ঈদের দিনেও বিজিপির গুলিতে প্রান দিতে হলো রোহিঙ্গা দম্পতিকে

সুরমা টাইমস ডেস্ক: মিয়ানমার সেনা-পুলিশের পাশবিকতায় অন্যদের সঙ্গে পালিয়ে সীমান্ত এলাকায় এক মাত্র শিশু সন্তানকে (৪) নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন রাখাইন রাজ্যের ঢেকিবনিয়া উত্তরপাড়ার নুরুল বশরের ছেলে মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ (৩০) ও আয়েশা বেগম (২১) দম্পতি।

প্রাণের তাগিদে তাড়াহুড়োই নিতে ভুলে গিয়েছিলেন প্রয়োজনীয় মালামাল ও সন্তানের জন্য আনা নতুন জামাটি। ঈদের দিন জামাটি পরানো হবে বলে চার বছর বয়সী ছেলে জুবাইরকে বুঝিয়ে তুলে রেখেছিলেন। এর মাঝে সবার উপর মিয়ানমার সরকারের চলমান অরাজকতার ছাপে কিছুই বুঝতে পারছে না শিশুটি।

তাই শনিবার কোরবানি ঈদের দিন জানতে পেরে নতুন জামা দিতে পীড়পিড়ি করছিল একমাত্র ছেলেটি। আর এদিকে শনিবার সকাল থেকে ঢেকিবনিয়া ও বলিবাজার এলাকায় প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ এবং ধোয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়।

এরমধ্যে সীমান্তের কাছের গ্রামেই তাদের বাড়ি। তাই স্বামী-স্ত্রী সিদ্ধান্ত নেয়, এক সঙ্গে গিয়ে গিয়ে শিশু সন্তানের জামা এবং কিছু ব্যবহার্য মালামাল নিয়ে আসার। যে ভাবা সেই কাজ। সন্তানকে অন্য আত্মীয়দের কাছে রেখে স্বামী-স্ত্রী সকালে বাড়ি গেলেন। সন্তানের জামা ও অন্যান্য মালামালসহ ফিরে আসছিলেন দুপুরে। প্রায় সীমান্তের কাছাকাছিই চলে এসেছিলেন। কিন্তু সামনে পড়ে গেলেন মিয়ানমার সেনাদের। চোখ পড়তেই নিরস্ত্র দম্পতির উপর নির্বিচারে গুলি চালায় মিয়ানমার সেনারা। ফলে সন্তানকে আর নতুন জামা পড়ানো হলো না অসহায় বাবা মায়ের। জামা ও অন্যান্য মালামালসহ সীমান্তের কাছেই পড়ে থাকে জাফর-আয়েশার নিথর দেহ।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের মৃত্যুর খবরটি আত্মীয়দের কাছে যায়। সন্ধ্যায় জিরো পয়েন্টে অবস্থানকারী নিকটাত্মীয় কয়েকজন যুবক গিয়ে তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে সীমান্তের এপারে জিরো পয়েন্টে নিয়ে আসে। এসময় স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। সন্তানের জন্য জামা আনতে গিয়ে কোরবানির ঈদের দিন পিতা-মাতার কোরবানি হওয়ার কথা খবর প্রচার পাবার পর সবার মাঝে বেদনার ছাপ পড়ে যায়। আনন্দের দিনে বেদনাহত হয়ে বৃষ্টিতে মরদেহ পাহারা দেয় অসহায়রা।

বিজিবি কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটি সত্যি হৃদয়বিদারক। আমাদের সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। উদ্ভূত যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি তৎপর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট (শুক্রবার) রাতে মিয়ানমারে সৃষ্ট সহিংসতায় পুরো রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতায় মিয়ানমার সরকারের তথ্যে এ পর্যন্ত ১০৬ জন নিহত হয়েছে। এতে ১২জন মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। কিন্তু রোহিঙ্গাদের তথ্য মতে এই পর্যন্ত কয়েক হাজার নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ, শিশু মিয়ানমার সেনার পাশবিক হত্যার শিকার হয়েছে।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2x2xS8p

September 03, 2017 at 11:36PM
03 Sep 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top