এম.এ মান্নান ● লাকসাম উপজেলা প্রায় ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিতে নিজেই রোগীতে পরিনত হয়েছে। ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীদের অবহেলায় দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা এক প্রকার জিম্মি হয়ে থাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে।
সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিবেশ খুবই নোংরা। টয়লেটগুলো ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ন। অপরিচ্ছন্ন টয়লেটগুলো দরজা-জানালা ও ছিটকারীবিহীন, নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। রোগীদের বিছানা, টয়লেট, গোসলখানা, বেচিন ও হাসপাতালের দেয়ালে ময়লা আবর্জনা ভরপুর। রোগীদের খাবারের মান একে বারেই নিম্নামানের। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে প্রতিনিয়ত খারাপ আচরন করা হয়।
চিকিৎসা সেবা কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে রোগীরা জানান, ভাই ২/১ দিন এখানে থাকুন তাহলে বুঝবেন কেমন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি। হাসপাতালে ২য় তলায় ভর্তি থাকা রোগী নিলুফা বেগম জানান, গত ৩ দিন ধরে এখানে ভর্তি রয়েছি। দিনে একবার মাত্র ডাক্তার এসে দেখে যান। নার্সদেরকে ডাকলেও তারা আসেন না। নার্সদের কক্ষে বসে বসে মোবাইলে ফেইসবুক অথবা ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের বন্ধু-বান্ধবের সাথে ব্যস্ত থাকেন। মনে হয় হাসপাতালে নয়, যেন কারাগারে আছি। উপজেলা একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববতী মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিন গ্রামের হতদরিদ্র রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসা ডাক্তারদের ফি এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা টাকা শেষ করে ঔষধবিহীন একটি প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাড়ীতে যেতে হচ্ছে তাও রোগী আধা মরা। হাসপাতালে এক বছর বেশি সময় ধরে এক্সরে মেশিনটি বিকল থাকলেও উপরে আবার রুমের পলেস্থা ঝরে ঝরে পড়ছে। নেই আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন। এ কারনে জটিল রোগ নির্নয় ছাড়াই রোগীদের বাড়ী ফিরে যেতে হচ্ছে। আবার অনেক রোগী কয়েকগুন বেশি টাকা দিয়ে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
কেবিনে ভর্তি থাকা রোগী নুরুন নাহার, রাশেদা আক্তার, মহসিন, ইদ্রিছ মিয়া, কাকলি বেগম জানান, এখানে ভর্তি হয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে চিকিৎসকরা আমাদেরকে ঠিক মত সেবা দিচ্ছে না। হাসপাতালের ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধে নাভিশ্বাস হয়ে দাড়িয়েছে। সরকারি ভাবে তেমন কোন ঔষধ হাসপাতালে পাচ্ছি না। চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত বাইরের থেকে ঔষধ কিনে আনার পরামর্শ দেন।
এ দিকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের সূত্রে জানা যায়, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গত জুলাই ২০১৭ইং ৬৫১নং স্মারকে প্রেরিত ১’শ৩২ জন থাকলেও শূন্য পদে আছে ৫২ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ২১ জন, পুরুষ ১১, মহিলা ৩, শূন্য পদ ৭, দ্বিতীয় শ্রেণি ২৫ জন পুরুষ ১, মহিলা ১৬ জন, শূন্যপদ ৮ জন, তৃতীয় শ্রেণি আছে ৬৪, পুরুষ ৩০, মহিলা ৯, শূন্যপদ ২৫, চতুর্থ শ্রেণি ২২ জন, পুরুষ ৭, মহিলা ১ জন, শূন্যপদে ১৪ জন।
অভিযোগ রয়েছে গর্ভবর্তী মহিলা রোগী চিকিৎসা নিতে আসলে তাদের নিদিষ্ট প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকরা। এ ছাড়া রোগীদের হাসপাতাল থেকে তেমন কোন ঔষধ দেয়া হয় না এমনও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে সরকারি ঔষধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। রোগীদের মাঝে ঔষধ বিতরণ না করে তা কালো বাজারে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট, এনেস্থথিয়া, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, ডেন্টাল অর্থোপেডিক ও নাক, কান, গলা রোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় শত শত রোগী এসব রোগের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা ঠিকমত হাসপাতালে থাকেন না। তারা জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও চেম্বারে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প.প কর্মকর্তা রনজিত সেন জানান, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও জনবলের সংকট থাকার কারনে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। সবাই মিলে এগিয়ে আসলে এ হাসপাতালটি রোগীদের ভালমানের সেবা পাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি জনবল সংকটের কারনে অনেক অসংগতির কথা জেনেছি এ ব্যাপারে শিঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
The post লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2wUB0C0
September 11, 2017 at 07:59PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন