ঢাকা, ১১ আগস্ট- ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক ধূমকেতু সালমান শাহ। যিনি হুট করে এসে দর্শকদের মন জয় করে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন মাত্র চার বছরের মাথায়। অকাল প্রয়াত এই নায়কের মৃত্যু রহস্যের জাল এখনো ভেদ করা যায়নি। সালমান কি আত্মহত্যা করেছিলেন না কি খুন হয়েছিলেন? এ প্রশ্নের উত্তর এখনও খুঁজে চলেছেন তার ভক্তরা। সালমান খুনের রহস্যে নতুন করে হাওয়া এনে দিয়েছেন রুবি নামে এক নারী। ভিডিও বার্তায় তিনি দাবি করেছেন, সালমান আত্মহত্যা করেননি, তাকে খুন করা হয়েছে। আর খুন করেছেন রুবির ভাই রুমি। পরে রুমিকেও খুন করে লাশ গায়েব করে ফেলা হয়। এরপর আবার পরের আর এক ভিডিও বার্তায় রুবি সবটা অস্বীকার করে নিজেকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করে। আবার আরেক ভিডিওবার্তায় বলেন, ইমনের (সালমান) বৌ কেন সামনে আসছে না? সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমার পেছনে পড়ে না থেকে সামিরাকে খুঁজে বের করুন। অবশেষে সামিরার সঙ্গে কথা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে তিনি জানান যে কেন আসছেন না মিডিয়ার সামনে। সামিরা বলেন, ইমনের মৃত্যু আমার জন্য সুখকর ছিল না। ইমন মারা যাওয়ার পরেই অনেকে একটা গোষ্ঠী দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমাকে ব্লেইম দেয়া শুরু করে। বলে ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল না। আমার নামে হত্যা মামলাও করা হয়। এরপর আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকবার সিআইডিতে নেয়া হয়েছে, আমি স্বীকারোক্তি দিয়েছি তাদের। ঘটনাটি আমার জন্য যন্ত্রণার। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতদিনে আত্মহত্যা করতো। আর আত্মহত্যার কথা ভাবিনি যে এটা না। কিন্তু ইমনের মতো ওরকম সাহস আমার ছিল না। থাকলে আজীবন আমার ইমনকে হত্যার দায় নিয়ে আমাকে বেঁচে থাকতে হতো না। আমি চাই এবার পিবিআই সব তদন্ত করে সত্যটা বের করুক। ইমন হত্যার দায় নিয়ে আমি আর বাঁচতে পারছি না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সামিরা বলেন, আমি জানি ইমন আমাকে কতটা ভালোবাসতো। আমাদের পরিচিত সবাই জানে। আমার আর ইমনের প্রেম ছিল একদম ছেলেমানুষি প্রেম। প্রচণ্ড ভালবাসতাম আমাদের আমরা। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস দেখুন ভালোবাসাকে বেঁচে থাকতে হয় ভালোবাসা হত্যার দায় নিয়ে। কেন আপনার নামে হত্যার অভিযোগ আনা হলো এরকম প্রশ্নের জবাবে সামিরা বলেন, কেন আমার ওপরে হত্যার অভিযোগ আনা হলো এটা ইমনের মা জানেন। আমি কিছু বলতে চাই না এই ব্যাপারটা নিয়ে। কারণ ইমন আমার ভালোবাসা ছিল। তাই ওনার মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি করতে চাই না। আপনার বাবা একটা ইন্টারভিউতে বলেছেন জনপ্রিয়তায় ভাটা ও মায়ের সাথে খারাপ সম্পর্ক থাকার কারণে সালমান আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। এই ব্যাপারটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? সামিরা বলেন, আসলে সময়টা খারাপ যাচ্ছিল তখন আমাদের। ইমনের জনপ্রিয়তা অনেকে সহ্য করতে পারেনি তখন। আর এটা স্বাভাবিক। ইমনকে পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি বয়কট করেছিল একটা সময়ে। তখন ওর মা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটা ইমন ভালোভাবে নেয়নি। মায়ের সাথে কোনো প্রচারণায় অংশ নেয়নি। এটা নিয়ে বেশ দ্বন্দ্বও ছিল ওদের মধ্যে। তবে এই দুটোর কারণেই যে ইমন আত্মহত্যা করেছে তা আমি বলবো না। আল্লাহ তায়ালা জানেন কেন আমার ইমন মরে গেছে। এবং আল্লাহ একদিন সব সত্য উদ্ঘাটন করে দেবেন। শোনা যায় একবার নীলা চৌধুরী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য টাকা চাইতে পাঠিয়েছিলেন সালমানের কাছে, সালমান দিতে রাজি হয়নি এর সত্যতা কতটুকু? সামিরা বলেন, হ্যাঁ বাবা (সালমানের) এসেছিলেন ৫০ হাজার টাকা নিতে। ইমন দিতে রাজি হয়নি। পড়ে আমি দিয়ে দেই ইমন ঘুমালে। এটা নিয়েও মায়ের আমার ওপর রাগ ছিল। কেন আমি টাকা দিলাম। মা ভাবতেন আমি ইমনকে প্ররোচিত করি। এটা বৌ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব। আমাদের বাঙালি সমাজে আবহমানকাল ধরে চলে আসছে এটা। সালমান শাহ কি আত্মহত্যাপ্রবণ ছিল? সামিরা বলেন, আমার বিয়ের আগে সে চার বার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে। দুইবার তাকে মেট্রোপলিটন হাসপাতাল থেকে ওয়াশ করিয়ে আনা হয়েছে। এটা আপনি সিআইডি রিপোর্টেও পাবেন। তিনি আরও বলেন, যখন ইমন মারা যায় তারপর পুলিশ এসে বাসা তন্নতন্ন করে সার্চ করেছে। কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। ৬ দিন পর সিআইডি এসে খাবার পেল, টাওয়াল পেল। যে ছয়দিন বাসার চাবি ইমনের বাবা-মায়ের কাছে ছিল। ওনারা প্রমাণ করাতে চেয়েছেন বাসায় অনেক মানুষ এসেছে। আমি তাদের রান্না করে খাইয়ে ইমনকে খুন করিয়েছি। ইমন বেনসন সিগারেট খেত, ওটা বদলে সেখানে রাখা হয়েছিল মালব্রো সিগারেট। সালমানের সুইসাইড নোট কেন আবুলের কাছে ছিল? সামিরা বলেন, আবুলের কাছে ছিল নাতো। আবুল প্যান্ট বদল করার সময় পকেট থেকে পেয়েছিল। সালমানের মামা অভিযোগ করেছেন একটা আড়াই বছরের বাচ্চা দত্তক নিয়েছিলেন সালমান। সেই বাচ্চাটাকে আপনারা লুকিয়ে রেখেছেন, কাজের লোকগুলোকে দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছেন। এই অভিযোগটা কীভাবে দেখবেন? সামিরা বলেন, দত্তক না। ওটা তো ডলির বাচ্চা। ওর নাম ওমর। সালমান একদিন বাসায় ঢুকে দেখে ডলির বাচ্চাটাকে নীলা চৌধুরী মারছে। তক্ষণি সে ডলি আর তার বাচ্চাকে নিয়ে আমাদের ইস্কাটনের বাসায় চলে আসে। আর ওরা কোথায় আছে এটা মামলার তদন্তকারীরা খুঁজে বের করবেন সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে। মীমাংসা চাই। স্বামী হত্যার দায় নিয়ে বেঁচে থাকাটা সত্যি খুব কষ্টের। এরপর সামিরা কয়েকটা প্রশ্ন তুলে ধরেন সবার উদ্দেশ্যে। বলেন, আমাকে দোষারোপ করার আগে দয়া করে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানবেন। প্রশ্নগুলো হলো- ১. সালমান শাহর ছোট ভাই কেন মিডিয়াতে আসেন না ভাই হত্যার বিচারের দাবিতে? ২. নীলা চৌধুরী বারবার কেন এফআইআরে নাম বদলায়? ৩. যদি সিরিঞ্জ এবং এনেস্থেসিয়া ব্যবহার করে ইমনকে মারা হয়, তাহলে সেগুলো ফিল ছিল কেন? ৪. ছয় দিন পর সিআইডি কেন ভেজা টাওয়াল পেল, একটা টাওয়াল কি ছয়দিন ধরে ভিজে থাকে? ৫. আর যে রেজভীকে দিয়ে আত্মহত্যাকে হত্যায় রূপান্তরিত করা হলো সেই রেজভি এখন কোথায়? এরপর সকল সালমান ভক্তদের কাছে হাতজোড় করে মিনতি করে সামিরা বলেন, আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে মিথ্যে অপবাদ দেবেন না। তদন্ত হোক। আমি অপরাধী প্রমানিত হই তারপর যা ইচ্ছে হয় তাই বইলেন। - সূত্র: নিউজবাংলাদেশ এমএ/ ১০:০০/ ১১ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2vMiLiz
August 12, 2017 at 04:03AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন