সুরমা টাইমস ডেস্ক:: মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নির্যাতন ও তাদেরকে দেশছাড়া করার বিপক্ষে ভারত সরকার অবস্থান না নিলেও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগে থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সরাতে ভারত উদ্যোগ নিলেও সে বিষয়ে একমত নন মমতা।
রাজ্যে রোহিঙ্গারা থাকতে চাইলে মানবিকতার খাতিরেই তাদের বিতাড়ন করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতার সরকার।
সম্প্রতি মিয়ানমার সফরে গিয়ে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমর্থন দিয়ে এসেছেন তিনি। পরে চীনে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের যৌথ নিন্দা প্রস্তাব থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় ভারত।
অবশ্য মোদির সরকার আগেই ভারতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৪০ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে (পুশব্যাক) দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদির রোহিঙ্গাদের এই পুশব্যাক করার সিদ্ধান্ত রাজ্যগুলিকেও মেনে চলতে বলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কিন্তু সেই ফরমান মানতে নারাজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, নবান্নের শীর্ষ মহলের সিদ্ধান্ত, উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা এ রাজ্যে থাকতে চাইলে মানবিকতার খাতিরেই তাদের থাকতে দেওয়া হবে। কোনো অবস্থাতেই জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না।
রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘রোহিঙ্গারা মুসলিম বলেই কেন্দ্র এমন অবস্থান নিচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্র অমানবিক হলেও আমরা তা হতে পারব না।’
মিয়ানমারে সন্ত্রাসের বলি হয়ে গত কয়েক বছর ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা সে দেশ ছেড়ে নৌকা করে বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন।
গত ২৫ আগস্ট থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় সেই সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে ইতোমধ্যেই আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার জম্মু লাগোয়া এলাকায় রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি মিয়নমারে গিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের সবাইকে ‘পুশব্যাক’ করার নীতি ঘোষণা করে এসেছেন।
পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা তেমন নয়। বনগাঁ-বসিরহাট সীমান্ত এবং উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু এলাকা দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা এ রাজ্যে ঢুকেছেন। ধরা পড়ার পরে তাদের অনেকেই এখন জেলে।
অসম-দাঙ্গার পর উত্তরবঙ্গেও বেশ কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এদের কাউকেই ‘পুশব্যাক’ করা হবে না বলে সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যদিও কেন্দ্রের চাপে এ রাজ্যের বিভিন্ন হোমে বন্দি থাকা ২৩ জন মহিলা ও শিশুর পরিচয়পত্র বিতরণ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
ইউনাইটেড নেশন হাইকমিশন ফর রিফিউজিস রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র দিচ্ছে। এ রাজ্যের হোমে বন্দিদেরও তেমন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয়কুমার দে-কে ধমক দিয়ে সেই পরিচয়পত্র বিতরণ বন্ধ করিয়েছেন।
ভারতে ১ লাখ ২০ হাজার তিব্বতি, ৬০ হাজার পাখতুন, ১০ হাজার সিংহলি শরণার্থী রয়েছেন। এর পাশাপাশি, ৩০ লাখ থেকে ২ কোটি বাংলাদেশিও ঢুকে পড়েছেন বলে বিভিন্ন সংস্থার দাবি।
কেন্দ্র কখনও এদের নিয়ে বিশেষ অবস্থান নেয়নি। অথচ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপরে অবর্ণনীয় অত্যাচার ও নির্বিচার হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে বহু দেশ তাদের জন্য দরজা খুলে দিলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘সব রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুই অনুপ্রবেশকারী। তাদের সকলকে ফেরত পাঠানো হবে।’
রিজেজুর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। যার উত্তরে রিজিজু আবার বলেছেন, ‘গোটা বিশ্বে ভারতেই সব চেয়ে বেশি উদ্বাস্তুর বাস। অতএব উদ্বাস্তু সমস্যা ও তা সামলানোর বিষয়টি নিয়ে আমাদের জ্ঞান দেওয়ার দরকার নেই।’
এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ‘পুশব্যাক’ করা এবং না করার সিদ্ধান্ত- দু’য়ের পেছনেই রাজনীতির ছাপ দেখছেন অনেকে।
তাদের মতে, হিন্দুত্বের রাজনীতি তুলে ধরতেই ‘পুশব্যাক’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার।
অন্যদিকে বাঙালি মুসলিমদের ‘পুশব্যাক’ না করে লাভের অংক কষছে তৃণমূল। বস্তুত, এ নিয়ে রাজনৈতিক ইতোমধ্যেই চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কটাক্ষ, ‘যার মাথায় তোষণ ছাড়া আর কিছু নেই, তিনি তো রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাবেনই। কিন্তু এর পরে যদি হাজার হাজার রোহিঙ্গা এ রাজ্যে ঢুকতে শুরু করে, মুখ্যমন্ত্রী সামলাতে পারবেন তো?’
যার উত্তরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘মমতা ব্যানার্জির সরকার দেশের মধ্যে সবচেয়ে মানবিক। একটা মানবিক সরকারের পক্ষে যা করা উচিত, আমরা সেটাই করছি।’
এদিকে, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী।
বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যা মানবিকভাবে নিরসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করছে ঢাকা।
সূত্রের খবর, শুধু ভারত নয়, এগিয়ে আসার জন্য সমস্ত রাষ্ট্রের কাছেই এই আবেদন জানানো হচ্ছে।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মিয়ানমারে পাঠাতে মরিয়া নয়াদিল্লিও। রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের হামলার বিরোধিতা করে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ালেও সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরে নরেন্দ্র মোদি এই উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে সে দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন।
মনে করা হচ্ছে, এবার বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলায় উদ্যোগী হলো নয়াদিল্লি।
from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2ePiP6T
September 10, 2017 at 07:32PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.