নিজস্ব প্রতিবেদক: জাফলংয়ের ধর্ষণস্পট ‘জলসাঘর’। ইউপি সদস্য আতাই মেম্বারের গড়ে তোলা এ জলসাঘর নিয়ে নানা আলোচনা। রাত-বিরাতে সহযোগীদের নিয়ে আমোদ-ফুর্তিতে মেতে উঠেন মেম্বার। এই জলসাঘরে ত্রাণ নিতে আসা এক মহিলাকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে আতাই মেম্বার। পরে ওই মহিলা থানায় মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আতাই মেম্বারকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার (১২ই সেপ্টেম্বর) আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তারের পর আতাই মেম্বার ঘটনাটিকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে জানিয়েছেন। আতাই মেম্বারের পুরো নাম আতাউর রহমান ওরফে আতাই মেম্বার। জাফলংয়ের প্রভাবশালী এক ইউপি সদস্য। পুরো জাফলংয়ের পর্যটন স্পটসহ পাথর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।
তিনি পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বারের পাশাপাশি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও। বাড়ি জাফলং কোয়ারির পার্শ্ববর্তী নয়াবস্তি গ্রামে।
গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ জানায়, ঘটনা গত শনিবারের। স্থানীয় কালিনগর গ্রামের এক মহিলা ত্রাণ নিতে ইউনিয়ন অফিসে মেম্বার আতাইয়ের কাছে যান। ওই মহিলার বয়স প্রায় ২৫ বছর। ওই মহিলা আতাই মেম্বারের কাছে ত্রাণ চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন ত্রাণ নেই। কিছু সমস্যা হয়েছে। বিকালে তার জলসাঘরে দেখা করার কথা বলেন।’ মেম্বারের কথামতো বিকালে ওই মহিলা ত্রাণের জন্য মেম্বারের জলসাঘরে যান। এ সময় মেম্বার মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় মহিলার সঙ্গে মেম্বারের ধস্তাধস্তি হয় বলেও জানায় পুলিশ। ধর্ষণের ঘটনার পর যাতে ওই মহিলা প্রতিবাদ করতে না পারে সে কারণে সহযোগীদের নিয়ে ধর্ষণের ভিডিও রেকর্ড করে ফেলে বলেও পুলিশকে জানায় নির্যাতিতা মহিলা।
আত্মীয়রা ঘটনার দিনই ওই মহিলাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার’- ওসিসিতে ভর্তি করেন। ওখানে দু’দিন চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ওই মহিলা সিলেট পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আতাউর রহমান আতাই মেম্বারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা রেকর্ড করে। সন্ধ্যায় পুলিশ গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর থেকে আতাই মেম্বারকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে আতাই মেম্বার গ্রেপ্তারের পর জাফলংয়ে তোলপাড় শুরু হয়। আতাই মেম্বারের সহযোগীরাও ঘটনার পর গা-ঢাকা দিয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর গোয়াইনঘাট থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ধর্ষণের শিকার ওই মহিলা ওসিসিতে চিকিৎসা নিয়ে বিচারপ্রার্থী হয়ে ডিআইজির কাছে যান। পরে ডিআইজির নির্দেশে পুলিশ মামলা রেকর্ড করে আতাই মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেছে।
তিনি বলেন- গ্রেপ্তারের পর আতাই মেম্বার পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। প্রয়োজন হলে পুলিশ তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানান তিনি। তবে- আতাই মেম্বার গ্রেপ্তারের পর স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ঘটনাটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি জাফলংয়ে বোমা মেশিন বন্ধের জন্য তিনি প্রশাসনের হয়ে কাজ করছিলেন। এজন্য তার উপর জাফলংয়ের পাথর সিন্ডিকেটের একটি চক্রের ক্ষোভ ছিল। তারাই নারী নির্যাতনের এ ঘটনা সাজিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।’
স্থানীয়রা জানান- জাফলং মামার দোকানের পাশেই বালুর মাঠ। এ মাঠের পাশে ছিল স্থানীয় আবদুল আজিজ নামের এক ব্যক্তির জমি। প্রায় দুই বছর আগে আতাই মেম্বার প্রভাব খাটিয়ে ওই ভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেন। ওই স্থাপনাটি স্থানীয়ভাবে ‘জলসাঘর’ নামে পরিচিত। এই জলসাঘর নিয়ে জাফলংয়ের মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। জলসাঘরে মেম্বার তার সহযোগীদের নিয়ে অনৈতিক কাজের আস্তানা গড়ে তোলেন। প্রতি রাতেই জলসাঘরে বসতো মদের আড্ডা। চলতো নারীদের নিয়ে আমোদফুর্তি।
কাজের সন্ধানে জাফলংয়ে আসা মহিলারা টাকার বিনিময়ে এসে ওই জলসাঘরে আমোদফুর্তির খোরাক জোগাতেন। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে মেম্বারের বিরুদ্ধে কেউ কখনো মুখ খুলেননি। পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- জাফলং কোয়ারিতে বোমা মেশিন থেকে বড় অংকের চাঁদা আদায় করতো মেম্বারের লোকজন। যারা চাঁদা দিতো না তাদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হতো। এ
কারণে যারা জাফলং পাথর কোয়ারিতে অবৈধভাবে বোমা মেশিন, বিলাই মেশিন পরিচালিত করতো তারা প্রতি রাতেই এসে মেম্বারের কাছে ধর্ণা দিতো। মাঝে মধ্যে ওইসব ব্যবসায়ী মদ ও নারী জোগান দিতো। জাফলং থেকে থানা সদরের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। নদীতে সেতু না থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। এ কারণে মেম্বারের উপর নির্ভর করতো জাফলংয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
মেম্বারের তথ্যই ছিল পুলিশের ভরসা। এ কারণে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও মেম্বারের ভালো সম্পর্ক ছিল। আর আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ার কারণে পুলিশও মেম্বারকে আলাদা সমীহ করতো।
পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লেবু জানিয়েছেন, আতাই মেম্বারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য হলে তারা শাস্তি চান। আর যদি মেম্বার নির্দোষ হন তাহলে যারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2x1PPCE
September 14, 2017 at 12:04AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন