ত্রিপুরা, ২৯ সেপ্টেম্বর- হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাহারি সাজে সেজেছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহর। রঙ-বেরঙের ঝাড়বাতি আর বর্ণিল আলোকসজ্জায় পূজাময় অন্য এক আগরতলার রূপে মুগ্ধ পর্যকটরা। মুসলমানদের ধর্মীয় উপাসনালয় মসজিদ, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যাচু অব লিবার্টির মতো বিভিন্ন দেশের দর্শনীয় কিছু স্থাপনার আদলে নিখুঁতভাবে বানানো বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের গেট নজড় কাড়ছে সবার। বৃহস্পতিবার মহা অষ্টমীতে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আগরতলা পৌর শহরের শান্তিপাড়া, জয়গুরু, কামান চৌমুহনি, দুর্গা চৌমুহনী, শংকর চৌমুহনি, কর্নেল চৌমুহনিসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখেন এ প্রতিবেদক। ব্যক্তিগত পূজা মণ্ডপগুলোর চেয়ে ক্লাবভিত্তিক করা মণ্ডপগুলোই ছিল সবচেয়ে বড়। দেবী দুর্গার আরাধনায় উলু ধ্বনিতে মুখরিত ছিল মণ্ডপগুলো। প্রতিটি পূজা মণ্ডপেই দেবীর ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। দর্শনার্থীদের মধ্যে ভারতীয়দের তুলনায় বাংলাদেশিদের সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করেই বাংলাদেশি পর্যটকদের ঘুরতে দেখা গেছে। এদিন আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে দেড় হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি পর্যটক আগরতলা প্রবেশ করেছেন। পূজা উপলক্ষে পর্যটকদের এই ঢল অন্যসব দিনের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি বলে জানিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। শংকর চৌমুহনিতে সংহতি ক্লাবের পূজা মণ্ডপে কথা হয় বাংলাদেশি পর্যটক মো. আফরোজের সঙ্গে। তিনি জানান, দুই দেশের কাস্টমস্-ইমিগ্রেশনের ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে শুধুমাত্র পূজা দেখতেই আগরতলা এসেছি। আমাদের দেশের তুলনায় এখানকার পূজা মণ্ডপগুলো অনেক বেশি সুন্দর হয় বলে শুনেছি। পূজা মণ্ডপগুলো যেভাবে সাজানো হয়েছে তাতে যে কারোরই নজর কাড়বে। শান্তিপাড়া এলাকার একটি পূজা মণ্ডপে ঘুরতে আসা মুঠোফোন ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া জানান, কয়েকজন বন্ধু মিলে বুধবার এসেছি পূজা দেখতে। অনেক ভালো লাগছে পূজামণ্ডপ দেখে। আসলেই এখানকার পূজা অনেক বেশি কালারফুল। আগরতলা ইন্টিগ্রেডেট চেকপোস্টে জনি মল্লিক নামে আরেক বাংলাদেশি পর্যটক জানান, প্রতিবছরই পূজা দেখতে আগরতলায় আসি। এবারও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পূজার আনন্দ উপভোগ করতে এসেছি। বিজয়া দশমীর পর দেশে ফিরে যাব। এদিকে, পূজা উপলক্ষে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে সন্ধ্যা ৭টার পর থেকেই আগরতলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে নো এন্ট্রি সাইবোর্ড বসিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পূজা উপলক্ষে পুরো ত্রিপুরা রাজ্যজুড়ে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তর্তী এলাকার পূজা মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তার জন্য দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে রাজ্য সরকার। ত্রিপুরার স্থানীয় সাংবাদিক অরূপ জানান, পূজা উপলক্ষে গত মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এবছর পুরো ত্রিপুরা রাজ্যে দুই হাজার ৪৩৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯৫৪টি মণ্ডপ এবং গ্রামাঞ্চলে এক হাজার ৪৮২টি মণ্ডপ রয়েছে। তবে গত বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা আরও বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক অরূপ। সংবাদ সম্মেলনে ত্রিপুরা রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক (ডিজিপি) শ্রী এ.কে শুক্লা জানান, পূজা উপলক্ষে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো রাজ্যজুড়ে ত্রিপুরা স্টেট লাইফেলস্ ও পুলিশের নয় হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার পাশাপাশি গোটা রাজ্যে ৭৯টি ওয়াচ্ টাওয়ার এবং যে কোনো ধরনের অভিযোগ জানাতে ১৪২টি পুলিশ সহয়াতা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আর/১৭:১৪/২৯ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2wnKlPX
September 29, 2017 at 10:31PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন