সিলেটে বেপরোয়া ছাত্রলীগ,বাড়ছে উদ্বেগ!

সুুরমা টাইমস ডেস্কঃ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সিলেটে ছাত্রলীগের পাঁচটি পক্ষ (গ্রুপ) ছিল। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নামে সৃষ্টি হয়েছে নতুন পক্ষ ‘সুরমা গ্রুপ’। এভাবে ‘বড় ভাই রাজনীতির’ বলয়ে এ জেলায় ছাত্রলীগ কার্যত ছয় টুকরা।

গত বুধবার বিকেলে ছোট ভাই সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ খালেদকে জিম্মি করে তাঁর মাধ্যমে জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুমকে (২৪) ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সিলেটের এমসি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। মাসুম ‘সুরমা গ্রুপের’ কর্মী ছিলেন। ওই রাতে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব কান্তি দাসের নেতৃত্বে বিক্ষোভ থেকে মাসুম হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা টিটু চৌধুরীকে অভিযুক্ত করা হয়। টিটু ছাত্রলীগের জেলা বা নগর কমিটির কোনো পদে না থাকলেও এমসি কলেজে তাঁর নেতৃত্বাধীন একটি পক্ষ আছে। এটির নাম টিলাগড় গ্রুপ। গত ১৩ জুলাই এই কলেজের ছাত্রাবাস ভাঙচুর হয়েছিল টিটু চৌধুরীর নেতৃত্বে। ছাত্রাবাস ভাঙচুরের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামিও তিনি। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ই সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে নিহত মাসুমের মা আছিয়া বেগম বাদী হয়ে শাহপরান থানায় একটি মামলা (৬- তাং-১৪/৯/১৭) দায়ের করেন।
আসামীরা হলেন- এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা টিটু চৌধুরী (৩২), রাজন দেব (২৮), মুকিত আহমদ (২৬), আছাদ আহমদ (২৩), টিটু (২৪), মো. জাকির হোসেন (২০), অয়ন তালুকদার শিশির (২০), গৌতম (২২), শাকিল হোসেন শাহীন (২১) ও জুয়েল আহমদ (১৯)।

মাসুমের কয়েকজন সহপাঠী বলেন, এসএসসি পাসের পর মাসুম ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সুরমা গ্রুপের পক্ষে সক্রিয় থেকে মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে সুরমা গ্রুপের হাতে ছাত্রলীগের এক কর্মী আহত হওয়ার জের ধরে বুধবার মাসুমকে হত্যা করা হয়।

গত ১৭ই জুলাই বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুপক্ষে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন খালেদ আহমদ ওরফে লিটু (২৫) নামের একজন বহিরাগত। এ ঘটনার পর অনুসন্ধানে বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগে প্রায় ১৩ বছর ধরে কোনো কমিটি না থাকায় ‘বড় ভাই’ রাজনীতি উত্থানের বিষয়টি প্রকাশ পায়।

ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, জেলা ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এক বছরের কমিটি দিয়ে তিন বছর পার হচ্ছে। বড় ভাইদের প্রভাবে আগে ছাত্রলীগের তিনটি পক্ষ ছিল। এগুলো হলো টিলাগড়, তালতলা, দর্শনদেউড়ি। ২০১৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় আরও দুটি পক্ষ সোনার বাংলা ও টিলাগড় (একাংশ)। পাঁচটি এলাকার নামে পক্ষগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ওই সব এলাকার নেতারা। তাঁরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে বড় ভাই ও দাদা নামে পরিচিত।

সুরমা গ্রুপের নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কান্তি দাস জেলা ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। মাসুম হত্যাকাণ্ডের পর বুধবার রাতে সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থল চৌহাট্টা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর মধ্য দিয়ে এই গ্রুপ প্রথম প্রকাশ্য তৎপরতায় এসেছে।

বিভিন্ন এলাকার নামে এ রকম পক্ষ থাকার কথা স্বীকার করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার সামাদ। তিনি বলেন, ‘এ রকম পক্ষ থাকা দোষের কিছু না; বরং ছাত্রলীগ যে এলাকাভিত্তিক শক্তিশালী, তার জানান দেওয়া হয় এসব পক্ষের মাধ্যমে। তবে এসব পক্ষের নামে কোন্দল; এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করার তৎপরতা উদ্বেগের।’

জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে বলয় সৃষ্টির তৎপরতা চলছে। এ তৎপরতা শুধু ছাত্রলীগের জন্য নয়, আওয়ামী লীগের জন্যও অশনিসংকেত।’

এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘আমরা আসলে কী বলব, ছাত্রলীগকে নিয়ে কী করব, ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা তো ছাত্রলীগ করেছি। মুরব্বি অর্থাৎ আওয়ামীলীগ নেতারা যাতে বিব্রত না হন, এমন কোনো কাজ করিনি। এখন এরা এক কথায় অভিভাবকহীন। কোনো কন্ট্রোলিং নেই। কোনো কিছু বললে ভাই-ভাই বলে ওপরে যোগাযোগ করে। তাই আমরা কিছু বলতে চাই না। এরপরও দায় যেহেতু আওয়ামীলীগের ওপর পড়ে, তাই বিষয়গুলো কেন্দ্রকে জানানো হবে।’



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2jvqrRc

September 15, 2017 at 11:35PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top