ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে প্রভাবশালী আর দাপুটে অভিনেতা হিসেবে যে কজন দীর্ঘদিন থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে আছেন, তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা মিশা সওদাগর। যাকে দেশের মানুষ ভিলেন হিসেবেই জানেন। অথচ এই মানুষটি অভিনয় জগতে এসেছিলেন নায়ক হিসেবে কাজ করতে! অথচ ভাগ্যও তাকে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছে! সালটা ১৯৮৬। অভিনয়ের প্রতি চরম নেশা মিশা সওদাগরের। বয়স খুব একটা না হলেও দেখতে শুনতে খারাপ না! পাড়া প্রতিবেশীরা প্রায়শই তাকে নায়ক বলে জ্বালাতনও করতো। তাদের প্রতি এক ধরনের ক্ষ্যাপাটে মনোভাব প্রদর্শন করলেও মানুষের মুখে বলা নায়ক শব্দটা ব্যাপকভাবে নিজের ভেতরে প্রভাব বিস্তার করে। এমনিতেই অভিনয়ের প্রতি আরাধ্য টান, তার উপর মানুষের এই ক্ষ্যাপানো তাকে অভিনয়ের প্রতি আসক্তই যেন করে দেয়। আর তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, অন্তত নায়ক হওয়ার চেষ্টাটা করবেন! মন থেকে চাইলে নাকি ভাগ্যও পায়ের তলায় এসে ধরা হয়। মিশা সওদাগরেরও ক্ষেত্রেও যেনো তেমনটাই হলো। কারণ তিনি যে সময়টায় মনস্থির করছিলেন যে অভিনয়টাই করবেন, ঠিক তখনই শুনতে পান যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র কর্পোরেশন(বিএফডিসি) নতুন মুখের সন্ধান প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। চোখবুঁজে কিছু না ভেবেই নতুন মুখের সন্ধান প্রতিযোগিতায় নাম লেখান মিশা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে যা হয় আরকি! প্রতিযোগিতায় টিকে যান তিনি। এবং নায়ক হিসেবেই টেকেন! ১৯৮৯ সালে ছটকু আহমেদ পরিচালিত অত্যাচার ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন মিশা সওদাগর। এরপর নায়ক হিসেবে চেতনা এবং অমরসঙ্গী ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু কি কারণে যেনো নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না তিনি। সিনে আলোচকদের দৃষ্টিতো পানইনি, তারউপর বাণিজ্যিকভাবেও ফ্লপ হয় ছবিগুলো। মিশা বুঝতে পারেন,নায়ক হতে চাইলেই তা হওয়া এতো সহজ নয়। কারণ এখানেতো মানুষেরও তাকে গ্রহণ করা না করার বিষয় জড়িত। ফলে নায়ক হিসেবে তাকে নির্মাতা ও প্রযোজকরা সিনেমা না করতেই পরামর্শ দেন! সবাই তার অভিনয়ের প্রশংসা করলেও নায়ক হিসেবে তাকে দেখতে যেনো সবাই কিছু সংকুচেই ছিল। ফলে নায়ক হয়ে চলচ্চিত্রে রাজত্ব করার ফ্যান্টাসি থেকে বেরিয়ে আসেন মিশা। সবাই তাকে তখন খলচরিত্রে অভিনয়ের পরামর্শ দেন। ভেবে দেখেন মিশা। আত্মপ্রত্যয়ী মিশা তখনও অভিনয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে আছেন। নায়ক হিসেবে রাজত্ব করার খায়েশ জলাঞ্জলি দিয়ে খল চরিত্রে হিসেবে বাংলা সিনেমায় আবির্ভূত হন তিনি। ১৯৯৪ সালে যাচ্ছে ভালোবাস ছবির মধ্য দিয়ে ভিলেন হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। আর তখন থেকেই মূলত সাফল্য পেতে শুরু করেন তিনি। অভিনয়ের নেশায় বুঁদ হয়েই ভিলেন হিসেবে তিনি একে একে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন মিশা সওদাগর। চারদিকে তার অভিনয়ের প্রশংসাও ছড়িয়ে যেতে থাকে। বিগত তিন দশক থেকেই ঢাকাই চলচ্চিত্রের পূর্ব পুরুষ রাজ্জাক, ফারুক, আলমগীরের মতো নায়কদের বিপরীতে সিনে পর্দায় তিনি যেমন বাধা হয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন, তেমনি সালমান শাহ, ইলিয়াস কাঞ্চনদের থেকে শুরু করে রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান, শাকিব খান হয়ে হাল সময়ের শুভ, সাইমন, বাপ্পীদের ধমকি একাই সামলে যাচ্ছেন।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2vBQSKu
September 03, 2017 at 04:58PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন