প্রিয়.কম ● ‘বিকারগ্রস্থ’ রাশিয়ান মনোবিজ্ঞানী ফিলিপ বুদেকিন উদ্ভাবিত প্রাণঘাতী খেলা ‘ব্লু হোয়েল’ বা নীল তিমি আতঙ্ক ছড়ানোর পর তার দেখা পাওয়া গেছে বাংলাদেশেও। এরইমধ্যে অন্তত দুই আসক্তের খোঁজ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এর একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অপরজন রাজধানীর মিরপুরের এক স্কুলশিক্ষার্থী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই গেম বিষয়ে সতর্কবার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি খেলার আগ্রহও গোপন রাখছেন না অনেক তরুণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চ্যালেঞ্জের প্রতি তরুণদের আসক্তিকে ভর করে নির্মিত এই খেলার বিষয়ে সচেতনতার পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও তৎপরতা জরুরি।
নিজ দেশে ১৬ তরুণকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার পর গ্রেফতার করা হয় ফিলিপকে। স্বীকারোক্তিতে তিনি জানিয়েছিলেন, সমাজের জন্য ‘অপ্রয়োজনীয়’ মানুষদের শেষ করে দিতেই ২০১৩ সালে এই খেলা নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম প্রিয়.কমকে বলেন, তরুণরা স্বাভাবিকভাবেই অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়। তারা উত্তেজনা চায়। যেকোনো বিপদজনক বিষয়কেও লুফে নিতে চায় তারা। আর এটাকেই ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে ব্লু হোয়েল গেম।
দিনকয়েক আগেই ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত এক কিশোরের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। এ বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন আগে এক কিশোরকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন তার খালা। তার সন্দেহ ছেলেটি ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত।’
‘কিশোরটির সঙ্গে কথা বলার পর মনে হলো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হলো তাকে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সেই ছেলেটি আবারও অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। তখন তাকে আবারও নিয়ে আসা হয়। এবারে তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’ বলেন তিনি।
ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, সতর্কভাবে ছেলেটিকে নজর রাখা হয়েছিল বলেই তাকে সনাক্ত করা গেছে। অভিভাবকেরা সচেতন ছিলেন বলেই হয়তো তার প্রাণ রক্ষা করা গেছে।
তিনি বলেন, যেকোনো পুরস্কার তরুণদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমে উদ্দীপনা জাগায়। আর তাতে সাড়া দিয়েই চ্যালেঞ্জের প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠে তরুণরা।
‘মাদকের নেশার মতোই চ্যালেঞ্জের নেশা পেয়ে বসে তাকে’ এমন মন্তব্য করে ডা. তাজুল বলেন, ‘বন্ধুদের চাপও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে’।
তাহলে সন্তাদের এই আসক্তি রুখতে অভিভাবকদের করণীয় কী হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, ‘সন্তানদের তদারকি আর সময় দেওয়ার কেনো বিকল্প নেই’।
তিনি জানান, মাদকের নেশা ছাড়াতে যেমন কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা দরকার, ঠিক একইরকমভাবে এই ধরনের গেমের আসক্তি দূর করতেও চিকিৎসা দরকার। তবে সবার আগে দরকার ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে তা সনাক্ত করবার।
বিনোদনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার বা প্রযুক্তিগত নানান কাজে তরুণ আগ্রহী হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন। তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, ‘এমনিতেই তরুণদের বিনোদনের জায়গা সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে ইন্টারনেটে আসক্তি বেড়েছে।’
প্রযুক্তি অগ্রগতিকে আটকে রাখা যাবে না বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রযুক্তি সচেতনতা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ইন্টারনেট নৈতিকতা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে তার ফলাফল দীর্ঘ মেয়াদে পাওয়া যাবে।’
মরণফাঁদ ‘ব্লু হোয়েল’ গেমে মোট ৫০টি ধাপ রয়েছে। যার সর্বশেষ ধাপ মৃত্যু। ধাপগুলোতে আছে হাত পা কাটার মতো বিপজ্জনক কাজ। শুধু কাজ করলেই হয় না। উপযুক্ত প্রমাণ হিসেবে ছবিও তুলতে হয়। তবেই চ্যালেঞ্জ পূর্ণ হয়েছে বলে ধরা হবে। এই গেমের শেষ ধাপে আত্মহত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি ঢাকার হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের ফাঁদে পড়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে সন্দেহ করতে থাকেন অনেকে। সামাজিকমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হয়। এরপরই ‘ব্লু হোয়েল’ গেমটির বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
The post ‘ব্লু হোয়েল’ খেলায় আসক্তি রোধে করণীয় কী appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2z6hv7Y
October 13, 2017 at 07:37PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন