নগরীতে মেয়র-পুলিশ দ্বন্দ্বে ফুটপাতের চাঁদাবাজরা এখনো অধরা!

সুরমা টাইমস ডেস্ক:: সিলেটে নগরীতে আদালতের নির্দেশের চার মাসেও ফুটপাতের চাঁদাবাজ ও হকার নিয়ন্ত্রকদের তালিকা হয়নি। মেয়র-পুলিশ দ্বন্দ্বের কারণে আটকে আছে তালিকা তৈরির কাজ। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দাবি, কোতোয়ালি থানার পুলিশ ফুটপাতের চাঁদাবাজ ও হকার নিয়ন্ত্রকদের চেনার কথা। তাই আমি কোতোয়ালির ওসিকে বারবার তালিকা তৈরির জন্য বলেছি। কিন্তু তিনি তা না করে রহস্যজনক কারণে গড়িমসি করছেন।

এদিকে পুলিশ বলছে, চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করার দায়িত্ব সিসিকের, পুলিশের নয়। তারা তালিকা করলে পুলিশ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ফলে মেয়র ও পুলিশের দ্বন্দ্বের কারণে আটকে আছে ফুটপাতের চাঁদাবাজ ও হকার নিয়ন্ত্রকদের তালিকা তৈরির কাজ। তবে আদালত তার দেয়া আদেশে বলেছিলেন ‘অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনিপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনি কার্যক্রম গ্রহণ করা না হলে এতে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হবে যে, উপরোক্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের সহযোগী।’

এদিকে ফুটপাতের চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি না হওয়ায় ফের বেপরোয়া উচ্ছেদ হওয়া ভাসমান হকাররা। নগর ভবনের পক্ষ থেকে সাঁটানো নিষেধাজ্ঞার স্টিকার-নোটিশ ছিঁড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ফুটপাতে ফের উৎপাত বেড়েছে হকারদের। পথচারীদের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা ফুটপাত ছাড়িয়ে হকারদের দখল বিস্তৃত হয়েছে রাস্তা পর্যন্ত। নগরীর রাস্তা ও ফুটপাত ফিরেছে পূর্বাবস্থায়।

সিসিক ও পুলিশ তৎপর দাবি করলেও ফুটপাত হকারমুক্ত না হওয়ায় ১৭ই মে আদালতে জনস্বার্থে একটি আবেদন জানান সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হোসেন আহমদের করা ২৫শে মে আবেদনের শুনানি করেন সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো। আদেশ দেন এক সপ্তাহের মধ্যে হকার উচ্ছেদ ও ফুটপাতের হকার নিয়ন্ত্রকদের তালিকা তৈরির।

পরে এক সপ্তাহের মধ্যে তালিকা দাখিলে ব্যর্থ হওয়ায় আদালতে এক মাসের সময় চাওয়া হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেন। তারপরও গত চার মাসে তালিকা হয়নি ফুটপাতের চাঁদাবাজ ও হকার নিয়ন্ত্রকদের। জমা হয়নি আদালতে। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সিলেট নগরীতে হকারদের নিয়ন্ত্রণকারী কারা তা আমার নয়, পুলিশের জানার কথা। বিশেষ করে কোতোয়ালি থানার ওসির। তিনি আমাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি।

তিনি বলেন, নগরীতে হকার উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছি। অপরদিকে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন বলেন, ফুটপাতের চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরির কাজ সিটি কর্পোরেশন করবে। আমাদের করার কথা নয়। তারা তালিকা তৈরি করলে আমরা সহযোগিতা করতে সব সময় প্রস্তুত। তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদে পুলিশ তৎপর, প্রতিদিনই অভিযান হচ্ছে।

বিশিষ্ট আইনজ্ঞ অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশনার পর এমন দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়ে কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না। মেয়র ও ওসি দু’জনকেই জন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ফুটপাতের হকাদের উচ্ছেদের দায়িত্ব নিতেই হবে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে হকারদের নিয়ন্ত্রক, ফুটপাতের চাঁদাবাজদের তালিকা দাখিল করতে হবে। যদি তারা এটা না করেন তাহলে সেটা হয় তাদের উদাসীনতা নতুবা পরোক্ষ মদদ কাজ করছে বলে প্রতীয়মান হবে।

এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেনকে তলব করেছেন আদালত। ফুটপাতের অবৈধ দখলদার ও চাঁদাবাজদের তালিকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা না দেয়ায় তাদের তলব করা হয়েছে। বলা হয়েছে আগামী ১৬ই অক্টোবর সশরীরে আদালতে হাজির হতে। সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো গত রোববার এ আদেশ দেন। আদালতের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও ওসি গৌছুল হোসেন।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2xwIyrH

October 10, 2017 at 09:08PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top