পেপ গার্দিওলা যখন বার্সেলোনায় ছিলেন, তখন তার নামের পাশে লেখা হয়েছিল ১৪টি ঈর্ষণীয় শিরোপা। নিন্দুকেরা বলেন, গার্দিওলার এই সাফল্য মোটেও সম্ভব হতো না, যদি না তার দলে লিওনেল মেসি নামক ফুটবলারটি না থাকতেন। কথাটা যে সর্বৈব সত্য, সেটা নিজেও স্বীকার করেন গার্দিওলা। বায়ার্ন মিউনিখ কিংবা ম্যানসিটিতে গিয়ে একজন মেসির দারুণ অভাব বোধ করেন তিনি। চলতি মৌসুমের কথাই ধরুন না। লা লিগায় চলতি মৌসুমে এখনও পর্যন্ত ৭ ম্যাচ খেলে করে ফেলেছেন ১১ গোল। একাই যেন বার্সাকে নিজের কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছেন পাঁচবার ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার এবং ব্যালন ডিঅর জয়ী এই ফুটবলার। তিনিই কিনা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিলে হয়ে যান একেবারে নিষ্প্রভ। খেলেন দারুণ। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে মুহূর্মুহু আক্রমণে ভরিয়ে তোলেন। কিন্তু গোল করতে পারছেন না। যার কারণে মেসি এবং তার দল আর্জেন্টিনার আগামী বিশ্বকাপ খেলা হবে কি না সেটাই পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্তমান পজিশন অনুসারে তো বিশ্বকাপই খেলতে পারার কথা নয়। কারণ, লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে ১০ দলের মধ্যে সরাসরি ৪ দল খেলবে বিশ্বকাপে। পঞ্চম হওয়া দল প্লে-অফ খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর্জেন্টিনার বর্তমান অবস্থান ৬ নম্বরে। বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে তো অন্তত ৫ নম্বরে হলেও আসতে হবে। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? ঘরের মাঠেই যে তারা পেরুরর মত দলকে হারাতে পারেনি! গোলশূন্য ড্র করতে হয়েছে। মেসির আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও একটিবারের জন্য পেরুর জালে বল জড়াতে পারেনি মেসি অ্যান্ড কোং। দুর্ভাগ্যও ভর করেছিল তাদের ওপর। বল যে সাইড বারে লেগেও ফিরে এসেছিল! অথচ আর্জেন্টিনা দলটির দিকে তাকান! তাদের লাইনআপ দেখলে যে কারও চোখ কপালে উঠে যাবে। মেসি, আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়াইন, পাওলো দিবালা, মাউরো ইকার্দি, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। যদিও পেরুর বিপক্ষে ম্যাচের দলে ছিলেন না হিগুয়াইন, আগুরো। তারকায় ঠাসা দলটির ভাগ্য এখন পুরোপুরি নিহিত ইকুয়েডরের হাতে। শেষ ম্যাচটি যে এই দেশটির মাঠে গিয়েই খেলবে আর্জেন্টিনা! ইকুয়েডরকে হারাতে পারলেই কেবল সরাসরি কিংবা প্লে-অফের মাধ্যমে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে আর্জেন্টিনা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার মিটার উচ্চতায় কুইটোতে গিয়ে খেলতে হবে মেসিদের। ১৭ ম্যাচের মধ্যে ইকুয়েডর জিতেছে মাত্র ৮টিতে। বিশ্বকাপ খেলা প্রায় অনিশ্চিত তাদের। কিন্তু কুইটো থেকে মেসিদের জয় নিয়ে ফিরে আসাটা হবে এক প্রকার অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সুতরাং, আর্জেন্টিনা সমর্থকরা ধরেই নিয়েছে, ১৯৭০ সালের পর এই প্রথম একটি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আর্জেন্টাইনদের ছাড়াই। তারকায় ঠাসা আর্জেন্টিনা দলটির আসলে সমস্যা কী? এটাই এখন গবেষণার বিষয় সবার কাছে। ১৭ ম্যাচে তারা গোল করেছে মোটে ১৬টি। পুরো বাছাই পর্বে সবচেয়ে কম গোলদাতাদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আর্জেন্টিনা। এ জায়গায় প্রথম বলিভিয়া। মেসি গোল করেছেন ৯ ম্যাচে মাত্র ৪টি। আগুয়েরো একটিও না। হিগুয়াইন তো খেলারই সুযোগ পান কম। তবুও গত বছর অক্টোবরে পেরুর বিপক্ষে সর্বশেষ স্কোর করেছিলেন তিনি। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়য় হলো, আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ৪৫৬ মিনিট কোনো গোল করতে পারছে না। কেন গোল পায় না আর্জেন্টিনা? এটা বড় প্রশ্ন। লিওনেল মেসির মত তারকা ফুটবলার থাকা সত্ত্বেও কেন গোল আসে না? এটার সবচেয়ে বড় জবাব হলো, মিডফিল্ডের দুর্বলতা। আর্জেন্টিনার কোনো ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার নেই। এছাড়া অন্যদের সঙ্গে মেসির বোঝাপড়াটাও কম। অন্য অ্যাটাকার যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিভাবান পাওলো দিবালাকে তো মাঠেই নামানো হচ্ছে না। কারণ, মেসি আর দিবালা খেলেন একই পজিশনে। কাকে রেখে কাকে খেলাবেন কোচ? এ কারণে হোর্হে সাম্পাওলি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, দিবালাকে খেলাবেন না। গঞ্জালো হিগুয়াইন নিজের স্থানটি হারিয়েছেন টানা অফ ফর্মের কারণে। কোচ সাম্পাওলি তো তার সামর্থ্য নিয়েই সন্দিহান। সার্জিও আগুয়েরো ম্যাচ খেলার মত পুরোপুরি ফিট নন। সব মিলিয়ে মেসি যে মানের ফুটবলার, তিনি দাবি করতে পারেন তার সঙ্গে মিলিয়ে দলটি সাজানো হোক। কিন্তু আর্জেন্টিনা কোচদের কাছে এটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। মেসির সঙ্গে খাপ খাইয়ে পুরো দলটিকে সাজিয়ে তুলতে পারছেন না তারা। হোর্হে সাম্পাওলিকে নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে তিনজন কোচ কাজ করছেন আর্জেন্টিনা দলের হয়ে। তাতা মার্টিনো, এডাগার্ডো বাউজার পর এখন দায়িত্বে হোর্হে সাম্পাওলি। প্রথম দুই জনের পর তৃতীয়জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল চিলির হয়ে কোপা আমেরিকায় দারুণ সাফল্য। স্প্যানিশ লা লিগায় সেভিয়ার হয়ে তোলপাড় ফেলে দেয়ার পর আর্জেন্টিনাকেও সঠিক পথে নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন তিনি। কিন্তু সাম্পাওলিও উপহার দিলেন তিনটি ড্র। কোনো জয় নেই, গোল নেই। মূলতঃ মেসির সঙ্গে দলের অন্য খেলোয়াড়দের কম্বিনেশনটাই সঠিকভাবে হচ্ছে না। মাঝ মাঠ থেকে বলের জোগান পাচ্ছেন না মেসি। অনেক সময় নিজেকেই মাঝ মাঠে এসে বল নিতে হচ্ছে বার্সা তারকাকে। যেটা আবার ক্লাবে করতে হচ্ছে না। ক্লাবে তার জন্য রয়েছে সঠিক কম্বিনেশন। বল জোগান দেয়ার মত ভালোমানের মিডফিল্ডার রয়েছে। এ কারণেই মূলতঃ ক্লাবের হয়ে গোলের পর গোল পেলেও জাতীয় দলের হয়ে কোনো গোল পাচ্ছেন না মেসি। আর/১০:১৪/০৬ অক্টোবর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2xojhQs
October 07, 2017 at 06:07AM
07 Oct 2017

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top