নিজস্ব প্রতিনিধি: দায়িত্ব ছাড়ার ১৫ দিন পরও সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে যাচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া। শুধু তাই নয়, দায়িত্ব ছাড়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এখনও তিনিই ভিসি। রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বললেন, ‘রিপ্লেস হয়নি আরকি, আর আছে থাকুক। ভিসি যাওয়ার আগে আমাদের জানিয়েছেন- উনি আবার ফিরে আসতে পারেন, সেজন্য আমরা না মুছে একটা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
এদিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অভিযোগ, দায়িত্ব ছাড়ার পরও কোনো ধরনের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করছেন না তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই অহরহ নিয়োগ, শিক্ষক লাঞ্ছনাসহ বেশকিছু নেতিবাচক ঘটনার কারণে বিতর্কিত এই ভিসি। ১৫ দিন হয়ে গেলেও সপরিবারে ‘ভিসি বাসভবনে’ অবস্থান করছেন তিনি।
এমনকি শিক্ষক লাঞ্ছনার জন্য তার পদত্যাগের দাবিতে দীর্ঘ পাঁচ মাস বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আন্দোলন হলেও শেষ মূহূর্তে এসে পুনরায় আরেক শিক্ষককে ইচ্ছাকৃত হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষক সমিতি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট মতে, এখনও ভিসি হিসেবে রয়েছেন তিনি।
এমনকি ‘ভিসির বার্তাতে’ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছাও জানাচ্ছেন তিনি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সামসুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুহিবুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শেষ কর্মদিবসে সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিয়া ছুটির অনুমোদন চাইলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ভিসি। এ সময় ওই শিক্ষককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমি চাইলে তোমাকে ছুটি দিতে পারি কিন্তু দেব না। এর ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষকের পিএইচডি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এর আগে ২০১৫ সালে স্পেস কমিটির এক শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জেরে পরবর্তীতে বিষয়টি ‘ভিসিবিরোধী’ আন্দোলনে চলে যায়। আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশই এ আন্দোলন করে, যা প্রায় পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে।
সমিতির অভিযোগ, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সদ্যবিদায়ী ভিসি আমিনুল হক ভূঁইয়া অনৈতিক এবং অবৈধভাবে সপরিবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলোতে অবস্থান করছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালা বিরোধী। এছাড়া তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করায় সেখান থেকেও সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন উল্টো প্রশ্ন করেন, উনি এখন যাবেন কোথায়। পরবর্তীতে তিনি বলেন, ভিসি আমাকে শনিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন উনি ২৫ তারিখের আগে চলে যাবেন।
দায়িত্ব ছাড়ার পরও বাসভবনে অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো নীতিমালা নেই। সরকারি নিয়ম আছে তো, দায়িত্ব ছাড়ার পর এক-দুই মাস থাকা যায়। তবে এর আগের দিন রেজিস্ট্রারই গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ভিসি সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদন নেননি। এরকম অবস্থানের নিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও নেই। অতীতেও কোনো ভিসি এরকম অবস্থান করেননি।
এছাড়া ওয়েবসাইট থেকেও মুছেনি ভিসির নাম। বরং ওয়েবসাইটে ভিজিটকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, এমনই বার্তা দেয়া আছে ওয়েবসাইটে। বিষয়টি হালনাগাদ করার দায়িত্বেও রয়েছেন রেজিস্ট্রার দফতর। তবে ব্যাপারটি ‘স্বাভাবিক’ বলে জানালেন রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব থেকে সদ্যবিদায়ী অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূঁইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত বাংলালিংক নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘আমি এখন আর কোনো দায়িত্বে নেই, তাই কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না।’
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক ভূঁইয়া ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই শাবির ৯ম উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। চলতি বছরের ২৭ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হয়।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2w6uFn1
August 14, 2017 at 08:45PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন