মিয়ানমারের রাখাইনকে মুসলমান মুক্ত ঘোষণা !

সুরমা টাইমস ডেস্ক:: সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে মুসলমানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে!রাজ্যের পুড়িয়ে দেয়া বহু গ্রামের প্রবেশপথে এখন দেখা মিলছে কিছু অদ্ভূত ধরনের সাইনবোর্ডের। যে সাইনবোর্ডগুলোতে বার্মিজ ভাষায় বড় বড় অক্ষরে লিখা রয়েছে, ‘মুসলমানমুক্ত এলাকা’। সঙ্গে লিখা আছে আরও নানা মুসলিমবিদ্বেষী কথাবার্তা।

শুধু রাখাইন নয়, মুসলিম অধ্যুষিত মিয়ানমারের অন্যান্য এলাকায়ও এমন সাইনবোর্ডের দেখা মিলছে। এ রকম ২১টি সাইনবোর্ডের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করেছে মিয়ানমারের মানবাধিকার সংগঠন বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক (বিএইচআরএন)। সংস্থাটির সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আর এ ধরনের মুসলিমবিদ্বেষী সাইনবোর্ডের সংখ্যা দেশটিতে দিন দিন বেড়েই চলেছে বলেও যেখানে রিপোর্ট বলা হয়েছে।

মিয়ানমারের উত্তর মংডু এলাকার স্থলসীমান্তে দেশটির সেনাবাহিনী মাইন পুঁতে রাখছে। এতে উত্তর মংডু দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না। স্থলমাইন বিস্ফোরণে ইতোমধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তাই বিকল্প পথ হিসেবে এখন দক্ষিণ মংডু এলাকার নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) মনে করছে, সহিংসতা শুরু হওয়ার পর গত ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ ৭ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে আইওএম’র পর্যবেক্ষণে রয়েছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ। এছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র অধীনে ৩৫ হাজার ও পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় আরও ১৮ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন।
গেল ২৫শে আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা জ্বালাও-পোড়াও ও গণহত্যার মুখে সীমান্ত ও সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। তুলনামূলকভাবে সংখ্যা কমলেও এখনও বন্ধ হয়নি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। বরং সীমান্ত পরিবর্তন করে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন আসছেই। এতে সীমান্ত এলাকার লোকজনের মনে প্রশ্ন জেগেছে, আর কত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করবে। কারণ বিপুল রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবন এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার প্রায় ১ মাস ১০ দিন পার হলেও রোহিঙ্গারা দলে দলে অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। কখনও অনুপ্রবেশের সংখ্যা বেড়ে যায়, কখনও কমে। কমলে ধারণা করা হয়, রোহিঙ্গা স্রোত বন্ধ হয়েছে। গত দু’দিনও দেখা গেছে দলে দলে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে।

স্থানীয় অধিবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্রমতে, টেকনাফ পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড মসজিদের পাশের এলাকায় প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ জড়ো হচ্ছেন। এসব রোহিঙ্গাদের স্থানীয়ভাবে খাদ্য, টাকা ও গাড়ির ব্যবস্থা করে নির্ধারিত শরণার্থী শিবিরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব কাজে সার্বিক তদারকি করছে পুলিশের একটি টিম। এদিকে রাতের আঁধারে টেকনাফের নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া ও নাজিরপাড়া এলাকার নাফ নদী সীমান্ত দিয়েও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে বলেও স্থানীয়রা দাবি করেছেন।

রাখাইন রাজ্যে হত্যা, বর্বরতা ও বাড়িঘরে আগুন থেকে রক্ষা পেতে এখনও প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত সাগরপথে ট্রলার এবং নৌকায় রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে ঢুকছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন। পরে সকাল থেকে নৌকা এবং পায়ে হেঁটে তাদের সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালী সেনাবাহিনীর অস্থায়ী শিবিরে জড়ো করা হয়।

এদিকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে ও তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে সরকারসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মহল জোর দাবি জানিয়ে আসছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ ব্যাপারে সোচ্চার। রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে বহির্বিশ্ব থেকে ইতোমধ্যে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে মিয়ানমারের উপর।



from Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/2yoREvr

October 04, 2017 at 10:22PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top