কক্সবাজারে আতঙ্কের অপর নাম ডিবি পুলিশ

সুরমা টাইমস ডেস্ক:: গ্রেপ্তার বাণিজ্যের ১৭ লাখ টাকাসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক কক্সবাজার ডিবি পুলিশের সাত সদস্যকে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গোয়েন্দা পুলিশের এই সাত সদস্যের বিরুদ্ধে টেকনাফের কম্বল ব্যবসায়ী মো. গফুর আলম বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
কারাগারে পাঠানো কক্সবাজার ডিবির এই সাত সদস্যকে বুধবারই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

মামলায় ডিবি পুলিশের ওই সাত সদস্যের বিরুদ্ধে গফুর আলমকে অপহরণ করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে মৃত্যুর ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৭ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ করা হয়। টেকনাফ থানায় দায়ের করা মামলার কপি গতকাল কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। এরপর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন আসামিদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

কক্সবাজারের আদালত পরিদর্শক কাজী মো. দিদারুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় জানান, মামলার আসামিরা (ডিবি পুলিশের সাত সদস্য) আগে থেকেই পুলিশ লাইনে আটক ছিলেন। পাশেই জেলা কারাগার, তাই আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়নি। আদালতের নির্দেশক্রমে আসামিদের পুলিশ লাইন থেকেই পাঠানো হয় জেলা কারাগারে। ’

টাকাসহ ধরা পড়া ডিবি পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাত সদস্য হচ্ছেন : উপপরিদর্শক মনিরুজ্জামান ও আবুল কালাম আজাদ, সহকারী উপপরিদর্শক ফিরোজ, মোস্তফা ও আলাউদ্দিন এবং দুই কনস্টেবল আল আমিন ও মোস্তফা আজম। ডিবি পুলিশের এই দলের নেতৃত্বদানকারী পুলিশ পরিদর্শক ইয়াসির আরাফাতের বিরুদ্ধে অবশ্য মামলা দায়ের করা হয়নি।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের গঠিত তদন্তদলটি গতকালই তদন্তকাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘আমরা আজ (গতকাল) থেকেই তদন্ত শুরু করেছি। তদন্তের পর শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেব। ’

টেকনাফের দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা কম্বল ব্যবসায়ী মো. গফুর আলম বুধবার টেকনাফ থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেন, কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ তাঁকে শহরের থানা রোডের মোড়সংলগ্ন হোটেল আল গনি থেকে মঙ্গলবার তুলে নিয়ে যায়। তাঁকে ডিবি অফিস এবং পরে আরো একটি স্থানে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। বলা হয়, তিনি ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাই তাঁকে এক কোটি টাকা দিতে হবে। অন্যথায় হত্যা করা হবে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে।

শেষ পর্যন্ত গফুর আলমকে ১৭ লাখ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। গফুরের বড় ভাই টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামানের দোকানের কর্মচারীরা বুধবার ভোররাতে টাকার ব্যাগ তুলে দেন ডিবির গাড়িতে। টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের লেঙ্গুরবিল নামক এলাকায় টাকার ব্যাগ দিয়ে কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান লেঙ্গুরবিলের অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে গিয়ে নালিশ জানান। সেখানে সেনা সদস্যরা টাকার ব্যাগসহ সাত ডিবি পুলিশকে আটকের পর জেলা পুলিশ সুপারের হাতে তুলে দেন।

গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অত্যাচার : টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তবাসীর কাছে ডিবি মানেই এক মহাআতঙ্ক। কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশ সদস্যরা এর আগেও দফায় দফায় ইয়াবা উদ্ধার এবং ইয়াবা কারবারিদের আটকের নামে বাণিজ্য করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকারও হয়েছেন। গত চার মাসের মধ্যে টেকনাফ সীমান্তে এ রকম কমপক্ষে তিনটি ঘটনা ঘটেছে।

গত ১৮ই অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়ার নের্তৃত্বে একটি দল হানা দেয় স্ট্যাম্প ভেন্ডার আবুল বাশারের দোকানে। তাঁকে দোকান বন্ধ করতে বলা হয়। এরপর ডিবি পুলিশ তাঁকে তুলে নেয় তাদের কালো গ্লাসের মাইক্রোতে। বাশারের বিরুদ্ধে ইয়াবা কারবারের অভিযোগ তুলে তাঁর কাছে পুলিশ দাবি করে ৪০ লাখ টাকা। গাড়িতেই রাখা ইয়াবার কৌটা দেখিয়ে বলা হয়, টাকা না দিলে ১০ হাজার ইয়াবা ধরিয়ে দিয়ে চালান করা হবে আদালতে। সারা রাত বাশারকে চোখ বেঁধে গাড়িতে রেখে নির্যাতন করা হয়। গতকাল ছোট ভাই মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি জানান, টাকা দিতে না পারায় বাশারকে ইয়াবার মামলায় কারাগারে যেতে হয়। গত ১৯শে অক্টোবর থেকে তিনি কারাগারে। এ বিষয়ে গতকাল কক্সবাজার ডিবির পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান (২৭) থাকেন সৌদি আরবের মদিনায়।

গতকাল সন্ধ্যায় মাহমুদুল হাসান বলেন, গত ২০শে অক্টোবর সকালে কক্সবাজার শহরের বিমান অফিসে টিকিট কনফার্ম করার জন্য গেলে লিংক রোডে ডিবির পরিদর্শক ইয়াছির আরাফাতের দলের সদস্যরা তাঁকে তুলে নেন মাইক্রোতে। ডিবির উপপরিদর্শক মনির, আলাউদ্দিন ও আরাফাত গাড়িতে তুলে তাঁকে বেদম মারধর করেন। তাঁকে বড় ইয়াবা ব্যাবসায়ী আখ্যা দিয়ে ৫০ লাখ টাকা এবং তাঁর সঙ্গীকেও ৫০ লাখ টাকা দিতে বলেন। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে ইয়াবার মামলা দিয়ে চালান দেওয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয়।

‘আমি ডিবি সদস্যদের আমার ভিসা, পাসপোর্ট এবং বিমানের টিকিট দেখানোর পরও নিস্তার পাইনি। তাঁদের হোটেল ওশান প্যারাডাইজ সংলগ্ন একটি দেয়ালঘেরা মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রবাসী গাড়িতে তাঁদের ইয়াবা, জাল টাকা, বন্দুক ও দা-কিরিচ দেখিয়ে বলা হয়, এসব দিয়েই মামলায় চালান করা হবে।

পুরো দিন গাড়িতে রাখার পর শেষ পর্যন্ত তাঁদের বাধ্য করা হয় ১২ লাখ টাকা দিতে। প্রবাসী মাহমুদুল বলেন, ‘আমার স্ত্রীর গহনা বিক্রি ও ধারদেনা করে এ টাকা ডিবিকে দিতে বাধ্য হয়েছি। ’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবি পরিদর্শক ইয়াছির আরাফাত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তথ্য সূত্র:- কালের কন্ঠ



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2iELGQG

October 28, 2017 at 12:20AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top