প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে পারে মিয়ানমার

সুরমা টাইমস ডেস্ক:: রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে পারে মিয়ানমার। এই জবাবদিহিতার পর্যায়ের পর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিষয়টি পাঠানো হতে পারে। এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি জাতিসংঘ প্যানেল আগামী সপ্তাহে তদন্ত শুরু করবে। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ একাধিক বৈঠক করলেও এটিই প্রথম কোনও কার্যকর পদক্ষেপ।

জাতিসংঘের এই প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মারজুকি দারুসম্যান। প্যানেল সদস্য হিসেবে রয়েছেন অস্ট্রেলীয় মানবাধিকার কমিশনার ক্রিস সিদোতি এবং শ্রীলঙ্কান আইনজীবী রাধিকা কুমারাস্বামী।

প্যানেল চেয়ারম্যান জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে অগ্নিসংযোগ, হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণের অভিযোগের বিস্তারিত থাকবে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায় এসব অভিযোগ উঠেছে।

মারজুকি দারুসম্যান এর আগে জাতিসংঘের দুটি তদন্তে কাজ করেছেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যা মামলা ও শ্রীলঙ্কার যুদ্ধাপরাধ। তিনি জানান, তার দল ২০১২ সাল থেকে রাখাইনের বৌদ্ধ ও মুসলিমদের দাঙ্গার সময় থেকে ঘটনা বিশ্লেষণ করবে। প্রধানত রাখাইনে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করলেও মিয়ানমারে অন্যান্য বাস্তুচ্যুত জাতিগোষ্ঠী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছে তাও খতিয়ে দেখা হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পদক্ষেপের বিষয়ে মারজুকি জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল তখন অ্যাকাউন্টিবিলিটি ধাপের দিকে এগুবে। মিয়ানমার গত ২০ বছরের এ ধাপের মুখোমুখি হয়নি। এর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের পক্ষে অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক আদালতের যাওয়া যেতে পারে, নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদনটি হবে নতুন পদক্ষেপের ভিত্তি।

মারজুকি জানান, আগামী সপ্তাহে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসবে প্যানেল সদস্যরা। তারা রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সাক্ষ্য নেবে। প্যানেল সদস্যরা মিয়ানমারও সফর করবে। তিনি মিয়ানমারের প্রতি হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, সহিংসতা কবলিত রাখাইনে প্যানেল সদস্যদের গমনে যেনও কোনও বাধা দেওয়া না হয়।

মারজুকি জানান, মিয়ানমার যদি রাখাইনে পৌঁছাতে বাধা দেয় তাহলে ২০ বছর ধরে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিবেদন জমা পড়ে আছে। সেগুলো তখন কাজে লাগানো হবে। তিনি বলেন, সরকারের এটা জানা উচিত। সব ধরনের তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করলেই দেশটির লাভ। আর সে জন্য ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ার ইয়াঙ্গি লি ও মানবাধিকার কমিশনারের কাজের প্রশংসা করেন মারজুকি। তিনি জানান, তারা তথ্য-প্রমাণে জোর দিবেন, মতামতের উপর নয়।

১৯শে সেপ্টেম্বর দেওয়া ভাষণে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বলেছিলেন ৫ই সেপ্টেম্বর রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা অব্যাহত থাকে। ২৫শে আগস্ট থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।

মারজুকি মনে করেন, রাখাইনে সামরিক অভিযানের বিষয়ে হয়তো সু চিকে অন্ধকারে রেখেছে দেশটির সেনাবাহিনী।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2yGlN8q

October 22, 2017 at 11:03PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top