কুমিল্লার বার্তা রিপোর্ট ● চলতি বছরের ৭ই ফেব্রুয়ারী কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.ইলিয়াছ পাটোয়ারীকে সভাপতি করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদ। গত ৭ মাসে ঘোষিত ওই কমিটির নেতৃত্বে ভালোই চলছিলো দলীয় কার্যক্রম। কিন্তু হঠাৎ ওই কমিটির কাউকে না জানিয়ে এবং কমিটি বিলুপ্ত না করেই গত মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ৭ সদস্যের একটি আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি।
প্রায় একই রকম অবস্থা লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপিতে। ওইদিন মনোহরগঞ্জের সঙ্গে লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির ৬ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সাধারণত জেলা কমিটির প্যাডে উপজেলা ও পৌরসভা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হলেও এসব কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির প্যাডে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ করে অনুমোদন হওয়া এসব আংশিক কমিটিতে যারা পদ পেয়েছেন তারা সবাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো.আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালামের অনুসারী। লাকসাম উপজেলা কমিটিতে কালাম নিজেই সভাপতি হয়েছেন। লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কর্ণেল (অবঃ) এম.আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালামের দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রুপিং চলছে। যদিও বিএনপির মূলধারার এখনও নিয়ন্ত্রক কর্ণেল (অবঃ) এম.আনোয়ারুল আজিম। বর্তমানে অনেকটা আচমকা লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আংশিক কমিটি অনুমোদনের খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ দুই উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এদিকে, কোন প্রকার সম্মেলন ছাড়া লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করায় নবগঠিত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে এসব কমিটির নেতাদের প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে এসব কমিটি অনুমোধনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক লাকসাম পৌর শহরের দৌলতগঞ্জ বাজারে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে নবগঠিত কমিটির নেতাদের ক্ষমতাসীন দলের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত লোকদের দিয়ে গঠিত এবং অবৈধ পকেট কমিটি বলেও আখ্যা দেওয়া হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, লাকসাম পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস.এম তাজুল ইসলাম কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে খোকন, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহ আলম, উপজেলা যুব দলের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বতম সাহা বিশু, পৌরসভা যুবদলের সভাপতি জিল্লুর রহমান ফারুক প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, কাউন্সিল ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত ছাড়াই ক্ষমতাসীনদের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত লোকদের দিয়ে এই আংশিক পকেট কমিটি করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী দলের সর্বস্তরের ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোনভাবেই এসব কমিটি মেনে নেবে না। এসব কমিটির সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের কোন সম্পর্ক নাই। ক্ষমতাসীন দলের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত এ সমস্ত ব্যক্তিরা বিএনপি পরিচয় দিলে তাদেরকে প্রতিরোধ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। এসব কমিটির কার্যক্রমও বেশ চোখে পড়ার মতো। কিন্তু পূর্বের এসব কমিটি বিলুপ্ত না করেই গত মঙ্গলবার অনেকটা হঠাৎ করে কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির প্যাডে তিনটি আংশিক কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। লাকসাম উপজেলা ও পৌর বিএনপির উভয় কমিটিতে ৬ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে লাকসাম উপজেলা কমিটিতে মো.আবুল কালামকে সভাপতি ও আবদুর রহমান বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। লাকসাম পৌরসভা কমিটিতে আবুল হোসেন মানুকে সভাপতি ও বেলাল রহমান মজুমদার সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
এছাড়া ৭ সদস্য বিশিষ্ট মনোহরগঞ্জ উপজেলা কমিটিতে আবদুল মান্নান মনুকে সভাপতি ও সরওয়ার জাহান দোলনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এসব আংশিক কমিটির সকল পদে যারা দায়িত্ব পেয়েছন তারা সকলেই মো.আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালামের অনুসারী।
লাকসাম পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস.এম তাজুল ইসলাম খোকন বলেন, এসব কমিটিতে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন যারা আওয়ামী লীগের এজেন্ট। আর সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক উপায়ে চৈতি কালামের এসব পকেট কমিটির অনুমোধন দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের পদেই বহাল রয়েছি। কারন জেলা কমিটি কোন সম্মেলন করেনি বা আমাদের কমিটি বিলুপ্ত করেনি।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.ইলিয়াছ পাটোয়ারী কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র মতে একটি পূর্নাঙ্গ কমিটির মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছর। আর আমাদের কমিটির মেয়াদ মাত্র সাত মাস। সুতরাং আমাদের পূর্নাঙ্গ কমিটি বহাল আছে এবং বৈধ কমিটি। জেলা কমিটি উপজেলার প্যাডে যেই কমিটি দিয়েছেন সেটা আংশিক কমিটি। সেই আংশিক কমিটির আবার কোন দিন তারিখও নেই। তাই বলা যায় ওই আংশিক কমিটি’ই হলো অবৈধ কমিটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি কর্ণেল (অবঃ) এম. আনোয়ারুল আজিম কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, এগুলো সব অবৈধ কমিটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আতাঁত করেছে, তাদের দিয়েই এসব কমিটি করা হয়েছে। আর আমি বিএনপির হাই কমান্ডকে বললো মাঠে এসে জনপ্রিয়তা দেখে নেতা নির্বাচন করুন। এসব কমিটি বিএনপির নেতাকর্মীরা কোন দিন মেনে নিবে না বলেও জানান তিনি।
তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালাম কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, যারা পদবঞ্চিত হয়েছেন তারাই এমন কথা বলছেন। এখন আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়েছে, সামনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। এর মধ্যে যদি তারা (আজিমের অনুসারীরা) দলে ফিরে আসেন তাদেরকেও সম্মানজনক স্থানে রাখা হবে। আর আজিম সাহেব নিজেই অবৈধ। তিনি এসব কমিটি নিয়ে কথা বলার কেউ না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন কুমিল্লার বার্তা ডটকমকে বলেন, আমি বলবো যারা কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সবাই বিএনপির লোক। আর নিজেদের মধ্যে যদি কোন সমস্যা থাকে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন কারনে অনেক সময় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কমিটি দিতে হয়। এখানে রাজনৈতিক অনেক বিষয় রয়েছে।
এদিকে, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জের তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির একাধিক নেতকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে কর্ণেল (অব.) এম.আনোয়ারুল আজিম ও আবুল কালামের মধ্যে। তবে বিএনপির মূলধারা নিয়ন্ত্রন রয়েছে কর্ণেল (অব.) এম.আনোয়ারুল আজিমের হাতেই। কেন্দ্রীয় বিএনপির বর্তমান কমিটিতে আবুল কালাম শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পর লাকসাম-মনোহরগঞ্জের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মতামতকে উপক্ষো করে একের পর এক সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছেন। তিনি এর আগে লাকসাম উপজেলা, পৌরসভা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলের পকেট কমিটি গঠন করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
বরং মনোহরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের ১০১ সদস্যের কমিটি থেকে ৭১ জন এবং ৫ সদস্য বিশিষ্ট মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি থেকে ২ জনই ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। লাকসাম উপজেলা ও পৌরসভা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করলেও গণহারে পদত্যাগের ভয়ে ওই কমিটি এখন পর্যন্ত পর্দার অন্তরালেই রয়ে গেছে। তাঁরা আরও বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ আসনে বিএনপি প্রার্থী কর্ণেল (অব.) এম. আনোয়ারুল আজিম মাত্র ২৩৮ ভোটে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে আবুল কালাম ও তার অনুসারীরা প্রকাশ্যে নৌকার এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে বলে অভিযোগ উঠে। যা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা অবগত রয়েছেন।
The post কালামের ‘পকেট কমিটি’ মানছে না নেতাকর্মীরা! appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2xzzIN9
September 25, 2017 at 10:33AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন