মহিউদ্দিন মোল্লা ● নদীর পাড়ে কুমিল্লার একটি ছোট উপজেলা মেঘনা। চারদিকে নদী আর খাল। সড়ক না থাকায় সবাই চলাচল করতো নৌকায়। সন্ধ্যায় কেউ পথে বের হতো না পথে ডাকাতির ভয়ে। বাইরে থেকে এলে পাশে গজারিয়া কিংবা তিতাসে স্বজনদের বাড়িতে রাত যাপন করতেন। যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় বাইরের লোকজন এখানে আত্মীয়তাও করতে চাইতো না।
এ ছাড়া এলাকার অবস্থা সম্পন্নরা অধিকাংশ থাকতেন ঢাকায়। উপজেলা হওয়ার পর থেকে সেই মেঘনার দিন বদলাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ব্রিজ ও সড়ক চালু হওয়ায় মানুষ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে চলাচল করছে, উপজেলা সদরের পাশে হাসপাতাল হয়েছে। সবাই প্রয়োজনে চিকিৎসা নিতে পারছে। উপজেলা সদরে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়ায় মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলাটি কুমিল্লা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে। উপজেলার পশ্চিমে লাগোয়া মেঘনা নদী পেরুলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা। কুমিল্লার হোমনার ৪টি এবং দাউদকান্দির ৩টি ইউনিয়ন নিয়ে ১৯৯৮ সালে মেঘনা উপজেলা গঠিত হয়। এর জনসংখ্যা বর্তমানে দেড় লক্ষাধিক। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. শফিকুল আলম ১৯৯৬ সালে মেঘনা থানা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেঘনা উপজেলা বাস্তবায়ন করেন। উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মো. শফিকুল আলম।
উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, শফিকুল আলম মেঘনা উপজেলার রূপকার। এখানে তার নেতৃত্বে ব্রিজ-রাস্তা হয়েছে। ১০ বছরের ব্যবধানে ৫০ হাজার টাকার জমির দাম ৫০ লাখ হয়েছে। মেঘনার রাস্তায় কখনো গাড়ি চলবে তা ছিল স্বপ্নের বিষয়।
মানিকারচর গ্রামের বাসিন্দা মো.জাকির হোসেন বলেন, সব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মেঘনা-ঢাকা রুটে বাস চলবে এটা ছিলো স্বপ্নের মতো। সম্প্রতি ওমরাকান্দা ও ভাটের চর ব্রিজ ২টি চালু হওয়ায় মেঘনার মানুষের জীবন যাত্রা উন্নত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন,এক সময় মেঘনা উপজেলা শুধু চর একটি ছিলো। সড়ক- ব্রিজ কিছুই ছিলো না। মেঘনা উপজেলায় চাকুরি করাকে অনেকে শাস্তি মনে করতো। কুমিল্লা থেকে ভোর রাতে রওয়ানা দিয়েও অফিস সময়ে যাওয়া যেতো না, আবার ফিরতেও রাত হয়ে যেতো। এদিকে মেঘনায় ভাড়া নেয়ার মতো বাসাও ছিলো না। অনেক কর্মকর্তা অফিসও ফাঁকি দিতেন। সেদিন পাল্টে গেছে। এখন কুমিল্লা নগরী কিংবা ঢাকা থেকে এসেও অফিস করা যায়। সবুজ শ্যামল পরিবেশে এখানে কাজ করতে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেঘনা উপজেলার প্রতিষ্ঠতা মো. শফিকুল আলম বলেন, ছাত্রজীবন থেকে স্বপ্ন দেখতাম এলাকাটি যেন উন্নত হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয়। আমার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ভাটেরচর-মেঘনা সড়কে দুটি ব্রিজের কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এখন মেঘনাকে আর কেউ পিছিয়ে পড়া এলাকা বলতে পারবে না। কারণ মেঘনা উপজেলা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের নিকটে, এখানে শিল্প কারখানা স্থাপনের চমৎকার পরিবেশ রয়েছে। এখানে চালিভাঙ্গায় ৪০০ বিঘা খাস জমি রয়েছে। এতে ইপিজেড করা যেতে পারে। এখানে শিক্ষার হার বাড়তে আরও কিছু ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন।
The post মেঘনা উপজেলার বদলে যাওয়ার গল্প! appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2xHh2cE
September 29, 2017 at 07:47PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন