প্রতিটি বিশ্বকাপই কিক অফের বাঁশি বাজে তার সময়ের সেরা সেরা ফুটবলারদের নিয়ে। বিশ্বসেরা ফুটবলাররা মাঠ মাতিয়ে তুলবেন, জয়ের উল্লাসে মেতে উঠবেন। সে সঙ্গে মেতে উঠবে গোটা বিশ্ব- বিশ্বকাপ মানেই যেন এই চিত্র চিরায়ত। কিন্তু, লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের টেবিলে যে অবস্থা তাতে, রাশিয়া বিশ্বকাপ আদৌ দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা খেলতে পারবে কি না সে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদি আর্জেন্টিনা কোয়ালিফাই করতে না পারে, তাহলে আগামী বিশ্বকাপ হবে বিশ্বের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিকে ছাড়াই। ফুটবল ভক্তরা যেন এ বিষয়টা এখন চিন্তাই করতে পারছে না। তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা যে তেমনই তৈরি হয়েছে! তবে গত বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের পর লিওনেল মেসি অবসরের ঘোষণা দেয়ার কারণে আগামী বিশ্বকাপ তাকে ছাড়াই খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে- এই চিন্তা যখন উদয় হয়েছিল তখন থেকেই চারদিবে তীব্র হাহাকার তৈরি হয়েছিল। টানা তিনটি বড় বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল (বিশ্বকাপ, দুটি কোপা আমেরিকা) খেলার পর মেসির এই ঘোষণা কেউ মেনে নিতে পারেননি। যে কারণে আর্জেন্টিনা প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও ম্যাক্রি, দিয়েগো ম্যারাডোনা, আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন, কোচ থেকে শুরু করে বুয়েন্স আয়ার্সের রাজপথ- সবাই এক সঙ্গে প্রতিবাদ করে উঠেছিলেন। মেসিকে ফুটবলে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন। সমর্থকরা মিছিল, মানববন্ধন পর্যন্ত করেছে। যার ফলে অবসর ভেঙে আবারও খেলায় ফিরে আসেন মেসি। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে সেই চিত্র আর নেই। মেসি এখন যেন সবার কাছেই বোঝা। তার দল আগামী বিশ্বকাপই খেলতে পারবে কি না তা নিয়ে রয়েছে ঘোর সংশয়। বিশ্বকাপে খেলতে না পারার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার পেছনে দোষ যদিও সম্পূর্ণ মেসির নয়। তবুও তারকা ফুটবলার হিসেবে তার ঘাড়েই বর্তায় অনেক দোষ। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ড্র করার পর আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলি স্পষ্টতই বলে দিয়েছেন, আমার কাছে লিও হচ্ছে সবার ওপরে। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে। যদি আমরা তার কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধাটুকু আদায় করে নিতে না পারি, তাহলে সেটাই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ড্র করার পর মেসির সম্পর্কে সাম্পাওলির এই আবেগপূর্ণ কথা আপনি গ্রহণ করতে পারেন আবার নাও পারে। এটা আপনার বিষয়। তবে, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে মেসি যে আটটি ম্যাচে খেলেছেন তার ৫টিতে জিতেছে আর্জেন্টিনা। পয়েন্ট অর্জন করেছেন ১৭। তাকে ছাড়া আর্জেন্টিনা খেলেছে ৮টি। যার মধ্যে জয় মাত্র একটিতে। পয়েন্ট অর্জন হয়েছে মাত্র ৭। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের এই অবস্থানের পেছনে মূল কারণ এটাই। যে কারণে, ১৯৭০ সালের পর এই প্রথমবারেরমত বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আর্জেন্টিনার সামনে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাকি আছে আর মাত্র দুটি ম্যাচ। একটি নিজের মাঠে পেরুর বিপক্ষে। আরেকটি ইকুয়েডরের মাঠে। এই দুটি ম্যাচে অবশ্যই জিততে হবে। তাহলেই কেবল সেরা চারে উঠে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। হারলে কিংবা ড্র করলেই বিপদ। বিশ্বকাপ খেলা হবে না আর তাদের। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষেও অবশ্যই জয়ের বিকল্প ছিল না। সে ম্যাচে ড্র করেই একেবারে খাদের কিনারা, পঞ্চম স্থানে রয়েছে আর্জেন্টিনা। পেরু আর ইকুয়েডর কোনোভাবেই সহজ নয়। পেরুর দলটি পুরোপুরি তারুণ্যে ভরা। দুর্দান্ত গতি এবং ট্যাকটিস। সর্বশেষ ১০ ম্যাচের মধ্যে ৬ জয়ে তারা উঠে এসেছে চার নম্বরে। বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে তারা কোনোভাবেই আর্জেন্টিনাকে ছাড় দেবে না- এটা বলার অপেক্ষা রাখে না আর। একই সঙ্গে ইকুয়েডরের সঙ্গে তো একবার হেরেই বসে আছে আর্জেন্টিনা। তাও নিজেদের মাঠে। সুতরাং, পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত যা দাঁড়াচ্ছে, সেটা হচ্ছে আগামী বিশ্বকাপটা মেসিকে ছাড়াই হয়তো বা মাঠে গড়াবে। সে সম্ভাবনা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে আছে। তবে ফিফা, অ্যাডিডাস থেকে শুরু করে প্রতিটি স্পন্সর প্রতিষ্ঠানই কায়মনোবাক্যে চায় যেভাবেই হোক বিশ্বকাপে উঠে আসুক আর্জেন্টিনা। সেটা পঞ্চমস্থানে থেকে প্লে-অফের মাধ্যমে হলেও। না হয়, তাদের বাজার মন্দা। তবে সবচেয়ে বড় চিন্তা দেখা দিয়েছে মেসির জন্য। আগামী বছর তিনি পা দেবেন ৩১ বছর বয়সে। পরের বিশ্বকাপ আসতে আসতে তার বয়স হয়ে যাবে ৩৫। এত বেশি বয়সে হয়তো আর বিশ্বকাপ খেলবেন না তিনি। আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকেই তার আগে হয়তো বিদায় নেবেন। সুতরাং, এবার যদি খেলতে না পারেন, তাহলে লিওনেল মেসির আর বিশ্বকাপই খেলা হবে না হয়তো কখনও। বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও, অন্তত একটি শিরোপা জিততে না পারলে কখনোই তার আর পেলে কিংবা ম্যারাডোনার পাশে বসা হবে না। এটা নিশ্চিত।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2vK1KCo
September 08, 2017 at 07:40PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top