে ‘টোকেন বাণিজ্য’। প্রতিটি অটোরিকশা ৭০০টাকায় টোকেন নিয়ে নিরাপদে চলছে সিলেটের প্রতিটি রাস্তায় । প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে তল্লাশী চালিয়ে দুই একটা সিএনজি অটোরিকশা আটক করলেও টোকেন প্রাপ্তরা রয়েছেন এর বাইরে। ওই টোকেনের একটি বড় অংশের ভাগ পান ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে থানা পুলিশ ও হাইওয়েপুলিশ। জেলার সবক’টি উপজেলাসহ নগরীতে চলছে নম্বরবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) যথাসময়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অটোরিকশা চলাচলে প্রশাসন যেন কোনো বাধা না দেয় তার জন্য প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে অটোরিকশা মালিকদের কাছ থেকে বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। ‘পুলিশ টোকেন’র নামে প্রতি মাসে কোটি টাকার চাদাঁ আদায় করেন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ । পুলিশের টোকেন নিয়ে মফস্বলের গাড়ি চলে নগরীতে। অনুসন্ধানে জানা যায় সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ৭০৭ এর অর্ন্তভু’ক্ত ৯৬ টি শাখা রয়েছে। বর্তমানে সিলেট জেলায় ২১ হাজার বৈধ সিএনজি আছে। এর মধ্যে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ৭০৭ এর অর্ন্তভু’ক্ত আম্বরখানা শাখায় অন্তত ৫ হাজার নাম্বার বিহীন গাড়ি রয়েছে। এছাড়া শিবগঞ্জ(সাদিপুর)-জৈন্তা,গাছবাড়ি-কানাইঘাট,দক্ষিন সুরমা, শাহপরান, সুরমাগেইট শাখা গুলোতে চলছে রমরমা টোকেন বাণিজ্য। এই শাখার অধিনে শিবগঞ্জ(সাদিপুর) হতে জাফলং,-জৈন্তা,গাছবাড়ি-কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, বাগা-পরগনা এলাকায় ৫ সহস্রাধিক গাড়ি চলে। এসব শাখায় মাসিক ৭’শ টাকা হারে টোকেন পাওয়া যায়। কয়েকটি পুলিশ টোকেন সংগ্রহ করে দেখা যায় এলাকাভিত্তিক ইস্যুকৃত টোকেন গুলো কালো ও লাল রং এর আলাদা আলাদা এলাকার নাম ও সংগঠনের নাম। প্রতিমাসে টোকেন ইস্যু করা হয় বলে জানান ঐ রোডের অটোরিকশা চালকরা। এছাড়া এ ছাড়া নতুন গাড়ির জন্য এককালীন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ও চালকদের দিতে হয় ১ হাজার থেকে ১৫’ শত টাকা। শুধুমাত্র শিবগঞ্জ-সাদিপুর শাখা অফিসেই নয় অন্যান্য শাখাতেও চলছে টোকেন বানিজ্য।
এমনকি প্রতিমাসে টোকেন নিয়েও হয়রানির শিকার হন মফস্বলের চালকরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, শিবগঞ্জ-সাদিপুর সিএনজি পাম্পে অটোরিক্সা শ্রমিক সংগঠনের নামে এভাবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে একাধিক সংগঠনের নেতারা।
জানা যায়- এই টাকার একটি ভাগ সিলেট অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ৭০৭ অফিসে দিতে হয়। এসব পুলিশ টোকেনের টাকা শ্রমিক নেতা ও তাদের মনোনীত প্রতিনিধি( লাইনম্যান) সংগ্রহ করেন। সিলেট অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন ৭০৭ এর অর্ন্তভুক্ত শিবগঞ্জ-সাদিপুর শাখা সিএনজি অটোরিকশার ভর্তির নামে টাকা আত্বসাত করছে। এ শাখায় সিএনজি অটোরিক্সা ভর্তি করে ৫ হাজার সিএনজি থেকে ৩ হাজার টাকা করে এককালীন দেড়কোটি টাকা ও ৫ হাজার নম্বারবিহীন সিএনজি থেকে মাসিক ৭০০ টাকা করে মোট ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর পুরো জেলায় কোটি টাকার টোকেন বানিজ্য হয় বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
এই চক্রের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে নগরীতে নম্বরবিহীন সিএনজি চালাচ্ছে এমন বেশ কয়েকজন চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পদে পদে চাদাঁবাজীর শিকার হতে হয় সিএনজি অটোরিকশা চালকদের। এই প্রতিবেদক নগরীতে নম্বার বিহীন সিএনজি অটোটেক্সি চালানোর জন্য টোকেন সংগ্রহ করতে ওই সংগঠনের শ্রমিকনেতা আঙ্গুর মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে গাড়ি ভর্তি এককালীন তিন হাজার টাকা ও মাসিক ৭০০ টাকা লাগে বলে তিনি জানান। তবে ওই সিএনজির চালককে সংগঠনের সদস্য করতে হবে বলেও জানান ।এছাড়া নম্বার বিহীন সিএনজি অটোটেক্সি চালানোর জন্য টোকেন সংগ্রহ করতে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ৭০৭ এর অর্ন্তভু’ক্ত আম্বরখানা শাখার সাংগঠনিক আবুল হুসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে গাড়ি ভর্তি এককালীন তিন হাজার টাকা ও মাসিক ৭০০ টাকা লাগে বলে তিনি জানান।

এসব অবৈধ সিএনজি চলাচলে প্রশাসনের নামে নির্দিষ্ট হারে বখরা দিয়ে রাস্তায় চলাচলের বৈধতা কিংবা রুট পারমিট দিচ্ছেন শ্রমিক নেতারা। আর এই টাকা ভাগভাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বিআরটিএ কর্মকর্তা, ট্রাফিক পুলিশ,হাইওয়েপুলিশ ও থানা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা এবং শ্রমিক সংগঠন নামদারী নেতারা।
একাধিক সুত্র জানায়, প্রতিটি শাখায় নাম্বার বিহীন অটোরিকশা চালাতে সরাসরি সহযোগীতা করেন নগর ট্রাফিকের টিআইগণ। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট বখরার মাধ্যমে এসব নাম্বার বিহীন অটোরিকশা এইসব শাখায় চলছে বলে একাধিক চালক জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন ৭০৭ এর র্অন্তভুক্ত আম্বরখানা শাখার সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সাথে গত ১০ জুলাই মুঠোফোনে পুলিশ টোকেন ও প্র্রতি অটোরিকশার জন্য ৩ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে কী-না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তবে এরআগে এই প্রতিবেদক অটোরিকশার মালিক সেজে ফোন করলে তিনি জানিয়েছিলেন ৫ হাজার টাকা দিয়ে নতুন গাড়ি তালিকাভুক্ত করতে হবে। তাহলেই একটি টোকেন পাবেন। ফলে জামেলা থেকে আপনে বাচতে পারেবন। এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) তোফায়েল আহমদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ রকম হয়ে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2uwaQ47

August 06, 2017 at 05:51PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top