নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সবজি বিক্রেতা রুহেল খুনের ঘটনায় থানায় মামরা হলেও পুলিশ এ মামলার রহস্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। মামলা দায়েরের প্রায় ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে সনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয়নি। তবে ভাই হত্যার ন্যায় বিচার ও রহস্য উদঘাটনের জন্য সিলেট র্যাব-৯ এর সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন নিহতের বড় ভাই মামলার বাদী সোহেল মিয়া।
গত রোববার (৩০ জুলাই) তিনি এ অভিযোগ দাখিল করেন। এতে তিনি ৪জনের নাম উল্লেখ করেন। গত ৮ জুলাই সকালে দক্ষিণ সুরমার খালপাড় গ্রামের অনেকেই রুহেলকে হত্যা করার পর রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন। কিন্তু পুলিশের তদন্তে এসবের কিছুই বেরিয়ে আসছেনা।
স্থানীয়রা মনে করেন পুলিশ এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখলে আলোচিত এ মামলাটির মূল আসামিরা গ্রেফতার হবে। আর দরিদ্র একটি পরিবার ন্যায় বিচার পাবে। রুহেলকে খুনের পর ঘটনাটি ধামাপাচা দেয়ার জন্য খালপাড় গ্রামের আশিক মিয়া পুলিশসহ বিভিন্ন লোককে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখেন। যার কারণে অনেকেই মুখ খুলছেন না।
র্যাবের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়-সবজি বিক্রেতা রুহেল মিয়াকে হত্যার পূর্বে কে বা কারা তাকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে যায়। এ বিষয়টি নিয়ে গত ১০ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন মামলার বাদী সুহেল মিয়া। পরবর্তীতে তিনি খালপাড় ও সদর খলা গ্রামে গিয়ে ভাই হত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে স্থানীয়রা হত্যার সাথে নেপথ্যে থাকা একই পরিবারের ৪ জনের বর্ণনা দেন। এরা হলেন- দক্ষিণ সুরমার খালাপাড় গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াহিদের ছেলে আশিক মিয়া, তার ছেলে সাঈদ, সাইফ ও আরিফ।
এমনকি তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন- ১নং মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মো. মখন মিয়া ও ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার শরীফ আহমদের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের কাছ থেকে কোন সাহায্য পাননি মামলার বাদী সুহেল মিয়া। রুহেল খুনের নেপথ্যে নারীঘটিত কারণ রয়েছে।
জানা যায়- সুনামগঞ্জের পশ্চিম হাজীপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল সোবহানের ছেলে রুহেল মিয়া (৪০) দীর্ঘদিন থেকে সিলেট শহরের সবজি বিক্রি করে আসছেন। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নিহত রুহেল মিয়া ছিলেন ৩য়। সবজি বিক্রির সুবাধে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার খালপাড়া গ্রামের এক গৃহবধূর সাথে রুহেলের পরকীয়া প্রেম শুরু হয়। প্রায় সময়ই রুহেল ওই গৃহবধূর সাথে দেখা ও মোবাইল ফোনে কথাও বলতেন। এরই জের ধরে রুহেলকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, একটি পক্ষ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য সবজি বিক্রেতা রুহেলকে মাদক ব্যবসায়ী বানানোর জন্য ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সবজি বিক্রেতা রুহেলের লাশ সুরমা নদীর কাছে ফেলার সময় গ্রামের শিশুসহ অনেকেই দেখেছেন। তবে ওই পরিবারের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে নারাজ। এমনকি এ ঘটনা নিয়ে পুলিশও তেমন কোন কাজ করছে না বলে জানান স্থানীয়রা। পুলিশ এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করলে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- গত ৫ জুলাই সকালে রুহেলের রক্তাক্ত দেহে প্রাণের স্পন্দন ছিল। পরকীয়ার জের ধরে রুহেলকে খালপাড় গ্রামের ভেতর তাকে মেরে হাত-পা ভেঙে নদীর পাড়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফেলা হয় নাম প্রকাশ না-করার শর্তে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান- প্রথমে আমরা শুনেছি গ্রামের এক গৃহবুধূর সাথে রুহেলের পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী রুহেলকে বাড়িতে ডেকে মারপিট করে হত্যা করা হয়। এমনকি রুহেলকে কোমরে রশি বেঁধে ৪ জন লোক লাশটি নদীতে ফেলার সময় গ্রামের বেশ কয়েকজন দেখেছিলেন। এ বিষয়ে গ্রামের অনেকেই আমাদেরকে প্রথমে বলেছিলেন। পরে তাদের মুখ রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়ে যায়। নারীঘটিত ঘটনার জের ধরে রুহেলকে হত্যা করার বিষয়টি এখনও গ্রামের চাউর হয়ে আছে।
নিহতের ভাই সোহেল মিয়া জানান- আমার ভাই রুহেলকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের অধিকাংশ জায়গা আঘাতের চিহ্ন ছিল।
এ ঘটনায় দক্ষিণ সুরমা থানায় অজ্ঞাত আসামি করে গত ৮ জুলাই মামলা দায়ের করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ভাই হত্যার যথযাথ বিচারের দাবিতে সিলেট র্যাব-৯ এর কাছে গত ৩০ জুলাই অভিযোগ পত্র নং-(২০৯) দাখিল করেন। ভাই হত্যার নেপথ্যকারীদের নাম দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার সাথে আশিক মিয়াসহ তার ৩ ছেলে জড়িত।
উল্লেখ্য, গত ৫-৬ জুলাই রাত অনুমানিক ৯টা থেকে পরদিন সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যবর্তী সময়ে দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের খালপাড় গ্রামের সুরমা নদীর তীরে রুহেল মিয়ার লাশ পাওয়া যায়।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2hr3UnN
August 03, 2017 at 07:57PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.