মুম্বাই, ০৫ অক্টোবর- বলিউড এখন আর ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এশিয়া অঞ্চল ছেড়ে ক্রমশ পাশ্চাত্যে পসার গাড়তে বসা বলিউডি ছবির কদর দিন দিন বাড়ছে। হলিউডি ছবির দাপটকে অনেকাংশেই থামিয়ে দিয়েছে বলিউড। তবে বিশ্বের কোনো দেশের চলচ্চিত্রেই কখনো নারীদের প্রাধান্য ছিল না, এখনো নেই। হলিউড, বলিউড যেখানকার চলচ্চিত্রের কথাই বলা হোক না কেন, সেখানেই হিরোদের নিয়ে নাচানাচি। দর্শক সব সময়ই ছবির নায়কের বীরত্ব দেখতে পছন্দ করে। নিকট অতীত থেকে হিসাব করলে বলা চলে খানদের কথা। আর খানরা বললেও পরিষ্কার করে বলা হয় না, বলতে হয় খানত্রয়। শাহরুখ, সালমান ও আমির এই তিন খান মিলেই প্রায় দুই দশক ধরে বলিউড শাসন করছেন শক্ত হাতে। খানদের শুরু এবং... সালমান খান ও আমির খান বলিউডে পা রেখেছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। তাদের রক্তে অভিনয়ের ধারা। আর শাহরুখ খানকে বলিউডে ঢোকার টিকিট পেতে বিস্তর ঘাম ঝরাতে হয়। সে জন্যই বোধ হয় আপাতদৃষ্টিতে তিন খানের মধ্যে শাহরুখ খানকেই বেশি সফল মনে হয়। যা-ই হোক, সালমান বলিউডে পা রাখার আগে এমন সুদর্শন যুবকের আগমন সেখানে কমই ঘটেছে। আর শুরু থেকেই সালমান সময়ের জনপ্রিয় সব নায়িকাকে সাথে নিয়ে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন। সালমান খানের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে এখনো বলিউডে সমালোচনা হয়। তার অভিনয় অনেক নির্মাতারই মন ভরাতে পারে না। তার পরও দুই দশক ধরে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হয়ে আছেন তিনি। কিভাবে সম্ভব সেটা? সালমান তার অভিনয়ের প্রতি যতটা না অনুরক্ত তার চেয়ে বেশি প্রেম-ভালোবাসার প্রতি। পর্দার বাইরে সব সময়ই তিনি আলোচিত হয়ে আসছেন তার প্রেমিকোচিত মনোভাবের কারণে। গত কয়েক বছরের সালমানচরিত বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঐশ্বরিয়ার প্রেমে ফিদা সালমান অ্যাশের কাছ থেকে যখন প্রত্যাখ্যাত হতে চলেছেন, তখনই জুটিয়ে ফেলেন ক্যাটরিনাকে। ক্যাটকে নিয়েও কম কীর্তি তিনি উপহার দেননি। যা-ই হোক ব্যক্তিগত এসব কারণেই ভক্তদের মনে সব সময়ই আলোচনায় থাকেন তিনি। বর্তমানে সালমানের বয়স প্রায় পঞ্চাশ। এই বয়সেও হাঁটুর বয়সী নায়িকাদের সাথে দুরন্ত নাচানাচি করে চলেছেন। উঠতি যেকোনো নায়কের চেয়ে এখনো সুদর্শন তিনি। এখনো তার শারীরিক ফিটনেস হালের ঋত্মিককেও হার মানায়। ফলে দর্শক-ভক্তদের কাছে কখনোই মনে হয় না সালমানের বয়স হয়েছে। নিয়মিত ছবিতে গাইছেন, নাচছেন এবং দর্শকদের মন জুগিয়ে বলিউডে নিজেকে অপরিহার্য করে রেখেছেন। আমির খানকে বলা হয়ে থাকে মিস্টার পারফেকশনিস্ট। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির কোনো নায়ক বলিউডের মতো জায়গায় এতটা সাফল্যের সাথে ক্যারিয়ার পার করতে পারবেন, সেটা হয়তো আমির খান নিজেও কখনো ভাবেননি। চাচা গুলজারের আশীর্বাদপুষ্ট হিসেবেই বলিউডে যাত্রা শুরু আমিরের। ক্রমেই নিজেকে বলিউডের অপরিহার্যদের তালিকায় শীর্ষে নিয়ে এসেছেন। এখন আমিরের বিপরীতে পুরো একটা ইন্ডাস্ট্রিই বলা চলে। সেই শুরু থেকেই আমির খুঁতখুঁতে। কোনো কাজই একশ ভাগ না হলে তার মন ভরে না। এ জন্যই হয়তো সাফল্য সব সময়ই তার মুঠোই ধরা দিতে বাধ্য হয়েছে। তিনি অভিনয় করেনও খুব কম। বছরে কিংবা দুই বছরে একটা ছবিতে দেখা যায় তাকে। তবে প্রতিটি ছবিতেই নিজেকে একশ ভাগ পরিপূর্ণ করে মেলে ধরেন। ফলে ব্যর্থতার বাতাস তার ধার ঘেঁষতে পারে না সহজে। আর এভাবেই দুই দশক ধরে ভারতীয় দর্শকদের হৃদয়ের মণি হয়ে আছেন তিনি। শাহরুখ খানের বলিউডে উত্থানের গল্প শুনলে অনায়াসেই বলে দেয়া যায়, এত সংগ্রামের ফসল বিফলে যেতে পারে না বলেই তিনি সুপারস্টার। সত্যিকারের সুপারস্টারের ইমেজ নিয়ে পর্দা এবং পর্দার বাইরে দুই জায়গায়ই শাহরুখের সমান পদচারণা। মামুলি এক টেলিভিশন সিরিয়ালের গুরুত্বহীন অভিনেতা হিসেবে শুরু করেন তিনি। নিজের মেধা ও মননের সাহায্যে আজ নিজেকে কিং খান রূপে প্রতিভাত করতে পেরেছেন। তার এই অর্জন অবশ্যই পুরোটাই নিজের কৃতিত্ব। কেননা, বলিউডে এমন অবস্থান থেকে উঠে এসে শীর্ষস্থানটি দখল করার নজির খুব একটা নেই। শাহরুখও আজ নিজেকে একটা ইন্ডাস্ট্রি রূপে তৈরি করে ফেলেছেন। বলিউডে তার অপরিহার্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই এক দশক ধরেই। খানদের সম্পর্ক পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই মানুষে মানুষে বৈরিতার সৃষ্টি হয়েছে। কখনো সেটা আপনজনের সাথে, কখনো দূরের মানুষের সাথেও। সুতরাং বলিউডে খানদের মধ্যেও যে বৈরিতা থাকবে, সেটাও স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ধরেই শাহরুখ, সালমান ও আমির পরস্পরের বন্ধু হিসেবে বলিউডে পরিচিত ছিল। কিন্তু নিকট অতীতের কিছু দৃষ্টান্ত সেই বন্ধুত্বের প্রমাণ দেয় না। রগচটা সালমানের সাথে ঝামেলা হয়নি এমন বলিউড-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কমই রয়েছেন। সেটার ধারাবাহিকতায় শাহরুখের সাথেও কিছু দিন আগে এক বিতর্কের মহড়া হয়ে গেল। দুজনে হাতাহাতির পর্যায়েও পৌঁছে গিয়েছিলেন। শাহরুখের সাথে আমিরেরও কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয় কিছু দিন আগে। তবে সেসবের এক যৌক্তিক জবাব দিয়েছেন সম্প্রতি শাহরুখ খান। তিনি বলেছেন, প্রতিটি পরিবারেই হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ থাকে। পরিবারে অনেক সময়েই সম্পর্কের ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে। তখন আপনজনের সাথেও ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে। একে অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবে আপনজনের সুখ-দুঃখে আপনজনই বেশি আবেগাপ্লুত হয়। আমাদের বলিউডও একটা পরিবার। এখানেও সম্পর্কের টানাপড়েন হতে পারে। সেটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। সময়ই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে সময়ই সব কিছুকে স্বাভাবিক করে তুলতেও সাহায্য করে। বলিউডে খানদের সাফল্যও অনেক সময় ভিন্নমতাবলম্বীদের হিংসাত্মক করে তোলে। ফলে সেসব মতাবলম্বীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে সব সময়। তেমনই কিছু সুযোগের ব্যবহারে মাঝে মধ্যেই খানদের সম্পর্কের ভিত নড়ে ওঠে। তাতে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, খানদের ঐক্য নেই। সাফল্যের বিচারে খানত্রয় একটা জরিপে দেখা গেছে, গত দুই দশকে বলিউডে নির্মিত বাণিজ্যিকভাবে সফল ছবির অর্ধেকই এই তিন খান সাহেবের অভিনীত ছবি থেকে এসেছে। আর চলতি দশকের হিসাবে আরো বেশি। প্রায় ৬৫ শতাংশ। এ থেকেই বোঝা যায় পুরো বলিউডে কেমন আধিপত্য বিস্তার করে আছেন এই তিন খান। খানদের সাফল্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল আমিরকে। এক ফিল্ম জার্নালিস্ট তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আর কত দিন খানদের এমন জয়জয়কার চলবে? আমিরের উত্তর ছিল, কমপক্ষে আরো দশ বছর। এবং এও বলেছিলেন, আমরা এই তিন খান দশ বছর পর হয়তো আর নায়ক হিসেবে অভিনয় করতে পারব না, তবে খানদের যে আধিপত্য এখানে সৃষ্টি হয়েছে সেটা বলিউডে চলতে থাকবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বয়সের কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই খানরা নায়ক হিসেবে আর অভিনয় করতে পারবেন না। তবে এর মধ্যেই সবাই বলিউডে ব্যবসায়-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শাহরুখ, সালমান ও আমির এদের প্রত্যেকেই চলচ্চিত্র প্রযোজনায় নেমেছেন এবং শুরু থেকেই সফল হয়েছেন। ফলে ব্যবসায়িকভাবে তাদের পাকা আসন বলিউডে থাকছেই। এর বাইরে পরিচালনা, উত্তরাধিকার সৃষ্টি এসব তো রয়েছেই। অবশ্যই পরিচালনা এবং উত্তরাধিকার সৃষ্টির নমুনা আমির খান ইতোমধ্যে দেখিয়ে দিয়েছেন। তারে জামিন পার নির্মাণ করে চমক লাগিয়ে দিয়েছেন বলিউড-বোদ্ধাদের। ভাতিজা ইমরান খানকে সুপারহিট নায়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কৃতিত্বও তার। অন্য দিকে শাহরুখ ও সালমান উভয়েই প্রযোজনার সাথে যুক্ত হয়েছেন আগেই। তাদের প্রযোজিত ছবি বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ায় এটাও বোঝা যায় যে, খানদের ব্যবসায়িক বুদ্ধিও নেহাত কম নয়। ফলে বলিউড থেকে খানদের দৌরাত্ম্য সহজে কমার নয়, বরং দিন দিন সেটা বেড়েই চলেছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, হাল সময়ে নিজেকে খান-গোত্রের উপযুক্ত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছেন নবাবজাদা সাইফ আলী খানও। ফলে ক্রমপ্রসারমান বলিউডে খানদের শক্তি আরো খানিকটা বৃদ্ধি পেল বৈকি! এআর/১৮:৫২/০৫ অক্টোবর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2z2cVs2
October 06, 2017 at 12:52AM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
তুর্কি সিরিজ আরতুগ্রুলে মজেছেন ভারতের মুসলিমরা
07 Oct 20200টিমুসলিম বিশ্বে দারুণভাবে সাড়া ফেলে তুরস্কের টিভি সিরিজ দিরিলিস: আরতুগ্রুল। এখন কাশ্মীরসহ ভারতের মুসলি...আরও পড়ুন »
আবারো ভাইরাল শাহরুখকন্যার ছবি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- উষ্ণতায় ভরা চোখ ঝলসানো ছবি শেয়ার করে ফের ভাইরাল হলেন বলিউড বাদশাহর কন্যা সুহানা ...আরও পড়ুন »
এবার সুশান্ত-ভক্তের আত্মহত্যার হুমকি
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর প্রায় চারমাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তা...আরও পড়ুন »
প্রায় একমাস পর জামিন পেলেন রিয়া চক্রবর্তী
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ০৭ অক্টোবর- ৯ দিন জেলে কাটিয়ে অবশেষে জামিন পেলেন সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্...আরও পড়ুন »
কাজলের বাগদান সম্পন্ন, বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন ৩০ অক্টোবর
07 Oct 20200টিমুম্বাই, ৭ অক্টোবর- তামিল, তেলেগু ও হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজল আগারওয়ালের বিয়ের গুঞ্জন শোনা ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.