ঢাকা, ২১ আগস্ট- প্রথমে স্কোয়াডে না রাখা, পরে সংবাদমাধ্যমের চাপে দলে অন্তর্ভুক্ত করাবাংলাদেশের ক্রিকেটে এ নাটক হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। বর্তমানে নির্বাচক কমিটিতে যে দুজন সাবেক খেলোয়াড় আছেন, মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশারদুজনের একই অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁদের খেলোয়াড়ি-জীবনে। তবে গত দুই বছরে এমন নাটক যেন একটু বেশিই হচ্ছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান সিরিজে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে হঠাৎই দলে নিলেন বাঁহাতি স্পিনার মোশাররফ হোসেনকে। আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ভালো করায় তাঁকে নেওয়া হলো অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও। কিন্তু সেই ম্যাচে ভালো না করায় চারদিকে রব উঠল মোশাররফকে বাদ দিয়ে নাসিরকে ফেরানোর। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই মোশাররফকে বাদ দিয়ে দলে নেওয়া হলে নাসিরকে। গত বিপিএলের শুরুতে ভালো খেলেছিলেন মেহেদী মারুফ ও শাহরিয়ার নাফীস। চট্টগ্রামে টুর্নামেন্টের মাঝে নাজমুল ইঙ্গিত দিলেন, ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে যেতে পারেন এই দুই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। শেষমেশ শাহরিয়ারকে বাদ দিয়ে নেওয়া হলো শুধু মারুফকে। তবে তাঁকে নেওয়া শুধু সিডনিতে অনুশীলন ক্যাম্পের জন্য। গত মার্চে মাহমুদউল্লাহকে শততম টেস্টে বাদ তো দেওয়াই হলো। তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল টিম ম্যানেজমেন্ট। এ নিয়ে চারদিকে কড়া প্রতিক্রিয়া হওয়ায় আবারও বিসিবি সভাপতির হস্তক্ষেপে তাঁকে ওয়ানডে দলে রাখা হলো। বিসিবি সভাপতি আরও একটি কাজ করলেন। টেস্ট সিরিজের পর দেশে ফিরে আসা মেহেদী হাসান মিরাজকে হঠাৎই শ্রীলঙ্কায় উড়িয়ে নিলেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য। সর্বশেষ এই নাটকে যোগ হয়েছেন মুমিনুল হক। প্রথমে বাদ পড়েছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চোখের সংক্রমণে আক্রান্ত মোসাদ্দেক হোসেনের জায়গায় দলে ফিরেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দল নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন নাটক আর কত দিন দেখতে হবে? মুমিনুলকে দল থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে হয়েছে বিস্তর বিতর্ক, সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে, মোসাদ্দেক চোখের সংক্রমণের কতটা উন্নতি হয়েছে, কত দিনের মধ্যে তিনি ফিরতে পারবেনএসব না জেনেই কি দল ঘোষণা করেছিলেন নির্বাচকেরা? আবার দল ঘোষণার পরপর যখন মুমিনুল প্রসঙ্গে সারা দেশে তোলপাড়, ঠিক তখনই তাঁরা জানতে পারলেন মোসাদ্দেক আগামী ১৫ দিন সূর্যের আলোয় যেতে পারবে না! বিসিবি অবশ্য এমন দাবিই করছে। দল ঘোষণার পরদিনই মোসাদ্দেকের ডাক্তারি রিপোর্ট তাঁরা হাতে পেয়েছেনকিন্তু ব্যাপারটি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না অনেকেই। সেক্ষেত্রে অনেকেরই বক্তব্য, মোসাদ্দেকের ডাক্তারি রিপোর্টের জন্য একটু অপেক্ষা করেই দলটা দেওয়া যেত। বাদ পড়া মুমিনুল ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যখন ফিরলেন. তখন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এমন ধারণাই প্রবল যে গণমাধ্যমে সমালোচনা আর দেশব্যাপী সমালোচনা বন্ধ করতেই বিসিবির এ উদ্যোগ। মোসাদ্দেকের চোখের ব্যাপারটি কেবলই অজুহাত। মুমিনুল-নাটকের সমাপ্তি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতেও যে এমন কিছু হবে না, সেটির নিশ্চয়তা কোথায়? বর্তমানে বিসিবির নির্বাচক কমিটি যে কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে, তাতে আশঙ্কাটা থেকেই যাচ্ছে। গত বছর জুনে বিসিবি বদল আনে দল নির্বাচন পদ্ধতিতে। নির্বাচক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। ব্যাপারটি নির্বাচকদের স্বাধীনতা তো কেড়ে নেবেই, দল গঠনে বাইরের হস্তক্ষেপও বাড়বে এতেএ আশঙ্কায় প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে তখন পদত্যাগ করেন ফারুক আহমেদ। মিনহাজুল হন নতুন প্রধান নির্বাচক। মিনহাজুল-হাবিবুলের সঙ্গে নতুন নির্বাচক কমিটিতে যোগ দেন সাবেক ক্রিকেটার সাজ্জাদ আহমেদ। ফারুকের আশঙ্কাটাই যে পরে সত্যি হয়েছে, সেটি তো দেখাই যাচ্ছে। এই নির্বাচক কমিটি গত এক বছরে যে কবার দল গঠন করেছে, প্রতিটিতেই প্রাধান্য পেয়েছে হাথুরুসিংহের পছন্দ। অর্থাৎ কোচ তাঁর গেম প্ল্যান অনুযায়ী যেভাবে দল চেয়েছেন, সেটিই তৈরি করেছেন নির্বাচকেরা। গত মাসের শেষ দিকে নির্বাচক কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয় সাজ্জাদকে। মিনহাজুল-হাবিবুলকে নিয়ে চলছে বর্তমান নির্বাচক কমিটি। কোচের চাহিদাপত্র মেনে দল গঠন হলেও শেষ পর্যন্ত নানামুখী চাপে হস্তক্ষেপে অনেক খেলোয়াড় বাদ পড়েছেন। আবার কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে দলে ঢুকেছেন। তাহলে বাংলাদেশ দল গঠনে সরাসরি ভূমিকা থাকছে কতজনের? নির্বাচক, প্রধান কোচ, বিসিবি সভাপতিদল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এত ব্যক্তির সম্পৃক্ততা বিশ্বের আর কোনো বোর্ডে আছে কি না সন্দেহ! এ যেন অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। দল নির্বাচনের কাজটা মূলত সারেন নির্বাচকেরাই। কোচের সম্পৃক্ততা সেখানে থাকতেই পারে। মতামত নেওয়া জরুরি দলের অধিনায়কেরও। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা নির্বাচকদের হাতেই থাকা উচিত। বিসিবি কি সেই স্বাধীনতা নির্বাচকদের দিচ্ছে? আপাতত মোসাদ্দেকের চোখের সংক্রমণ মুমিনুল-সমস্যার সমাধান করেছে। কিন্তু এসব ঘটনা ভবিষ্যতে কী ফল নিয়ে আসতে পারে, বিসিবিকে তা উপলব্ধি করতে হবে। আর তা উপলব্ধি করতে বিসিবিকে চোখ খুলে তাকাতে হবে। সেই তাকানোতে থাকতে হবে সুদূর দৃষ্টি আর অন্তর্দৃষ্টি। এমএ/ ১০:১৮/ ২১ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2x6B6Va
August 22, 2017 at 04:18AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন