কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এক একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন সৌদি আরবে। কিন্তু তিলে তিলে গড়ে তোলা তাদের ব্যবসা দিনকে দিন কঠোর বিধিনিষেধ আর অসম প্রতিযোগিতার কারণে বন্ধ হতে চলেছে। এমন একজন সফল ব্যবসায়ী আবুল কালামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে আছেন সৌদিতে।
একজন শ্রমিক হিসেবে শুরু করেছিলেন তার কর্মজীবন। তারপর গড়ে তোলেন তার ব্যবসা বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন লাখ লাখ টাকা। হোটেল, সুপারশপ, ফিসারি, সিমকার্ড সহ নতুন নতুন ব্যবসায় নেমে সাফল্য ধরা দেয় তার হাতে।
তিনি বলেন, সৌদিতে বাংলাদেশিদের যত ব্যবসা আছে তার প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ীর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একজন শ্রমিক হিসেবে। এক্ষেত্রে কত পরিশ্রম আর ত্যাগের বিনিময়ে শ্রমিক থেকে সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠা। কিন্তু নির্মম সত্য হলো আজ এই সব ব্যবসায়ীরা চরম দুঃসময় অতিক্রম করছে। তারা ধুকছে নিঃস্ব হওয়ার পথে। আর এর পেছণের কারণ হলো সৌদি সরকারের বিমাতা সুলভ আচরণ।’ বেশ কিছুদিন ধরে অর্থনৈতিক সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করছে সৌদি আরব।
এ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে নিজেদের নাগরিকদের কর্মক্ষেত্রে বেশি করে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি। এছাড়া সৌদি আরবের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি অনেক দিন ধরেই মন্থর। ফলে দেশটিতে প্রবাসী কর্মী সংখ্যা হ্রাস করছে সৌদি আরব।
সৌদি আরবের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো তেল। বিশ্বব্যাপী তেলের দরপতনের পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল রপ্তানিকারক দেশটি তেলের ওপর নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য অর্জনের লক্ষ্যে গত বছর দেশটি ‘ভিশন ২০৩০’ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিনিয়োগ ও ব্যবসা প্রসারিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। এরই অংশ হিসেবে বেসরকারি খাতে আরো বেশি নিজেদের নাগরিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। আর এর ফল স্বরূপ বেকার হতে শুরু করেছে প্রবাসী কর্মীরা।
এ বিষয়ে প্রায় ১২ বছর ধরে সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক জাহাঙ্গীর জাহান বলেন, তেল বিক্রি প্রায় বন্ধ। ইয়েমেনের সাথে যুদ্ধ, কাতারের সাথে সম্পর্কের অবনতি, মধ্যপ্রাচ্যর উত্তপ্ত রাজনৈতিক অবস্থা এসব নিয়ে সৌদির বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। তাছাড়া খরচ কমাতে সৌদি মালিকরা তাদের বিদেশি কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সৌদি আরবে প্রবাসীদের জন্য ভালো সময় ফুরিয়ে আসছে।
সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী হাসান আক্তার বলেন, ‘এরই মধ্যে তেলের দরপতনের পর সৌদি আরবের বহুজাতিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সৌদি বিন লাদেন গ্রুপ একাই দরিদ্র দেশগুলো থেকে আগত প্রায় ৭০ হাজার কর্মী ছাটাই করেছে। এছাড়া মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে কোম্পানিটিকে ভবিষ্যতে আরো অনেক পশ্চিমা প্রবাসী কর্মীদের ছাটাই করতে হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
ইলেকট্রনিক্স খাতের এ প্রবাসী ব্যবসায়ী আরো বলেন, প্রবাসীরা সৌদি আরব ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কারণ এখন তাদের চুক্তি নবায়ন করার মতো যথেষ্ট ব্যবসায়িক অবস্থা নেই দেশটির। তিনি আরো বলেন, এখানে সবাই চাপের মধ্যে রয়েছে। এমন কোনো ব্যবসা নেই, যেটি ভালো চলছে। সামনের দিনগুলোতে সৌদি আরবের প্রবাসীদের জন্য আরো খারাপ সময় আসতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাছাড়া সৌদি সরকার প্রবাসী কর্মী ও তার ওপর নির্ভরশীলদের ওপর কর আরোপ করেছে। শুরুর দিকে প্রতি মাসে ১০০ রিয়াল করে এ কর গ্রহণ করা হবে।
২০২০ সাল নাগাদ এ কর ৪০০ রিয়ালে দাঁড়াবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সৌদি আরবে আর কোন ভাবেই টিকে থাকতে পারবে না প্রবাসীকর্মী সহ প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। এক সময়ের প্রবাসী বান্ধব দেশে, তাই ক্রমান্বয়ে সুসময় হারাচ্ছে প্রবাসীরা।
The post সুসময় হারাচ্ছে সৌদি প্রবাসীরা appeared first on Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা.
from Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা http://ift.tt/2zxHMvN
October 23, 2017 at 10:58PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন