কলকাতা, ০৪ আগস্ট- ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস! পঞ্চায়েত ভোটের আগেই তৃণমূল কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হতে পারে নতুন দল ন্যাশনালিস্ট তৃণমূল কংগ্রেস। ক্রমশই প্রকট হচ্ছে সেই সম্ভাবনা। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুকুল রায়ের সম্পর্কের ফাটল যেভাবে বাড়তে শুরু করেছে, তাতে ভাঙন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে তৃণমূলে। ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সারদাকাণ্ডে মুকুল রায়ের নাম জড়ানোর পরই একবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে ব্রাত্য হয়ে নতুন দল গড়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ মুকুল রায়কে দলে ফিরিয়ে লাগাম টেনেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফের মুকুল রায় নয়া দল গঠনের পথেই পা বাড়াতে চলেছেন। মুকুল রায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে নতুন দল তৈরি হলে তৃণমূল ভেঙে বেশ কিছু বিধায়ক ও সাংসদ আসবেন, এটাই স্বাভাবিক। তা নিয়েই এখন জল্পনা চলছে দলের রাজনৈতিক মহলে। দলের অন্দরেও নানা কানাঘুষো শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, অন্তত ৬০ জন বিধায়ক ও ১০ জন সাংসদ লাইন দিয়ে রয়েছেন মুকুলের দলে আসার জন্য। তাঁরা কারা, তা নিয়ে জোর চর্চা শোনা যাচ্ছে কান পাতলেই। আগামী ৫ আগস্ট উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন। তারপরই নতুন দল গঠনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিতে পারেন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরই। তারপরই তিনি নতুন দল গঠনের বিষয়টি নিজ হাতে দেখবেন। এবং কারা তাঁর সঙ্গে রয়েছেন, তাঁর নতুন দলে কারা আসতে পারেন, তাও পরিষ্কার হতে শুরু করবে। কিন্তু কেন ফের মুকুল রায় নতুন দল গঠনের চিন্তাভাবনা শুরু করলেন? একটা সময়ে যে দলটা নিজে হাতে তৈরি করেছিলেন, দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হয়েছিলেন, সেই দলে তিনি এখন ব্রাত্য। অভিষেকের মতো আনকোরা এক নেতার কাছে তাকে পদ খোয়াতে হয়েছে। দলে গুরুত্ব হারিয়ে তিনি বর্তমানে একেবারেই কোণঠাসা। এরই মধ্যে দলের দু্টি পদক্ষেপে তিনি স্তম্ভিত। এক, একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে তিনি থেকেও নেই। তাঁর হাতে মাইক্রোফোন তুলে দেওয়া হয়নি একটিবারও। রাজ্যজুড়ে প্রচারে ঝড় তুললেও, তাঁকে একুশের মঞ্চে একটা কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। তারপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটিবারের জন্যও তাঁর নাম নেননি। রাজনৈতিক মহলে একটা কথা চালুই রয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির শিক্ষাগুরু হলেন মুকুল রায়। দলের সমস্ত বরিষ্ঠ নেতার নাম মুখে আনলেও, সেই মুকুল রায়ের নাম একটিবারও উচ্চারণ করেননি তিনি। এমনকী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর নাম নেন ১০-১২ জনের পরে। অথচ এই মুকুল রায়কেই একদিন চোখে হারাতেন তিনি। মুকুল ছাড়া এক পা চলতেন না। মুকুলের পরামর্শ মেনেই দল পরিচালনা করতেন। অর্থাৎ দলে গুরুত্বের বিচারে তিনিই ছিলেন মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরের স্থানে। আর দুই, ত্রিপুরা তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্ব থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টিও স্বাভাবিক ছিল না। সেটাও ছিল তাঁকে দলে কোণঠাসা করার। সারদাকাণ্ডে সিবিআই তলবের পর থেকেই তিনি গুরুত্ব হারাতে থাকেন। এমনকী দলে তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলে সাফ জানিয়েছিলেন দলনেত্রীও। তখনই নতুন দলের ভাবনা মাথায় এসেছিল মুকুলের। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তিনি নতুন দলের নাম চূড়ান্ত করেও ফেলেন। ন্যাশনালিস্ট তৃণমূল কংগ্রেস নামে নতুন পার্টি গড়ে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ জানানোর রাস্তা তৈরি রেখেছিলেন তখন থেকেই। এরপরই মুকুল রায়ের সঙ্গে দূরত্ব কমতে শুরু করে, তাঁকে দলে জায়গা দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে গুরুত্ব বাড়তে থাকে। দায়িত্ব পেতে শুরু করেন। দায়িত্ব ফের বাড়তে থাকে তাঁর। কিন্তু ভাইপো অভিষেকের উত্থানে শেষপর্যন্ত দলে সর্বপ্রকার গুরুত্ব এক লহমায় খর্ব করা হয় পুনরায়। দলে ক্রমেই কোণঠাসা হতে থাকেন মুকুল। আর শেষমেশ মুকুল রায় নয়া দল গঠনের পুরনো জুজুকেই সম্বল করে আসরে নেমে পড়েন কোমর বেঁধে। এখন দেখার সত্যিই নয়া দল গঠনের সাহসে দেখান কি না মুকুল রায়! আর তৃণমূল ভেঙে শাসক দলের শক্তিকে অর্ধেক করে দিতে পারেন কি না তিনি! এমএ/ ০৬:৫৫/ ০৪ আগস্ট



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2hrMGXd
August 04, 2017 at 12:56PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top