কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● একটা বিষয়ে দারুণ মিল রয়েছে তাঁদের। প্রতিজ্ঞা করলে কখনো ভোলেন না তাঁরা। তাঁদের মধ্যে ৭ জনের বাড়ি কুমিল্লায়, ৪ জনের চট্টগ্রামে। ১১ জন মিলে পণ করেন, নিজের এলাকায় কখনো চুরি নয়। কথা রেখেছেন তাঁরা! বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, মাগুরা, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চুরি করলেও কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের কথা কখনো মাথায় আনেননি তাঁরা।
দুটি জেলা বাদে ঘুরে ঘুরে দেশের অন্য এলাকায় চুরি করতে যান তাঁরা। তবে যেখানে–সেখানে চুরি করাতে আপত্তি রয়েছে তাঁদের। বেছে বেছে সোনার দোকান, মুঠোফোন ও ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানে চুরি করাই তাঁদের নেশা। চুরি করার পদ্ধতিতেও কৌশল খাটান তঁরা। ১১ জনের দলের ৩ জনের দায়িত্ব চুরি করা সম্ভব এমন দোকান বাছাই করা এবং ক্রেতা সেজে সেই দোকান ‘রেকি’ (ঘুরে আসা) করে আসা। দলের দুই সদস্যের দায়িত্ব রাতে ওই দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার সামনে মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো। মশারির আড়ালে একজন দোকানের শাটার খুলে ভেতরে ঢোকেন। টাকা ও জিনিসপত্র বস্তাবন্দী করার সময় দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে (পথচারী বা এলাকার লোকজনের বেশে) কথা বলেন তিনজন। বাকি দুজনের দায়িত্ব চুরি করা পণ্য দ্রুত সরিয়ে নেওয়া।
একটি দোকান থেকে চুরি করতে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগে তাঁদের। কাজ হয়ে গেলে ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান। ১১ জনের দলটির এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পারে পুলিশ। তাঁর নাম লিটন চক্রবর্তী। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমান বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা বাকি ১০ জন হলেন দলনেতা কুমিল্লার মো. আমির, লিটন ওরফে কাউয়া লিটন, মো. আবদুল্লাহ, মো. রোকন, মো. আলাউদ্দিন, মো. শাহীন ও মো. বাবু, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মো. সাহেদ, কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগরের মো. সুমন এবং বাঁশখালীর মো. রুবেল।
গত ৬ এপ্রিল ভোরে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার আমতলী মোড় এলাকায় ওয়ালটনের একটি বিক্রয়কেন্দ্রে চুরি হয়। সেখান থেকে ১৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ টাকার মুঠোফোন চুরি করে নিয়ে যান ওই ১১ জন। এই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও থানায় মামলা হয়। মামলাটির তদন্ত শুরু করেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ টি এম শিফাতুল মাজদার। তদন্ত করতে গিয়ে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে লিটনের সন্ধান পান। পিবিআই চট্টগ্রামের সহায়তায় লিটনকে গ্রেপ্তার করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে লিটন স্বীকার করেন, তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে আরও ১০ জন রয়েছেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ আগস্ট মেহেরপুরে, ২ আগস্ট সিরাজগঞ্জে, ২২ জুলাই গাইবান্ধায়, ১১ জুন নওগাঁয়, ২০ জুন বগুড়ায়, ২৭ মে মাগুরায়, ২৭ এপ্রিল নাটোরে, ১২ মে রাজশাহীতে চুরির কথা স্বীকার করেন লিটন।
মেহেরপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্বাস আলী মুঠোফোনে বলেন, গত ১৩ আগস্ট থানার কাচারী বাজার এলাকার একটি জুয়েলার্স থেকে প্রায় ৪৫ ভরি সোনা চুরি হয়। এই ঘটনায় মামলা হলেও চোর চক্রের কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। চুরির এই ঘটনায় লিটন জড়িত বলে পিবিআই চট্টগ্রামের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। চুরি হওয়া সোনাগুলো উদ্ধারের জন্য তাঁকে মেহেরপুর সদর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করবেন তাঁরা।
লিটন গত মঙ্গলবার দুপুরে পিবিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে বলেন, চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকার একটি সেলুনে কাজ করতেন তিনি। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ছয় মাস আগে সুমন নামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
পরে তাঁর সঙ্গে নগরের সিনেমা প্যালেস এলাকায় গিয়ে কয়েকবার দেখাও করেন। তখন সুমন তাঁকে চুরি করার প্রস্তাব দেন। গত এপ্রিল মাসে ঠাকুরগাঁওয়ে ওয়ালটনের একটি পণ্য বিক্রয়কেন্দ্রে হওয়া চুরিতে প্রথম অংশ নেন তিনি।
লিটন বলেন, কোনো একটি জায়গায় চুরি করার তিন দিন আগে তাঁদের দলের তিন সদস্য আমির, আবদুল্লাহ ও বাবু সেখানে যান। তাঁরা ‘রেকি’ করার পরই অন্যদের খবর দেন। তিনি বলেন, দলনেতা আমির কোনো কাজ করার আগে মুঠোফোনের মাধ্যমে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ঠাকুরগাঁওয়ে চুরির ঘটনায় তিনি ১২ হাজার টাকা ভাগ পান।
কখনো নির্মাণশ্রমিক আবার কখনো ভবঘুরের বেশে ওই ১১ জন ঘুরে বেড়াতেন বলে জানান পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, চোর চক্রের বাকি ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
The post নিজের এলাকায় চুরি না করে কথা রেখেছেন তাঁরা! appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2xjdj4M
September 21, 2017 at 02:49PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন