মেঘনায় ট্রলার চালক হত্যা; ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটক ৩

মেঘনা প্রতিনিধি ● মেঘনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নাটকীয় কায়দায় ট্রলার চালক সৎভাই আমির হোসেনকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে হত্যার পর লাশ ঘুম করে খুনসহ একাধিক মামলার আসামী দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু ডাকাত। গত ১৫ অক্টোবর রবিবার রাতে উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আমির হোসেন (৪৫) উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের মৃত হানিফ ছেলে।

অনেক খোঁজা-খুঁজির ৩৬ঘন্টা পর মঙ্গলবার সকালে চালিভাংগা চালিভাংগা বাশ বাজার খালের ইউনিয়নের ইসলামাবাদ এলাকায় নিহত আমির হোসেনের লাশ ভেসে উঠলে থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মুরশেদা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামী করে মেঘনা থানায় মামলা নং ৩/ তাং ১৭.১০.১৭ইং দায়ের করা হয়। নিহত আমির হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে ইব্রাহিম বাবার সাথে কৃষিকাজ ও ট্রলার চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় স্কুলে ৫ম শ্রেনীতে এবং মেয়ে সুমাইয়া একই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পরে এবং ছোট ছেলে এখানো বুঝেই না তার বাবা কোথায় আছে?

এদিকে ঘটনার হোতা দেলোয়ার হোসেন আব্দুল লতিফ চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন মিলে হত্যাকান্ডটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষে বুধবার সকালে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারের নিকট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে যায়। সেখানে তাদের কথা বার্তায় গড়মিল দেখে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে বলে জানায় পুলিশ।

বুধবার দুপুরে কুমিল্লা পুলিশের হাতে আব্দুল লতিফ চেয়ারম্যান ও দেলোয়ারসহ ৩জন আটকের খবর পেয়ে উল্লাসে চালিভাঙ্গা বাজারে দেলোয়ার হোসেন ও লতিফ চেয়ারম্যানসহ জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ।

মানববন্ধনে এলাকাবাসী জানায়, দেলোয়ার একজন পেশাদার ডাকাত ও খুনি। তার অত্যাচারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না। ঘৃণ্য এমন কোন কাজ নেই যা সে করতে পারেনা। আর এ সব কিছুই করে চালিভাংগা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের শেল্টারে এমন অভিযোগ এখন চালিভাংগার প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে।

তবে এ যাত্রায় দেলু ডাকাত আইনের ফাঁক-ফোঁকড়ে বেড়িয়ে আসলে চালিভাঙ্গা এক ভয়ঙ্কর নগরীতে পরিনত হবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এসব অঞ্চলের সাধারন মানুষ। তারা বলেন, সে একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। তার বাবা হানিফকে খুন করে আমির হোসেনকে প্রায়ই হুমকিতে রাখতো। ভয়ে নিজের স্ত্রীকে পর্যন্ত অনেক ঘটনা বলতে চাইতো না আমির হোসেন।

এলাকাবাসী সুত্রে আরো জানা যায়, উপজেলার চালিভাংঙ্গা গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে আমির হোসেন ৫ বছর বয়সে মাকে হারায়। এরপর সৎ মায়ের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হলে বাবা হানিফ মিয়া পাশের ইসলামাবাদ গ্রামের মনসুর মিয়ার পরিবারে পালক (দত্তক) দিয়ে দেয় এবং এখানেই সাতবোনের আদরে বেড়ে উঠে আমির হোসেন। পালিত বাবার অভাবের সংসারে সাতবোনকে নিয়ে গরু-বাছুর, কৃষিকাজ ও ট্রলার চালিয়ে জীবন কাটাতো। এরই মধ্যে আপন পিতার সংসারে এসে সেখানে পিতার জমির অংশ ও নিজে ক্রয় করে জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্বকে পুঁজি করেই ভাইকে হত্যার ছক করে দেলু ডাকাত। এরই সুবাধে গত ১৫ অক্টোবর রোববার রাতে আমির হোসেনকে মোবাইলে ফোন করে পাশের আড়াই হাজার উপজেলার বৈদ্ধ্যার বাজারে ডেকে নেয়। এরপর রাত ১০টার দিকে “বাচাঁও বাচাঁও বলে ইসলামাবাদ পাগাড়ি বাড়ি হযরত আলীর ওঠানে এসে দেলোয়ার হোসেন ‘বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিয়ে পড়ে যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ স্পীড বোট দিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে এবং দেলোয়ারকে চিকিৎসার নাম করে সাথে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তবে আমির হোসেন সম্পর্কে তারা কেউ কিছু বলেনি। পরে অনেক খোঁজা-খোঁজির দুই দিন পর মঙ্গলবার আমির হোসেনের ল্শা পাওয়া যায় ওই খাল থেকে।

সূত্র জানায়, উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বন্ধ চলে আসছে। এরই ফলে গত কয়েক বছরে এখানে একাধিক হত্যাকান্ডসহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর সহজ সরল ট্রলার চালক আমির হোসেনকে নাটকীয় কায়দায় হত্যা করা হয়। এর আগে গত ২০১২ সালের দিকে একই কায়দায় আমির হোসেনের পিতা হানিফ মিয়াকেও হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ফাঁসিয়েছিলো। পরে ৩০ লক্ষাধিক টাকায় রফা করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানায়, হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার তালিকাভূক্ত আসামী দেলু ডাকাত এর আগে কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরা পরলেও আইনের ফাঁকÑফোঁকর দিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। তারা দেলু ও তার মদদ দাতাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানায়।

আটকের আগে আব্দুল লতিফ চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে বলেন, ওই রাতে অজ্ঞান অবস্থায় দেলাকে আমি ঢাকা নিয়ে যাই, জ্ঞ্যান ফেরার পর দেলা আমাকে বলে যে, ‘কে-বা কারা তাকে হত্যার চেষ্ঠা করে। কিন্তু আমির হোসেনকে মেরে নদীতে ফেলে দেয়। আর সে (দেলোয়ার) কোন রকমে প্রানে বেচেঁছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে মামলা করবো।

আমীর হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম বলেন, দেলা চাচাকে বৈদ্যার বাজার থেকে নিয়ে আসার জন্য মোবাইলে দেয়। তখন বাবা আমাকে বলে তুই বাড়ীতে চলে-যা আমি পরে আসব, আর-তোর চাচা যে ফোন করেছে একথা কাউকে বলিস না; এমনকি তোর মাকেও না।

সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, আমীর হোসেন এলাকার নিরীহ ছেলে, দেড় বছর বয়সে মাকে হারানোর পর সৎ মায়ের যন্ত্রনায় তার বাবা অন্যত্র তাকে দত্তক (পালক) দিয়ে দেন। বড় হয়ে বিয়ে করার পর নিজ বাড়ীতে চলে আসেন আমীর হোসেন। তিনি এই হত্যকান্ডে এলাকার নিরীহ নিরপরাধ লোক যেন হয়রানীর শিকার না হয় এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করার দাবি জানান।

এ বিষয়ে এএসপি সার্কেল (হোমনা-মেঘনা) মো. সাইফুর রহমান আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ট্রলার চালক আমির হোসেন হত্যায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে নিহতের স্ত্রী মেঘনা থানায় মামলা দায়ের করা করেছে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের ভাই দেলোয়ার, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ ও মানিককে আটক করা হয়েছে। তবে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

The post মেঘনায় ট্রলার চালক হত্যা; ইউপি চেয়ারম্যানসহ আটক ৩ appeared first on Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা.



from Comillar Barta | দেশ সেরা আঞ্চলিক অনলাইন পত্রিকা http://ift.tt/2innphH

October 19, 2017 at 03:18PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top