অবশেষে নেইমার-ভূত যেন কাঁধ থেকে নামিয়ে ফেলল বার্সেলোনা। নেইমার আকস্মিকভাবে ক্লাব ছাড়ার পর তাল কেটে যাওয়া বার্সা লিগের আগের দুই ম্যাচে জিতলেও তৃপ্তিতে খাদ ছিল। অবশেষে আজ তৃতীয় ম্যাচে লিওনেল মেসির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে এসপানিওলকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিল বার্সা। নেইমারের জার্সি যাঁকে তুলে দেওয়া হয়েছে, সেই ডেম্বেলে অভিষেকে নজর কাড়লেন মিনিট ২৫ খেলেই। দুর্দান্ত গতিতে বল নিয়ে ঢুকে পড়া এই ২০ বছর বয়সীর বাড়ানো বলে সুয়ারেজ গোল করেছেন। অন্য গোলটি জেরার্ড পিকের হেড থেকে। লিগে টানা তিন ম্যাচে তিন জয় নিয়ে বার্সা এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। এই তিন ম্যাচে কোনো গোলও খায়নি তারা। অন্যদিকে তিন ম্যাচের দুটিতে ড্র করে শুরুতেই বার্সার চেয়ে ৪ পয়েন্টে পিছিয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ। দিনের প্রথম ম্যাচে রিয়াল নিজেদের মাঠে লেভান্তের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়ে ১-১ ড্র করেছে। যে ম্যাচে মার্সেলো লাল কার্ডও দেখেছেন। বার্সা অবশ্য নিজেদের সমস্যাতেই এত জর্জরিত ছিল, রিয়ালের হোঁচট খাওয়া শুরু উপভোগ করার অবকাশই পায়নি। অবশেষে আজ যেন সেই ক্ষুরধার বার্সার দেখা মিলল। সেই এক-দুই স্পর্শের পাস। সঙ্গে তিরের ফলার মতো গতি। মেসিকেও আজ প্রাণবন্ত দেখাল। মাঠের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে মেসির পা পড়েনি। পুরো মাঠ দাপিয়ে খেলে নিজের ৪২তম হ্যাটট্রিক তুলে নিলেন। বার্সার হয়ে এটি তাঁর ৩৮তম হ্যাটট্রিক, বাকি চারটি দেশের হয়ে। মেসির তিন গোলের দুটি জর্ডি আলবার বানিয়ে দেওয়া। সুয়ারেজ প্রায় নিশ্চিত গোল মিস না করলে অ্যাসিস্টের হ্যাটট্রিক হয়ে যেত এই ফুলব্যাকের। লা লিগায় প্রায় দেড় বছর পর হ্যাটট্রিক করলেন মেসি। সর্বশেষ হ্যাটট্রিক করেছিলেন গত বছরের মার্চে। যদিও আজকের হ্যাটট্রিকে রেফারির কিঞ্চিৎ ভূমিকা আছে। ২৫ মিনিটে ইভান রাকিতিচের থ্রু পেয়ে যান বক্সের মধ্যে। দুই ডিফেন্ডারকে ড্রিবল করে দুর্দান্ত গোল মেসির। যদিও রিপ্লেতে দেখা যায় মেসি অফ সাইডে ছিলেন। ওই গোল খাওয়ার আগ পর্যন্ত সমানে বার্সাকে টক্কর দেওয়া নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা আফসোস করতে পারে, তাদের একটি শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে গেছে। ম্যাচের স্কোর ২-১ থাকলেও শেষ ফলটা হয়তো এতটা অপমানজনক হতো না। নাকি হতোই! আজ যে বার্সা ছিল একেবারেই অবিশ্বাস্য ছন্দে। এ যেন সেই ২০০৯ সালের পেপ গার্দিওলার সময়কার বার্সা। কী ছন্দ, কী গতি! এসপানিওলের তাই শেষ পর্যন্ত সান্ত্বনা খোঁজার কিছু থাকল না। কাতালান ডার্বি একপেশেই হয়ে রইল। বার্সার বিপক্ষে দ্বৈরথে তাঁদের সর্বশেষ জয় ২০০৯ সালে। এরপর থেকে টানা ১৯ ম্যাচে জয়শূন্য রইল বার্সেলোনা শহরের আরেক বড় এই ক্লাব। লিগে বার্সার কাছে এ নিয়ে ৯৬ ম্যাচে হারল দলটি। লা লিগায় আর কোনো দলের কাছে তারা এত বেশিসংখ্যক ম্যাচ হারেনি। আজ মেসিও যেন অনেক দিন পর মন খুলে খেলতে পারলেন। প্রথমার্ধ তো পুরোপুরি মেসিময়। ৩৫ মিনিটে করলেন নিজের দ্বিতীয় গোল। আলবার প্রথম অ্যাসিস্ট। মেসির কাছ থেকে বল কেড়ে নিলেও ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেনি এসপানিওল রক্ষণ। ফিরতি বল পেয়ে যান আলবা। তাঁর ক্রস থেকে মেসির ডান পায়ের আলতো টোকা। বিরতির আগে গোলের ন্যূনতম আরও দুটি পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করেছিলেন মেসি। হ্যাটট্রিকটা দিগন্তে উঁকি দিচ্ছিল। ৬৬ মিনিটে আলবার ক্রস; অবশেষে এল সেই আকাঙ্ক্ষিত গোল। কাতালান ডার্বির ইতিহাসেও মেসি এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন পিকে ও সুয়ারেজ। এর মধ্যে ৬৮ মিনিটে বদলি হিসেবে নেমেছেন ডেম্বেলে, বার্সার ইতিহাসে নেইমারের চেয়েও দামি খেলোয়াড়। নেইমার চলে যাওয়ায় যে ভারসাম্যহীনতা ও বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, খেলোয়াড়দের মধ্যেও যার ছাপ পড়েছিল, অবশেষে তার থেকে বার্সা যেন বেরিয়ে আসতে পারল। যদিও সামনে এখনো দীর্ঘ পথ বাকি।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2gUCTFz
September 11, 2017 at 12:32AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন