জিপিএ ৫ পাওয়া আপেল দেড় বছর ধরে শিকলে বাঁধা!

প্রিয়.কম ● আপেল মিয়া। বয়স ১৩। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিও হয়েছিল। এ সময় তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে গত দেড় বছর ধরে তাকে ঘরের মধ্যে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় গ্রামে নানা আব্দুল আজিজের বাড়িতে মা আঞ্জুয়ারা বেগম (৩৩) আপেলকে নিয়ে বসবাস করেন।

সাত বছর আগে আঞ্জুয়ারা স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন। কারণ আপেলের বাবা আকমল হোসেন অন্য আরেকটি বিয়ে করে নতুন করে সংসার শুরু করেন।

একমাত্র ছেলের করুণ অবস্থা দেখতে দেখতে মা আঞ্জুয়ারাও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। তার চলাফেরা ও কথাবার্তায় অসংগতি পাওয়া যায়। ফলে তার সঙ্গে কথা বলেও কোনো উত্তর মেলেনি। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন।

নানি কোহিনুর বেগম (৬০) বলেন, ‘অসুস্থ নাতিকে কবিরাজি চিকিৎসা করা হয়। রংপুরের বড় ডাক্তারের কাছেও নেওয়া হয়েছিল। ডাক্তাররা কয় ৫০ হাজার ট্যাহা খরচ করলে ও ভালো হবো। কিন্তু অত ট্যাহা তো আমগর নাই। তাই চিকিৎসা করা হয়নি।’

কোহিনুর বেগম জানান, আপেল একজন মেধাবি ছাত্র। প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ ৫ পাওয়ার পর কুটিরচর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। একদিন স্কুলের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু বাড়ি ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

কিন্তু চলাফেরা ও কথাবার্তায় অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। পরে আবার বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার তিন দিন পর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ি বাজার থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়।

রাতে ঘর থেকে হঠাৎ করে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে দিন ও রাতে শিকলে আটকে রাখা হয় তাকে। গত দেড় বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। কোহিনুর বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ১৫ বছর আগে মেয়ে আঞ্জুয়ারা বেগমকে বিয়ে দেওয়া হয় রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার আকমাল হোসেনের সঙ্গে।

বিয়ের প্রথম কয়েক বছর ভালোই কাটছিল সংসার। হঠাৎ করে ছেলে আর বউকে ফেলে রেখে আরেকটি বিয়ে করে আকমল। বিয়ের পর তাড়িয়ে দিলে তারা এসে ওঠে আমার বাড়িতে। এদিকে আমার স্বামী আব্দুল আজিজও ঢাকায় আরেকটি বিয়ে করে ঘর-সংসার করছে। মানুষের বাড়িতে কাজ করে, সেলাই মেশিনে কাজ করে খাবার জোগাড় করি।

বন্দবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবীর হোসেন বলেন, ‘পরিবারটির অবস্থা খুবই করুণ। এর মধ্যে ওই মেধাবি ছেলেটি হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। আমি চেষ্টা করি সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। ভিজিডি সুবিধার আওতায় তাদের একটি নাম দেওয়া হয়েছে। ’

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, ‘আমাদের কাছে ওই রোগী আসেনি। এ অবস্থায় শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা মানসিক রোগীদের শিকলে বেঁধে ঘরে আটকে রাখলে সমস্যা আরো বাড়বে।’

The post জিপিএ ৫ পাওয়া আপেল দেড় বছর ধরে শিকলে বাঁধা! appeared first on Comillar Barta.



from Comillar Barta http://ift.tt/2wGlkjg

October 08, 2017 at 11:42PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top