লাকসামে চালের দাম বাড়াতে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট

মশিউর রহমান সেলিম ● কুমিল্লার প্রসিদ্ধ বানিজ্যিক নগরীখ্যাত লাকসামের মোকাম থেকে বর্তমানে ধান যেন উধাও। ইরি/বরো মৌসুম থেকেই এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজার থেকে ধান কিনে গুদামে মজুত করে রেখেছে স্থানীয় মিলার ও ধান-চাল সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। ফলে স্থানীয় বাজারে ধানের সংকট তৈরী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, ক্ষরা, পরিবহন সংকট ও চলমান মিয়ানমারের রহিঙ্গা সমস্যাকে পূজি করে চালের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে নানাহ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অবস্থা দৃষ্টে বুঝা যাচ্ছে দরিদ্রদের বোবা কান্না দেখার মতো কেউ নেই।

ওইসব ব্যবসায়ীরা নানাহ সুযোগে মজুতকৃত ধানকে চাল বানিয়ে বাজারে ছাড়ছেন। এর প্রভাবে এখন অস্থির হয়ে পড়েছে চালের বাজার। গত ২ সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তা প্রতি প্রত্যেক চালের দাম বেড়েছে গড়ে ৩/৪’শ টাকা। এ মোকামের আওতায় উপজেলা খাদ্য বিভাগের সূত্র মতে ২৮টি বড় ধরনের অটো চাউলের মিল ও বেসরকারি ভাবে সরকারী নিবন্ধন বিহীন  অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র চাতাল কল রয়েছে। সরকারী ভাবে ধান-চাল ক্রয়ে যেন ভানুমতির খেল এবং চাউলের মিল ও চাতালগুলোর বৈধতা নিয়েও এলাকার জনমনে কানাঘুষা হচ্ছে। চালের বাজার দর ঠিক রাখতে মিলার ও আড়তদারদের সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই। তবে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারীর বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখছেন কেউ কেউ। এ মোকামে আকস্মিক চাউলের বাজার বৃদ্ধিতে ওইসব ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন অনেকেই। বর্তমান বাজারে স্বর্ণাপাড়ি প্রতি বস্তা চাল ২৪০০শ, আটাইশ জাতের চাল লোকাল ২৪৫০ ও বাহিরের থেকে আমদানী করা ২৬৫০, এলসি কৃত নুরজাহান ব্যান্ডের চাল ২৪০০শ, মিনিকেট আমদানীকৃত চাল ৩০০০ লোকাল ২৯০০শ ও স্থানীয় মোটা ২০০০/২১০০ এছাড়া প্রিমিয়ার, এফএম, সংঙ্খ, তাজমহল, জোহুরা, ময়ুর, পিকে, রাজহাঁস ও কবুতরসহ প্রায় শতাধিক ব্যান্ডের স্থানীয় ও আমদানীকৃত চাউল বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ঐ সব ব্যবসায়ীদের খুচরা ও পাইকারী চাল বিক্রিতে ২/৩ রকমের ক্যাশ মেমো থাকে এবং বাৎসরিক সরকারী আয়কর ও ভ্যাট ফাকির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তাদের পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে কারো কারো ৬/৭টি চাউল মজুদের গুদাম রয়েছে। গোপনে তদন্ত চালালে বুঝা যাবে কত লাখ বস্তা চাল এই এলাকায় রয়েছে।

এলাকায় হঠাৎ করে চাউলের বাজার উর্দ্ধগতি নিয়ে কোন চাল-ধান ব্যবসায়ী মুখ খুলছেনা। আসন্ন আমন ধান মৌসুমে নতুন ধান চাল না আসা পর্যন্ত চালের বাজার আরও বাড়বে বলে শংকায় স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় দৌলতগঞ্জ বাজারের চালের আড়তদার ব্যবসায়ীরা বলেন প্রতি বছর এ সময়ে চালের বাজার কিছুটা বাড়তি থাকে তবে নতুন ধান বাজারে আসলে চালের দামও ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে আসবে। এ দিকে সরকারী ভাবে খাদ্যবান্ধব নানাহ কর্মসূচী ভিজিডি সহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে চাল বিতরণও বর্তমান চালের বাজারের উর্দ্ব গতি ঠেকাতে পারছে না। দেশের উত্তর ও পূবাঞ্চলের দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, সিলেট, ময়মনসিংহ ও নেত্রকনাসহ বহু মোকাম থেকে নানাহ ধরণের চাল আমদানী করা হচেছ। এছাড়া এ বাজারে চাউলের বাজারদর নিয়ন্ত্রনে ৮/১০টি আড়ৎদার কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বর্তমানে চালের বাজারে চাল কিনতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের যেন করুন অবস্থা। এ মোকামে প্রতিটি চালের আড়ত কিংবা মিলারদের গুদামে হাজার হাজার বস্তা চাল মজুত রয়েছে এবং দেশে উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা চাল আড়তদারদের ঘরে ঢুকছে। তারপরও চালের বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় সাধারন মানুষ স্থাণীয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় নানাহ কথাবার্তা উঠেছে। তবে দাম বাড়ার পিছনে যুক্তিকতা তুলে ধরে একাধিক মিলার বলছেন ভিন্ন কথা। চলমান সময়ে ধান থেকে চাল তৈরী করতে প্রতি বস্তায় ১/২’শ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। তার উপর ধানের সংকটতো আছেই। পরিবহন ব্যয়বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিক খরচসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।

এব্যাপারে স্থানীয় বাজারের চাউলের আড়ৎদার নিমাই সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি এব্যাপারে কোন ব্যক্তিগত জবাব দিতে রাজি নহে তবে তাদের চাউল ব্যবসায়ী সমিতি রয়েছে। যাহা কিছু বলার সমিতির মাধ্যমে বক্তব্য নিতে হবে।

এব্যাপারে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবারক উল্যাহ কায়েস জানায়, এ অঞ্চলে চাউলের বড় ধরণের কোন আড়ৎদার কিংবা সেন্টিকেট বলতে কোন কিছু জানা নেই। এখানে চাউল ব্যবসায়ীরা সাধারণত স্থানীয় রাইস মিল গুলো থেকে এবং বাহিরের কিছু কিছু মোকাম থেকে নানাহ ধরণের চাউল সরবরাহ করে বিক্রি করছেন।

এব্যাপারে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে গত রবিবার জেলা ও উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় কঠোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে বাজার মনিটরিং এ নামবো যাতে কোন ব্যবসায়ী চাউল মজুদ রাখতে না পারে। এবং স্থানীয় ভাবে অভিযোগ ফেলে তাৎক্ষনিক ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

The post লাকসামে চালের দাম বাড়াতে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট appeared first on Comillar Barta.



from Comillar Barta http://ift.tt/2hd5wBN

September 19, 2017 at 02:35PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top