নিজস্ব প্রতিবেদক ● ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে এক মাসের ছুটি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
সিদ্ধান্ত জানার পর ছাত্রলীগ প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের তালা খুলে দিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ প্রথম আলোকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকেরা বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ ছাড়া আগামী রোববার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী কিছু বিষয় বোঝার জন্য মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার কাছে যান। তিনি বিভাগে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো বোঝাচ্ছিলেন। ওই সময় ‘রাজনীতিমুক্ত’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শ্রেণিকক্ষে গিয়ে বাধা দেয় ও পুরো বিষয়টি ভিডিও করে। বিকেল দুইটার দিকে শোক দিবসের দিনে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ এনে ওই শিক্ষককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ। ওই সময়সীমা পার হওয়ার আগেই গতকাল বুধবার সকাল নয়টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল আড়াইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি একাডেমিক ভবন ও একটি প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয় ছাত্রলীগ। ওই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মাহবুবুলকে এক মাসের ছুটি দেওয়া হয়। আগামী ২০ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই ছুটি কার্যকর হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহেরকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সঙ্গে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী। কমিটিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি দোষী হলে আমার ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য নেওয়া উচিত ছিল আগে। তদন্ত না করে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া অন্যায্য ও অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করায় প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তি আমার ওপর ক্ষুব্ধ। আক্রোশ থেকেই ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য আমরা অনুরোধ করছি। অন্যথায় আগামী রোববার সকাল ১০টায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে। ওই সভা থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে সেটি পরবর্তীতে জানানো হবে।’ তদন্ত কমিটিতে আপনাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে না জানিয়েই তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে। তদন্ত করার আগে ওই শিক্ষককে ছুটি দেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। শিক্ষক সমিতি ওই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, শুধুমাত্র ছাত্রলীগের একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু পরিষদ এ ধরনের অপতৎপরতা ও অপরাজনীতির তীব্র নিন্দা জানায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘কারও প্রতি আক্রোশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত তিন দিন ধরে এ নিয়ে টেনশনে ছিলাম। শিক্ষক সমিতি কর্মসূচি দিলে এটা তাদের ব্যাপার।’
The post শিক্ষককে ছুটির প্রতিবাদে আন্দোলনে কুবি শিক্ষকরা appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2i9OtRd
August 17, 2017 at 07:33PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন