সুুরমা টাইমস ডেস্ক:: মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতিসহ মণিপুরীদের প্রতিনিধিত্বশীল যুব ও ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও মণিপুরীদের জাতি-ধর্ম কটাক্ষ করে সম্প্রতি কতিপয় নেতার কটুক্তি, অশালীন, সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সুপ্রিম কোর্ট, সরকার এবং আইন বিশেষজ্ঞদের আলোচনার বিষয়। কিন্তু এ প্রসঙ্গে আলোচনা-সমালোচনা করতে গিয়ে কতিপয় নেতা যে আপত্তিকর কটুক্তি, অশালীন, সাম্প্রদায়িক ও অরাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি ও একটি ক্ষুদ্র জনজাতিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য এবং হেয় প্রতিপন্ন করতে তাদের ঘৃণ্য, জঘন্য অপচেষ্টা উল্টো তাদেরই মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। উন্নত সংস্কৃতির একটি জাতিসত্ত্বাকে নিয়ে তাদের এমন কটুক্তি তাদের মানসিক দৈন্যতাকেই প্রকাশ করেছে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বর্তমানে তিনি দেশের সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। তিনি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী জাতিভূক্ত। তাঁকে অবমাননাকর সম্বোধন, তার জাতিসত্ত্বা ও ধর্ম নিয়ে সাম্প্রদায়িক ভাষায় কটুক্তি নিন্দনীয়। এমনকি অসাম্প্রদায়িকতার আলোকে রচিত মহান সংবিধানও তা সমর্থন করে না। অথচ অনেকটা বিস্ময়ের ব্যাপার কটুক্তিকারীদের কেউ কেউ খোদ আইন সভার(মহান জাতীয় সংসদ)সদস্য! আমাদের জানামতে, কে কোন ধর্মের তার চেয়ে ন্যায়-নিষ্ঠা, ন্যায় বিচার, সুশাসন ও সভ্য আচরণই মহান সংবিধানের বিবেচ্য বিষয়। তাছাড়া হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন বাংলাদেশ চাননি। ফলে যারা এমন আচরণ করেছেন তারা মহান সংবিধানের অবমাননা, জাতির জনকের চিন্তা-চেতনার প্রতি অবজ্ঞা তথা সার্বজনীন মানবাধিকার লংঘন করেছেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও দায়িদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক, সংবিধান ও আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব বহির্ভুত বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে প্রধান বিচারপতি ও মণিপুরীদের কটাক্ষ করে তাদের চরম হীনমন্যতা, চিন্তার দৈন্যতা ও এক ধরণের মানসিক বিকারগ্রস্ততার পরিচয় দিয়েছেন বলে আমরা মনে করছি। তাদের এমন বক্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত ও চরম সাম্প্রদায়িক। প্রধান বিচারপতির সাথে স্বাধীনতা বিরোধী প্রসংগ টেনে এনে যুগসুত্র তৈরীর তাদের অপচেষ্টা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমুলক। প্রগতিশীল দাবিদার ট্রাস্টের কতিপয় নেতার এমন অপচেষ্টা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের নীলনক্সা। লাগামহীন, শিষ্টাচার বহির্ভুত এমন বক্তব্যের জন্য ট্রাস্টের কান্ডজ্ঞানহীন নেতাদের মণিপুরীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
বিবৃতিতে মণিপুরী নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে মণিপুরীদের ত্যাগ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। যারা ইতিহাস, মণিপুরীদের দেশপ্রেম, আদর্শ ও তাদের সংস্কৃতির বিষয়ে অজ্ঞ তারাই কেবল মণিপুরীদের কটাক্ষ ও সমালোচনা করে থাকে।
তারা বলেন, এই মাটি থেকে বৃটিশ বিতাড়িত করতে কৃষক প্রজা আন্দোলনের সুচনা বৃহত্তর সিলেটের মণিপুরীরাই করেছিলেন। যা ‘ভানুবিল কৃষক প্রজা আন্দোলন’ নামে ইতিহাস খ্যাত। শুধু তাই নয়, মণিপুরীদের নিজস্ব ভাষা থাকলে ও স্বতন্ত্র ভাষাগোষ্ঠীর এই ক্ষুদ্র জনজাতি বাহান্নের ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। ১৯৭১ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মণিপুরী সমাজ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন গিরিন্দ্র সিংহ, সার্বভৌম শর্ম্মা ও ভুবেন সিংহ। মণিপুরীদের গ্রামে গ্রামে এখনও জীবিত রয়েছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মণিপুরী বীর নারীদের হাতে পাকসেনারা ধরাশায়ী হওয়ার ইতিহাসও রয়েছে অনেক। যদিও ইতিহাসের পাতায় অনেক কিছুরই ঠাঁই হয়নি।
বিবৃতিতে মণিপুরী নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতির জনকের ডাকে শুধু মুক্তিযুদ্ধে নয় তার পরেও বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন মণিপুরীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৬ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাতের নির্ধারিত তারিখ ছিল মণিপুরীদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের। কিন্তু এর আগেই ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত নির্মম ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় আর সাক্ষাৎ হয়নি। অথচ এই মণিপুরীদের সমাজ, জাতিসত্ত্বা, ধর্ম নিয়ে যখন কটুক্তি ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য হয় তখন আমরা মর্মাহত না হয়ে পারি না।
বিবিৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে মণিপুরী নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পরীক্ষিত সৈনিক এবং তাঁর আদর্শের অনুসারী। যারা নিরীহ এই জাতিগোষ্ঠীর সমাজ, জাতিসত্ত্বা ও ধর্ম হেয় প্রতিপন্ন, কটাক্ষ করেছেন তারা মুখোশধারী। সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির গুটি কয়েক নেতার কারণে সংগঠন বিতর্কিত হতে পারেনা। এসব মুখোশধারীদের বর্জন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান।
বিবৃতি দাতারা হচ্ছেন মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমলাবাবু সিংহ কমল, বাংলাদেশ মণিপুরী যুব কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিখিল কুমার সিংহ ও বাংলাদেশ মণিপুরী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শুভ কুমার সিংহ।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2gO15Nz
September 07, 2017 at 10:31PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন