প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের সাথে খাবার ভাগ করে খাব-প্রধানমন্ত্রী

সুরমা টাইমস ডেস্ক:: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছে। মানুষের যে দুর্দশা, এই দুর্দশা দেখে আমাদের যতই কষ্ট হোক না কেন, যদি প্রয়োজন হয়, আমাদের খাবার ভাগ করে খাব। সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে এসেছে আশ্রয়ের জন্য, আমরা মিয়ানমারের মতো নাফ নদীতে ফেলতে পারি না। বঙ্গোপসাগরেও ফেলতে পারি না। তাদের আশ্রয় দিতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। তারা মিয়ানমারের নাগরিক।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের সপ্তদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পাঁচ দিনের এ অধিবেশন শেষ হয় বৃহস্পতিবার। এ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে দুটি প্রস্তাব পাস হয়।

সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে এখনো আগুন দেওয়া থামেনি। সে দেশের তিন লাখের বেশি নাগরিক বাংলাদেশে চলে এসেছে। এখনো আসছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট একটা বোঝা। কিন্তু মানবিক কারণে বাংলাদেশ মিয়ানমারের অধিবাসীদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ বিবেকে লেগেছে। কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে দেশে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, মিয়ানমারের বোধোদয় হবে। তারা নিজের দেশের নাগরিকের ওপর নির্যাতন বন্ধ করবে, তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। যারা দোষী, তাদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিরীহ মানুষকে নির্যাতন না করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সাধ্যমতো সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশবাসীকে বলব, এরা বিপদে পড়ে আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের যেন কষ্ট না হয়। স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক দল তারা সবাই যেন তাদের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়।’

১৯৭১ সালে নিজেদের শরণার্থী হওয়ার স্মৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিফিউজি থাকার কষ্ট কী, তা তিনি বোঝেন। এ কারণে যত কষ্টই হোক মিয়ানমারের অধিবাসীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের ফেরত যেতে হবে।

রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সমন্বয়ের দায়িত্বে সেনাবাহিনী রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব ত্রাণ আসছে, সেসব সমন্বয়ের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর স্থানীয়ভাবে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। যেখানে-সেখানে না দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে ত্রাণ দেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রাণে কী কী আছে তা স্ক্যান করতে এবং ত্রাণের গাড়ি ফেরত আসার সময় পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জাতিসংঘের অধিবেশনে তুলে ধরবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব জেগে উঠেছে। মিয়ানমারকে তাদের নাগরিক ফিরিয়ে নেওয়া ও নির্যাতন বন্ধ করার অনুরোধ করা হচ্ছে। তাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসান চরে একটি অস্থায়ী আবাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

সংসদে দেওয়া বক্তব্যে কক্সবাজারে শরণার্থী পরিস্থিতি দেখে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখেছি কী করুণ অবস্থা। সবচেয়ে মানবিক বিষয় হচ্ছে শিশু। কয়েকটি শিশুর সঙ্গে কথা বললাম চোখে পানি রাখা যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা বাচ্চার সামনে তার বাবা, মা, ভাই, বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে। দুটি মেয়ে এসেছে তাদের বাবা-মা কেউ নেই। একটি ছোট মেয়ে তার ছোট ভাইকে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে এসেছিল, কিন্তু পথে তার ভাই হারিয়ে গেছে। এসব সহ্য করা সম্ভব নয়।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2wd03RY

September 15, 2017 at 12:29AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top