মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: পরিবারের বড় মেয়ে রুবাইয়া রহমান রুবিনা। ছোটবেলা থেকেই দু:খ কষ্টে বড় হয়েছেন। মা, ২ বোন ও ১ ভাইকে নিয়ে জীবন পরিচালনার জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে অনেক দিন। খেয়ে না খেয়ে পরিবারকে সুখে রাখতে মাথার খাম পায়ে ফেলতে হয়েছে তাকে। দরিদ্রতার করালগ্রাসে নিমজ্জিত রুবিনা পরিবারের সদস্যরা যে দিকে থাকান সেই দিকটাই তাদের কাছে অন্ধকার।
এসবের মধ্যদিয়ে পরিবারের হাল ধরেন রুবাইয়া রহমান রুবিনা। প্রথমে তিনি সেলাই মেশিন কিনে কাজ শুরু করেন। দর্জির কাজে যা আয় হয় সেই আয় দিয়েই কোন মতে চলে সংসার। এভাবে বেশ কিছু দিন চলার পর ছোট ভাই রুবেল আহমদের পরামর্শে কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে তিনি স্বপ্ল পুঁজি নিয়ে গড়ে তুলের সোনালী মোরগী খামার। ফার্মে দিনরাত পরিশ্রম করে কিছু আয়ের সন্ধান পান। ওই আয় দিয়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে রুবিনা তার নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেন মোরগী, হাঁস, মাছ, কবুতর, দেশী মোরগ ও পাখির ফার্ম। এছাড়া পেয়ারা, পেঁপেঁ, বিভিন্ন ধরনের সবজি বাগান গড়ে তুলেন। বর্তমানে তার খামার গুলোতে ১২ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়। প্রতিদিন ওই ১২ শ্রমিককে ২৫০টাকা বেতনে তারা কাজ করেন।
নাটোর জেলার সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের মৃত: আব্দুর রহমান ও রুকিয়া বেগম দম্পতির বড় মেয়ে রুবাইয়া রহমান রুবিনা আজ সফলতার মুখ দেখেছেন। তিনি পরিশ্রম করে একজন সুখী নারী হিসেবে নিজেকে পরিণত করেছেন। তার সফলতা দেখে অনেন নারী কৃষি কাজে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় নাটোর সদর উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আকতার হোসেন এর পরাপর্শে প্রতি খামার করে রুবিনা লাভবান হয়েছেন।
জানাগেছে, রুবিনার বাবা মারা যান ১২ বছর পূর্বে। তার বাবা মারা যাওয়ার পরে গোঠা পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয় পরিবারের বড় মেয়েকে। দরিদ্র ওই পরিবারের দায়িত্ব নেয়া যে কত কষ্টকর ব্যাপার সেই বিষটা অনেকেই অনুভব করার কথা।
দারিদ্রতার কারণে নাটোর সিটি কলেজ থেকে বিএসএস পড়ালেখা সম্পন্ন করতে পারেননি। দারিদ্রতার কারণে বিয়ে হওয়ার কিছু দিন পর বাবার বাড়ি চলে আসতে হয়েছে ওই নারীকে। কোনভাবেই স্বামী তাকে দারিদ্রতার কারণে মেনে নিতে পারেনি। মেয়েটি কোন উপায় খুঁজে না পাওয়ায় চলে আসেন বাবার বাড়িতে। বাবার বাড়িতে এসে ৬ সদস্যের দায়িত্ব কাঁদে নিতে হয়। সীমাহিন কষ্টে চলতে থাকে ওই পরিবার। সংগ্রামী জীবন চলতে থাকে রুবিনা খাতুন নামের ওই নারীর।
এ ব্যাপারে রুবাইয়া রহমান রুবিনা বলেন, পরিশ্রম করলে জীবনে সফলতা আসে তার বাস্তব প্রমাণ নিজেই। অনেক দিন দরিদ্রতার কারণে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়েছে আমার পরিবারকে।
জীবনযুদ্ধে আজ আমি একজন সফল নারী হয়েছি পরিশ্রম করে। তিনি বলেন, কৃষি কাজে সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এতদূর এগিয়ে আসতে পেরেছি। বর্তমানে আমি প্রতি মাসে ৩৫-৪০হাজার টাকা আয় করতে পারছি। রুবিনা তার কৃষি কাজের সফলতার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন।
আনিছুর রহমান বলেন, রুবিনা আপা বাগান করায় আমার কর্মস্থল হয়েছে। তিনি কাজ করে প্রতিদিন ২৫০ টাকা বেতন পান বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মেহেদুল ইসলাম বলেন, কর্মস্থলে নতুন যোগদান করেছি। তবে শুনেছি রুবিনা একজন পরিশ্রমী নারী। পরিশ্রমী যে কোন মানুষ সফলতা অর্জন করতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার আকতার হোসেন বলেন, দরিদ্রতাকে পেছনে ফেলতে রুবাইয়া রহমান রুবিন কে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আজ তিনি সফল একজন নারী।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2iaAbQx
October 13, 2017 at 09:38PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন