কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস ও ছবি পোষ্ট দিয়ে মো. রবিউল আউয়াল হৃদয় (২৫) নামের এক যুবকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত যুবক গত ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিষ পান করে হাজীগঞ্জ থানায় প্রবেশ করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে মৃত্যুবরণ করে হৃদয়।
নিহত হৃদয় উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের স্থানীয় ওড়পুর গ্রামের পাল বাড়ির প্রবাসী রফিকুল ইসলামের ছেলে। হৃদয় হাজীগঞ্জ থানার একটি মামলার প্রধান আসামি। ওই মামলায় তার মা, বোন ও এক বন্ধু আসামি রয়েছে। এ দিকে হৃদয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার হাজীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর হৃদয় তার ফেসবুকে বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দেয়। একটি স্টাট্যাসের ভিতরে হৃদয় উল্লেখ করে, আমার কি দোষ ছিল তা ঝাচাই করে কেউ দেখল না। আপসোস এটাই আমার কি আপরাধ ছিল? যারা শাস্তি পাওয়া উচিত ছিল, তারা খুব ভাল আছে। আর মাঝখানে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে। কি চমৎকার আপনাদের বিবেক? আজ একটা ভাল মানুষ চলে গেল এই সুন্দর পৃথিবী থেকে, আর দোষ পরল আমার উপর।
এ দিন দুপুর ১২টা ৪২ মিনিট থেকে শুরু করে কিটনাশক বোতলের ছবি ও তার সেলফি, মা, ছোট ভাই ও বোনের সাথে যৌথ ছবি পোষ্টসহ ৭টি স্ট্যাটাস দিয়ে রাত ৯টায় বিষ পান করে হাজীগঞ্জ থানায় প্রবেশ করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কতর্ব্যরত ডাক্তার তাকে সদর হাসপাতালে রেপার করে। সেখানে থেকে শুক্রবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রেপার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে হৃদয়।
হৃদয়ের মা রাশিদা বেগম (৪০) ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, হৃদয় নির্দোষ, আমাদের ফাঁসানো হয়েছে। তারা (নুরুল ইসলাম গং) আমাদের উপর অনেক নির্যাতন করেছে। তাদের সাথে আমাদের সম্পত্তিগত বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে তারা আমাকেসহ আমার ছেলে ও মেয়েকে মারধর করেছে। আমার মেয়েকে শ্লীলতাহানি করেছে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি, থানা এবং এলকায় দরবারও হয়েছে, কিন্তু সমাধান হয়নি। এরপরেই (২১ আগষ্ট) রাতে মারামারি। রাতের অন্ধকারে কে বা কারা সাইফুলকে মেরেছে। অথচ দোষ পড়েছে আমার ছেলে হৃদয়ের উপর। এ ঘটনার পর তারা আমাদের উপর অনেক নির্যানত করেছে, মামলা দিয়েছে। আমার মেয়ে জেএসসি পরিক্ষার্থী ছিল, দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আমার ছেলেটাকেও হারালাম।
মাওলানা মাইনুদ্দিন মিয়াজীর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, হৃদয় হত্যা মামলার আসামি। সে ফেসবুকে কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়ে বিষ পান করে থানায় আত্মসমর্পন করে। এখন আপনারাই বলেন, তাদের অভিযোগ কতটুকু সত্য।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ মোহাং জাবেদুল ইসলাম বলেন, হৃদয় একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি। তার নিহতের ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
হৃদয়ের ফেসবুকের হুবহু স্ট্যাটাস:
২৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩ টা ৪১ মিনিটে ৭ম ও শেষ পোষ্ট ও স্ট্যাটাস (পরিবারের ছবি দিয়ে) – খুব সুখি পরিবার ছিলাম। সবশেষ হয়ে গেছে। এমন দিন আর কখনও হয়ত আসবে না। এ দিন বিকাল ৩ টা ২৭ মিনিটে ৬ষ্ঠ পোষ্ট ও স্ট্যাটাস (হৃদয়ের ছবি দিয়ে)- আসতাছি আপন ঠিকানায়। কিন্তু হয়ত আপন মানুষ গুলারে আর কখনও দেখা হবে না।
বিকাল ৩ টা ১১ মিনিটে ৫ষ্ঠ পোষ্ট কিটনাশকের বোতল ও কৃষি বীজ। বিকাল ৩ টা ০৪ মিনিটে ৪র্থ পোষ্ট ও স্ট্যাটাস (কিটনাশকের বোতল নিয়ে সেলফি)- মরার আগে নিজের একখান সেলপি দিলাম। বাট হাতে যেটা দেখছেন ওটা বিষ,এর বোতল,এবং লাল শাক এর বিচি,,লাল শাকের বিচি কিনার কারন হচ্চে এটা না কিনলে হয়ত দোকানদার কীটনাশক এর বোতল টা দিতো না।
দুপুর ১ টা ৪৯ মিনিটে ৩য় স্ট্যাটাস- আজ যারা আমার মৃত্য কামনা করতাছে তারা এই একদিন আপসোস করবে,,,কিন্তু তখন আপসোস করে কোন লাভ হবে না। যারা আমাকে ছিনে তারা ভাল করে যানে আমি কেমন ছেলে,,,আর সাইফুল কাকা যে কেমন তাও তারা ভাল যানে,,আসলে দোষ তাদের না,,আসলে আমি যদি ওদের জায়গায় থাকতাম তাহলে আমি এমনটাই করতাম,,,কিন্তু সত্যকারের খুনি দের শাস্তি দিতে পারতাম না,,,একবার ভেবে দেখেন সবাই,,,কেউ এটা মেনে নিতে পারছে না,,যে আমি সাইফুল কাকা কে ছুরি মারব, কিন্তু কি করার সবাই তো বলতাছে আমি মারছি বিস্বাস না হলে ও করতে হবে।
আমি এমন জিবন নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না,,,আমি চেয়েছিলাম সবার সাথে ভাল হয়ে চলতে,,,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে,,কিন্তু আর কোন দিন পারব না,,,তাই আমি ও ঘৃনা করি আমার জিবন কে,,কিন্তু মরার আগে একটা কথা বলে যেতে চাই,,,আসলে এর পিছনে কারা ছিল,,কাদের কারনে আজ আমার, সাইফুল কাকার পরিবারের এই অবস্তা??? সবাই চায় আমি যেন মরে যাই,,কিন্তু আমার পরিবারের কি হবে?? আপনারা আমার জায়গায় থেকে একটু কষ্টে করে ভেবে দেখবেন???
আজ আমি মরে গেলে আমার পরিবার শেষ হয়ে যাবে। তার জন্য কারও কিছু আসবে না। মুল বেজাল টা ছিল জায়গায় নিয়া এটা এলাকার সবাই জানে আর সেই জায়গায় নিয়া শেষ হয়ে ২টা পরিবারের সুখ,শান্তি।আজ জায়গায় নিয়া এত কিছু,,কিন্তু যাদের সাথে বেজাল ছিল,,তারা খুব শান্তিতে আছে। এটাকি আপনারা মেনে নিবেন???
ওদের কি বিচার হওয়ার দরকার নাই??? এই লেখা গুলো লেখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,,কিন্তু কষ্ট হলে কারও কিছু আসবে যাবে না। আপনাদের ওপর এই বিচার ছেরে দিলাম, আর সবাই আমার পরিবার টাকে দেখে রাখবেন। আর আমি আজকে লাইভে ও আসলে আসতে পারি,,কারন সবাই সবার নিজ হাতে শাস্তি দিতে চায়।তাই সবার সামনে আমি আমাকে শেষ করে দিতে চাই,,,
দুপুর ১ টা ২২ মিনিটে ২য় স্ট্যাটাস- সবাই আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন, অনেকে আমাকে পাগলের মত খুজতাছেন। আর আপনাদের কষ্ট করতে হবে না। আজকে আমি আপনাদের মাঝে আসতাছি। সবাই প্রস্তুতি নেন,,কে আমাকে কি শাস্তি দিবেন। তবে হ্যা আমি আপনাদের মাঝে জীবিত পিরে আসতে পারব না। কারন আমার খুব কষ্ট হবে আপন মুখ গুলো আজ খুব অচেনা মনে হবে।তাই হয়ত। কারন আজ সবাই আমার ফাঁসি চাইয়। আমার কি দোষ চিল তা ঝাচাই করে কেউ দেখল না। আপসোস এটাই আমার কি আপরাধ ছিল??? যারা শাস্তি পাওয়া উচিত ছিল তারা খুব ভাল আছে, আর মাঝখানে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য উঠাপড়া লেগে আচে। কি চমৎকার আপনাদের বিবেক??? আজ একটা ভাল মানুষ চলে গেল এই সুন্দর পৃথিবী থেকে, আর দোষ পরল আমার উপর,,,সাইফুল কাকা কে আমি অনেক রেসপেক্ট করতাম।উনার সাথে আমার কোন দিন ২ ই কথা হয় নাই।আজ যাদের কারনে সাইুফল কাকা কে বিদায় দিতে হল,,,তাদের কিছু হল না।
আজ ২টা পরিবার কে যারা মেরে পেলার ষড়যন্ত্র করতাছে তারা চুপচাপ বশে আছে শুধু আপনাদের কাছে আমার একটা উওর জানা খুব দরকার কি কারন ছিল,,,এই ঘটনার পিছনে???আর সাইফুল কাকার পরিবারের কাছে একটা কথা জানার ছিল কেনো পএিকাতে মিথ্যা কথা বললেন,,,কোন বছর আমরা আপনাদের সাথে কোরবানি দিছিলাম???কেন এই মিথ্যা কথাটা বলেলেন???আমি আপনাদের কি ক্ষতি করছিলাম???যার শাস্তি আজ আমার জীবন দিয়ে দিতে হবে??? কি দোষ ছিল আমার???আমি তো খুব ভাল ছিলাম,কেনো আজ এমনা টা করতাছেন???আমি মরে গেলে কি আপনাদের সব কিছু পিরে পাবেন???আমি তো আপনার ভাই কে মারি নাই। যার কারনে মারা গেলো তাদের তো কিছুই বলেন না.,,,খুব ভাল মানুষ আপনারা।আপনার ভাইয়ের খুনি কে আপনারা খুন করবেন,,,কিন্তু একটাবার ও ভাব ছিলেন যে আসলে কাদের কারনে সাইফুল কাকা চলে গেলো???
দুপুর ১২ টা ৪২ মিনিটে ১ম স্ট্যাটাস- ঐওড….জনগণ আজকে আমি আপনাদের সাড়া পেতে চাই??? আজকে আমার বিচার আমি করব। শুধু আপনারা কষ্ট করে কমেন্ট করবেন। এবং আপনাদের মতামত দেখতে চাই। আমাকে কি শাস্তি দিতে হবে সেটা বলবেন অবশ্যয়ই।
The post ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও ছবি পোষ্ট দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2x6Cu96
October 01, 2017 at 10:42AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন