সুরমা টাইমস ডেস্ক: টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার জাকিয়া সুলতানা রূপা’র ছোট বোন মাশরুফা আক্তার পপিকে সরকারি ওষুধ কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগসে চাকুরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি। শুক্রবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে রূপার গ্রামের বাড়ি গিয়ে তার মা, ভাই ও বোনসহ পরিবারের সদস্যদের শান্ত্বনা দেওয়ার সময় এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এছাড়াও রূপা হত্যার বিচার যাতে দ্রুত সময়ে হয় এজন্য তাদের বাড়ি থেকেই আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে ফোন করে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জবাবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে মামলাটির সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন আইনমন্ত্রী।
এসময় নিহত রূপার ছোট বোনকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে বায়োডাটা নেন মোহাম্মদ নাসিম। পরিবারটিকে নগদ ১ লাখ টাকা সহায়তা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একই সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী ম,ম আমজাদ হোসেন মিলন নগদ ৫০ হাজার, জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত নগদ ২৫ হাজার এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হক নগদ ১০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন। এর আগে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ নিহতের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী রূপা’র স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাড়িতে রওনা হলেও বন্যার কারণে বাড়িটিতে পৌঁছতে না পেরে পাশের একটি বাসায় তাদের ডেকে নিয়ে কথা বলেন। এরপর পাশের একটি ফাঁকা স্থানে পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত স্মরণসভায় অংশ নেন।
জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী রূপাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যারা জড়িত পুলিশ ইতোমধ্যেই তাদের গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে এবং তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। এ অবস্থায় আসামিরা যাতে দ্রুত শাস্তি পায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভামঞ্চ থেকে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আইনমন্ত্রীও সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন।
মন্ত্রী আরও বলেন- এর আগে শাহজাদপুরে সাংবাদিক খুনের ঘটনায় তার স্ত্রীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে,রূপা’র বোনকেও চাকরি দেওয়া হবে। আপনারা মনে রাখবেন, বর্তমান সরকার সকল বিপদ-আপদে মানুষের পাশে আছে এবং আগামীতেও থাকবে।
এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী ম.ম আমজাদ হোসেন মিলন, পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হান্নান, তাড়াশ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল হক, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা সবাই বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে করে গত ২৫ আগস্ট রাতে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে বাসের চালক, সুপারভাইজার ও ৩ হেলপার মিলে রূপাকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করে টাঙ্গাইলের রাস্তার পাশে লাশ ফেলে যায়। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকায় ওই তরুণীর লাশ পাওয়ার পর হত্যার আলামত থাকায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে মধুপুর থানা পুলিশ। কিন্তু পরিচয় জানতে না পারায় ময়নাতদন্ত শেষে পরের দিন টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়।গণমাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে মধুপুর থানায় গিয়ে ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করে তার পরিবার। পরে রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান ছোঁয়া পরিবহনের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এরপর গ্রেফতার হওয়া ছোঁয়া পরিবহনের চালক ময়মনসিংহের হাবিবুর রহমান, সুপারভাইজার সফর আলী এবং চালকের তিন সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে তারা টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে রয়েছে। এ অবস্থায় প্রশাসনের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেলে রুপার লাশ কবর থেকে উঠিয়ে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলে রাতে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2eLoM5n
September 01, 2017 at 09:23PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন