বিশ্বনাথের জনপ্রতিনিধিদের যত কান্ড-কারখানা

IMG_20171006_214441মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ সিলেট থেকে :: আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত প্রবাসী অধ্যষুত বিশ্বনাথ উপজেলা। প্রায় ২লক্ষ ১৯ হাজার জনসংখ্যার ১০৯ জন জনপ্রতিনিধির শান্তিপ্রিয় এ জনপদে অনেক গুণীজনের জন্ম হয়েছে। তাদের কর্মগুণে বিশ্বনাথবাসী সুনামের সাথে পরিচিত হয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। বর্তমানেও অনেক গুণিজনসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বনাথের সামাজিক, অর্থর্নৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, ক্রিড়া অঙ্গনে অনেক সাফল্যের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করছে।

জনগণ বিশ্বাস করে জনপ্রতিনিধিদের ভোট দেন। সেই ভোটে নির্বাচিত হন জনপ্রতিনিধিরা। তাদের কাজ জণগনের সেবা করা, আনামত রক্ষা করা । কিন্তু তার বদলে কি হচ্ছে ? চলছে দূর্নীতি, অনিয়ম আর বেহায়াপনা। বর্তমানে সুনামের বিশ্বনাথ দূর্নামে পরিনত হতে চলেছে কিছু কতিপয় জনপ্রতিনিধিদের কার্যকলাপে। ধারাবাহিকভাবে চলছে এসব কার্যকলাপ।

গত ৩ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান স্বপ্না শাহিনের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছেন রামপাশা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী রেজিয়া বেগম।

৩ জুলাই রামপাশা ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বার কর্তৃক ঝামেলায় নিহত হন ইউপি সদস্য তাজ উল্লা। মৃত্যুর ঘটনায় রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর ও ইউপি সদস্য আবুল কাশেম কে দায়ি করে থানায় মামলা করা হয়। মামলা নং- ৮/ ৫-৭-১৭।

গত ২২ জুলাই’১৭ দৈনিক ভোরের কাগজে ‘ বিশ্বনাথের অলংকারী ইউনিয়নের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ, জনমনে ক্ষোভ’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে দেখা যায় যে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে (টিআর, কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন প্রকল্প) অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদে ৩২ লাখ ৬৪ হাজার ৮২০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় মানুষ। নামকাওয়াস্তে কাজ করে কিছু জনপ্রতিনিধি বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা আত্মসাৎ করে বলেও অভিযোগ করেন তারা। অনিয়মের বিরুদ্ধে এলাকার অনেকেই ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

গত ৩০ আগষ্ট রামপাশা ইউনিয়নের মেম্বার কর্তৃক প্রাচারকৃত চাল আটক করে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ।

৩১ আগষ্ট লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদে সরকারী চাল বিতরণকালে ইউপি সদস্য আবুল কালামের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে বেশ কয়েকজন লোক ত্রাণের ৩ বস্তাচাল ও নগদ সাড়ে ৭হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এসময় তারা খাতাপত্রও ছিঁড়ে ফেলে। এঘটনায় ১২ সেপ্টেম্বর পরিষদের সচিব জিয়াউল ইসলাম আবুল কালামসহ ১০জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা। উক্ত মামলায় ২নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কালাম ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে জেল হাজতে আছেন।

১৯ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইরন মিয়ার বাড়িতে বিয়ের দাবীতে অনশন করেছে তার প্রেমিকাদাবীকারী অন্তস্বত্ত্বা নিলুফা বেগম। প্রায় আড়াই ঘন্টা অনশনের পর থানা পুলিশের এএসআই বিনয় কুমার চক্রবর্তী একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং প্রেমিকা নিলুফাকে ইরন মিয়ার ঘর থেকে উদ্ধার করেন। এএসআই বলেন, মেয়েটির পক্ষ থেকে এজাহার দেয়া হলে যাতে ন্যায় বিচার পান তারা (পুলিশ) সেভাবেই কাজ করছেন। পরে সকল প্রকার আইনী সহযোগীতা ও বিয়ের আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন ও নূর উদ্দিনসহ আরও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের উপস্থিতিতে নিলুফাকে থানায় নিয়ে যান। হিরণ মিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। মামলা নং- ১৪ মামলা নং-১৫ (২১/৯/১৭) । ঐদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়। এখন তিনে জেল হাজতে আছেন বলে জানা যায়।

ত্রাণ বন্টনে দূনীতির অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান ও বিশ্বনাথে বিক্ষোভ করেন উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের প্রায় ২৫০ জন ত্রাণ বঞ্চিত কৃষক। ১৭ আগষ্ট রামপাশা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে ত্রাণ বন্টনে দূনীতির অভিযোগ এনে ৫৫জন ত্রাণ বঞ্চিত কৃষক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর। ১১ সেপ্টেম্বর ত্রাণ বন্টনে অনিয়মের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের খাসজান গ্রামের ৪১জন ত্রাণ বঞ্চিত কৃষক। স্থানীয় ইউপি সদস্য মতিউর রহমান কিরণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্যা হামিদা বেগম প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করে নিজেদের মনোনীত ব্যক্তিদেরকে ইচ্ছে মতো বরাদ্দ বন্টন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

এদিকে, গত ২০ সেপ্টেম্বর ও ১৬ জুলাই গাইবান্ধায় ত্রাণ বিতরণকালে সিরাজগঞ্জে ত্রাণ বিতরণকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ত্রাণ বিতরনে কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়াও, গত ‘ত্রাণ নিয়ে কোনো রকম অনিয়ম ও দুর্নীতি মেনে নেওয়া হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু, এতো অভিযোগ দিলেও প্রসাশনের পক্ষ থেকে কোন স্থায়ী প্রদক্ষেপ চোখে পড়ে নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, নাম মাত্র দু-একজন প্রতিনিধির দূর্নীতির কারনে সবাইকে দায়ী করছে জনগন। এই দূর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

উপজেলা প্রসাশনের এক কর্মকর্তা বলেন, সামান্য ত্রাণ নিয়ে কয়েকজন জনপ্রতিনিধিরা যেসব ঘটনার জন্ম দিচ্ছেন তা অকল্পনীয়। প্রবাসী অধ্যষুত এ উপজেলায় তেমনটা কখনো আশা করিনি।

এ ব্যাপারে বিশ্বনাথের বিজ্ঞজনদের মতে, বিশ্বনাথের জণগন প্রতিনিধি নির্বাচনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল করে থাকেন। নির্বাচনের সময় টাকা দিয়ে ভোট বেচা-কেনা করেন। ফলে কালোবাজারী অবৈধ টাকাওয়ালারা টাকা দিয়ে নির্বাচন করছেন। টাকা দিয়ে ভোট কিনে নির্বাচিত হচ্ছেন। সেইজন্য এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বনাথবাসীকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। তাদের মতে, ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্বনাথের সুশিল সমাজ ও সাধারন জনগণকে এগিয়ে এসে সকল দূর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

 



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2y4RGHI

October 06, 2017 at 09:46PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top