কুমিল্লার বার্তা ডেস্ক ● মোগল শাসন বাংলার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। শাহ সুজা ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিল বাংলার সুবেদার। স্থাপত্যের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসার জন্য শাহজাহানের খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া। তাজমহলের মতো আশ্চর্য সৌন্দর্যপূর্ণ স্থাপনাও এই শাহজাহান শাসন আমলে। পিতার এই স্থাপত্য প্রেমের নমুনা পুত্রের মধ্যে বিরাজমান ছিল। তারই নমুনা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের বড় কাটরা থেকে শুরু হয়ে ধানমণ্ডি ঈদগাহ হয়ে সুদূর কুমিল্লা গোমতী তীরের শাহ সুজা মসজিদ পর্যন্ত।
৪০০ বছরেরও বেশি বয়সী এই প্রাচীন শাহ সুজা মসজিদ কুমিল্লা শহরের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ হিসেবে খ্যাত। এই মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে দুই ধরনের সূত্র পাওয়া যায়। প্রথমত, সুজা ত্রিপুরা জয় করে জয়ের এই মহান স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য এই মসজিদ নির্মাণ করেন। আর দ্বিতীয়ত, মহারাজ গোবিন্দ্র মানিক্য সুজার নাম চিরস্মরণীয় করার জন্য নিমচা তরবারি ও হিরকাঙ্গুরীয়ের বিনিময়ে বহু অর্থ ব্যয় করে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। দ্বিতীয়টির থেকে প্রথমটিই বেশি সত্য বলে ধারণা করা হয় এবং যৌক্তিকতাও বেশি।
মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৭.৬৮ মিটার ও প্রস্থ ৮.৫৩ মিটার এবং দেয়ালের পুরুত্ব ১.৭৫ মিটার। মসজিদটির চার কোণায় অষ্টকোণাকার বুরুজ আছে। যেগুলো কার্নিসের বেশ ওপরে এবং এর শীর্ষে ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের পূর্ব প্রাচীরে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ প্রাচীরে একটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদটি প্রধান প্রবেশদ্বার অপেক্ষাকৃত বড় এবং অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। প্রবেশদ্বারের উভয় পাশে ও ওপরে প্যানেলে নকশা অলঙ্কৃত করা। কিবলা প্রাচীরের তিনটা মিহরাব, কেন্দ্রটি অপেক্ষাকৃত অধিকতর সুন্দর ও আকর্ষণীয়। এটি ফুল লতাপাতা ও জ্যামিতিক নকশায় শোভিত।
অষ্টাকোণার ড্রামের ওপর নির্মিত তিনটি গোলাকার গম্বুজ দিয়ে মসজিদের ছাদ নির্মিত। গম্বুজগুলোর শীর্ষদেশ পদ্ম নকশা ও কলসচূড়া দিয়ে সজ্জিত। মসজিদের কার্নিসের নিচের অংশ মারলোন নকশায় অলঙ্কৃত। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষমতাবান ব্যক্তি মসজিদটির সংস্কার ও সম্প্রসারণ কার্য সম্পাদিত হয়েছে। ১৮৮২ সালে হাজী ইমামউদ্দিন ৭.৩৫ মিটার প্রস্থের সমতল ছাদবিশিষ্ট বারান্দা নির্মাণ করেন। কিছু সময় পরে আর সম্প্রসারিত ও দুই পাশের মিনার নির্মাণ করা হয়।
এ মসজিদের ব্যাহ্যিক কারুকার্য মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি তখনকার সময়ের প্রতিষ্ঠাতাদের সুবিশাল আনুগত্য ও রুচির পরিচয় বহন করে। বর্তমানে মসজিদের দুই প্রান্তে ২২ ফুট করে দু’টি কক্ষ ও সামনে ২৪ ফুট প্রশস্ত একটি বারান্দা রয়েছে।
The post প্রাচীন সভ্যতার অপূর্ব নিদর্শন কুমিল্লার শাহ সুজা মসজিদ appeared first on Comillar Barta.
from Comillar Barta http://ift.tt/2x77tC0
October 01, 2017 at 10:53AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন