ঢাকা, ২৩ আগস্ট- দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ের কথা। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি। কলকাতার ৮ নম্বর নাকতলা রোডের বাড়িতে জন্ম নিল একটি শিশু। জীবনের শুরুটাই যাঁর কেটেছে আরেক মহাযুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করে করে। সেই লড়াই জিতেই রাজা হয়েছিলেন। রাজা হিসেবেই তাঁকে মনে রাখবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। নায়করাজ রাজ্জাক। সেই রাজার জীবন গুছিয়ে দিয়েছিলেন এক রানি। রাজ্জাকের জীবন শুরুর দিকেই পড়ে গিয়েছিল কঠিন এক পরীক্ষায়। একদিন হঠাৎ মারা গেলেন বাবা আকবর হোসেন। বাবার আকস্মিক মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতে আট মাস পর মাকেও হারান। বড় দুই ভাই ও এক বোনের আদরে বেড়ে ওঠা রাজ্জাক কৈশোরে বাউণ্ডুলে হতে থাকেন। মা-বাবার শাসন না থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা হয়, রাজ্জাকের ক্ষেত্রেও তা-ই হলো। লেখাপড়ায় মনোযোগ কম। ছন্নছাড়া রাজ্জাকের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। ঘরে মন টেকে না। এক সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, কৈশোরে এবং তারুণ্যে তিনবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে তাঁর জীবনে। প্রথমবার বাড়ি ছেড়েছিলেন ১৪ বছর বয়সে। পরে ফিরে আসেন কলকাতার বাসায়। আবার ১৭ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। ফিরে আসেন। শেষবার ১৯ বছর বয়সেও বাড়ি ছেড়ে পালান রাজ্জাক। কলকাতা থেকে দূরে রাঁচির দুর্গম জঙ্গলে কাটান ছয় মাস। অস্থির মন। পড়ায় মন টেকে না। তাই রাজ্জাককে নিয়ে বড় দুই ভাই নিজেদের ব্যবসায় বসালেন। কিছুদিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু সেখানেও মন টেকে না। একসময় কলকাতার বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উষাতে কর্মচারী হিসেবে চাকরিও নেন। সেখানেও বেশি দিন থাকা হয়নি। এভাবে বাউণ্ডুলে রাজ্জাকের দিন কাটে অস্থিরতায়। দেখতে বেশ ছিলেন, সুদর্শন। চালচলনেও বেশ। টুকটাক নাটক করেন, মডেলিং করেছেন। মেয়েরা ভাব জমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রাজ্জাক নিজে মন দিয়ে বসেছিলেন খায়রুন্নেসাকে। লক্ষ্মী নামেই আজীবন যাঁকে ডেকেছেন। প্রেম হয়, প্রেম থেকে বিয়ে। ১৯ বছর বয়সে লক্ষ্মী রাজ্জাকের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এলেন। বদলে যান রাজ্জাক, বদলে যায় রাজ্জাকের জীবন। এক সাক্ষাৎকারে রাজ্জাক বলেছিলেন, লক্ষ্মী আমার অগোছালো জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়, আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আমি স্থির হতে বাধ্য হই। সুখে দুঃখে সব সময় পাশাপাশি ছিলেন রাজ্জাক-লক্ষ্মী। ঢাকাই চলচ্চিত্র ভুবনে রীতিমতো ঈর্ষার বিষয় ছিলেন এই দম্পতি। কত তারকার ঘর ভাঙল, রাজ্জাক-লক্ষ্মী একসঙ্গে কাটিয়ে দিলেন বছরের পর বছর। দীর্ঘ ৫৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে সাময়িক বিচ্ছেদ এঁকে দিল একটি মৃত্যু। সোমবার সন্ধ্যায় যখন রাজ্জাক জীবননদীর ওপারে, লক্ষ্মীকে দেখে মনে হলো শোকে পাথর। হাসপাতালের করিডরে নির্বাক-নিশ্চল হয়ে আছেন। অঝোরে ঝরছে চোখের জল। রাজ্জাকের সংসারে লক্ষ্মী হয়ে এসেছিলেন। রাজ্জাক নিজে তাঁর বাড়ি, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, এমনকি নিজের প্রযোজনা সংস্থার নামও রেখেছিলেন লক্ষ্মীর নামে। এমএ/ ১১:১৯/ ২৩ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2xdbZQP
August 24, 2017 at 05:19AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন