মামলা, অপহরণ, ডাকাতি সবচেয়ে বেশি হয় কুমিল্লায়

কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয় কুমিল্লায়। এছাড়া অপহরণ, ডাকাতির ঘটনাও এ জেলাতেই সবচেয়ে বেশি সংগঠিত হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের গত পাঁচ বছরের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়; দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খুন হয় ঢাকা জেলায়। অপহরণ বেশি কুমিল্লায়। চুরি ও ধর্ষণ বেশি গাজীপুরে।

নারী নির্যাতনে এগিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। থানায় দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যার ভিত্তিতে পুলিশ সদর দপ্তর এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ৬৪ জেলার মধ্যে গত পাঁচ বছরে (২০১২-২০১৬) সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে কুমিল্লায়; এরপরে আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, যশোর ও চট্টগ্রাম। তবে সব জেলায় অপরাধের ধরন এক নয়। অঞ্চলভেদে অপরাধের ধরন ও মাত্রায় ভিন্নতা আছে।

পুলিশ সদর দপ্তর প্রতিবছর জেলাগুলো থেকে পৃথকভাবে মামলার সংখ্যা সংগ্রহ করে। এর ভিত্তিতে তৈরি করে বার্ষিক অপরাধ পরিসংখ্যান। দায়ের হওয়া মামলাগুলো খুন, অপহরণ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, ডাকাতি, দস্যুতা, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ, দাঙ্গা, পুলিশ আক্রান্ত, চুরি, সিঁধেল চুরি, উদ্ধারজনিত মামলা ও অন্যান্য—এই ১৩টি ভাগে ভাগ করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (বিশেষ অপরাধ ব্যবস্থাপনা) মাসুম রাব্বানী বলেন, মামলার ভিত্তিতে তৈরি এই পরিসংখ্যান দিয়ে অপরাধের মাত্রার শতভাগ সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। তবে এই পরিসংখ্যান যে অপরাধের ধরন ও মাত্রার নির্ণয়ক হিসেবে কাজ করে, সেটা বলা যেতে পারে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এলাকাভিত্তিক অপরাধের এই ভিন্নতা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হয়। এর ভিত্তিতেই তারা অপরাধ কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অপরাধের কারণ অনুসন্ধান ও মাত্রা কমিয়ে আনতে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো কাজ হয়নি। তবে অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রতিবছর ‘অপরাধ সম্মেলন’ করে পুলিশ বাহিনী।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুন, অপহরণ, নারী নির্যাতন, ডাকাতি—এ ধরনের অপরাধ বেশি হয় কুমিল্লায়। গত পাঁচ বছরে এই জেলায় সর্বোচ্চ ১৯৩টি অপহরণ ও ১৩৮টি ডাকাতির মামলা হয়েছে। খুন ও নারী নির্যাতন মামলায়ও এই জেলার অবস্থান তৃতীয়।

জানতে চাইলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, কুমিল্লা জেলায় ১০৪ কিলোমিটার মহাসড়ক আছে। অপরাধীরা বাইরে থেকে এসে অপরাধ করে মহাসড়ক দিয়ে সহজেই অন্য এলাকায় চলে যেতে পারে।

জেলা পর্যায়ে শিশু নির্যাতনের মামলা সবচেয়ে বেশি হয় নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালে। গত পাঁচ বছরে নারায়ণগঞ্জে ৬৯৩টি এবং বরিশালে ৬১৯টি শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। এ ছাড়া নরসিংদী, সিলেট, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, রংপুর, পাবনা ও কক্সবাজারে শিশু নির্যাতনের সংখ্যা অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশি।

বরিশালের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলামের দাবি, শিশু নির্যাতনের মামলার একটা বড় অংশ হয় বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায়। পরিবার এসে যখন মামলা করে, তখন তা বয়সের কারণে শিশু নির্যাতনের ধারায় পড়ে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, জেলায় শ্রমিকশ্রেণির লোকজনের সংখ্যা বেশি। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা-মা সন্তান রেখে কাজে চলে যান। এই ফাঁকে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়।

গত পাঁচ বছরে জেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি, ৭৩৬টি খুনের মামলা হয় ঢাকা জেলায়। এরপর গাজীপুরের অবস্থান। সেখানে ৭২৯টি খুনের মামলা হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, যশোর, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে খুনের মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুনুর রশীদ বলেন, জেলার একটা অঞ্চলজুড়ে বনাঞ্চল থাকায় খুন করে লাশ ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চল হওয়ায় ঝুটের ব্যবসা ও ভূমিদস্যুদের মারামারির কারণেও খুনের ঘটনা ঘটে।

আর ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানের দাবি, তাঁর জেলায় খুনের ঘটনা কম। আশপাশের এলাকায় কাউকে খুন করে নদীতে ফেলে দিলে লাশ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকার দিকে এসে ভেসে ওঠে। ফলে মামলা হয় এ জেলায়।

ছিনতাই ও চাঁদাবাজি মামলার সংখ্যার দিকে প্রথম অবস্থানে আছে ময়মনসিংহ। পাঁচ বছরে ৭১১টি ছিনতাই-চাঁদাবাজির মামলা হয়। খুনের মামলায় এই জেলা তৃতীয় অবস্থানে।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, জনসংখ্যার দিক দিয়ে ময়মনসিংহ অন্যতম বড় একটি জেলা। তাই এখানে অপরাধের সংখ্যা বেশি। তা ছাড়া দরিদ্র এলাকা। মাত্র কয়েক শ টাকার জন্য ভাই ভাইকে খুন করে ফেলে, এমন ঘটনাও আছে।

নারী নির্যাতনের মামলা সবচেয়ে বেশি হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। গত পাঁচ বছরে এখানে ৪ হাজার ১১৮টি মামলা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কক্সবাজারে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৯৪৫টি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, তাঁর জেলায় যৌতুকের ঘটনায় এবং পারিবারিক কলহের কারণে নারী নির্যাতনের মামলা বেশি হতো। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি উইমেন সাপোর্ট সেন্টার করা হয়েছে। এতে করে মামলার সংখ্যা কমে এসেছে।

ধর্ষণের মামলা সবচেয়ে বেশি হয় গাজীপুর জেলায়। গত পাঁচ বছরে এখানে ৬২৩টি মামলা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নেত্রকোনায় ৫৯৪ এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা রংপুরে হয়েছে ৫৭৬টি মামলা। এ ছাড়া কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরগুনা, যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার—এই জেলাগুলোতে ধর্ষণ মামলার সংখ্যা অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, নড়াইল, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, নীলফামারী, শেরপুর, ঠাকুরগাঁও, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে অপরাধের মাত্রা অন্যান্য জেলার চেয়ে কম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান জিয়া রহমান বলেন, বিশ্বজুড়ে অপরাধের যেসব চিরায়ত তত্ত্ব আছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই সবাই কারণ বলে থাকে। অপরাধ কমিয়ে আনার জন্য কোন এলাকায় কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, এসব বিষয় নির্ধারণের জন্য গবেষণা প্রয়োজন। কিন্তু এ দেশে এ নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। সূত্র: প্রথম আলো

The post মামলা, অপহরণ, ডাকাতি সবচেয়ে বেশি হয় কুমিল্লায় appeared first on Comillar Barta.



from Comillar Barta http://ift.tt/2ysOLWi

September 27, 2017 at 07:25PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top