ব্লু হোয়েলের বলি? নাকি নিতান্তই আত্মহত্যা!

ডেস্ক রিপোর্ট ● ‘R+X=1, মানি (মানে) একজন। আমার মিতুর (মৃত্যুর) জন্য কেই (কেউ) দাই (দায়ী) না। অতেব (অতএব) জুতি (যদি) কওকে (কাউ) দাই (দায়ী) করানে (করানো) হই (হয়)। তাহলে তার বিচার আল্লাহতালা (আল্লাহ) করবে।’ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে পুরান ঢাকার সদরঘাটের একটি বহুতল মার্কেটের ছাদ থেকে পড়ে রাকিবুল হাসান (১৭) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়।

লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ রাকিবের পকেটে দু’টি চিরকুট পায়। ওপরের কথাগুলো একটি চিরকুটের। পুলিশের ধারণা, রাকিবুল আত্মহত্যা করেছেন। আর তার আগে তিনি এই দুই চিরকুট লিখে পকেটে রাখেন।

রাকিবুলের মামাতো ভাই আনোয়ার হোসেন জানান, রাকিবুলের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার নাওডোবা পুনর্বাসন গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল জলিল, যিনি গ্রামে কৃষিকাজ করেন।

আনোয়ার হোসেন জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে রাকিবুল সবার বড়। তিনি সদরঘাটের ইস্ট বেঙ্গল মার্কেটের ১১ তলায় পাঞ্জাবি তৈরির একটি কারখানায় কাজ করতেন। শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (মিডফোর্ট) ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে রাকিবুলের লাশ হস্তান্তর করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এরপর তার বাবা রাকিবের লাশ নিয়ে মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। গ্রামের বাড়িতেই রাকিবকে সমাহিত করা হবে।

চিরকুটের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে রাকিব লিখেন,‘আমায় (আমার) দেশের বাড়ি ফরিদপুর (আসলে মাদারীপুর)। আমার একটা ঠিকানা আছে। ইছ বেঙ্গার (ইস্ট বেঙ্গলের) ১১ তালা (তলায়) কাজ। মিজান মিয়ার গরে (ঘরে) পাঞ্জামি (পাঞ্জাবি)’।

তৃতীয় অনুচ্ছেদে তিনি লিখেন, ‘আমার লাসটা (লাশটা) দেসের (দেশের) বারি (বাড়ি) পুছানো (পৌঁছে) দেওয়া হই (হয়)।’ এই চিরকুটের শেষের লাইনে তিনি লিখেন, ‘আমার বেগে (ব্যাগে) মুবাইল (মোবাইল) আছে = X’।

রাকিবের পকেটে পাওয়া অন্য চিরকুটটি প্রথম চিরকুটের চেয়ে আকারে ছোট। এ চিরকুটের বাম পাশের ওপরের কোণায় ইংরেজি বড় অক্ষরে এক্স (X) এবং নিচে আর (R) লেখা রয়েছে। ডান পাশের ওপরের কোণায় আর (R) এবং নিচে দু’টি (X) লেখা রয়েছে।

ছয় লাইনের এ চিরকুটের প্রথম লাইনে রাকিব সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘অমার (আমার) জন্য সবাই দুয়া (দোয়া) করবেন।’ এরপর তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে মাপ (মাফ) করবেন। আমার মাকে মাপ (মাফ) করে দিতে বলবেন। আমার বাবাকে মাপ (মাফ) করে দিতে বলবেন।’ শেষে তিনি লিখেছেন, ‘সবাইকে মাপ (মাফ) করে দিতে বলবে (বলবেন)।’

জানা গেছে, রাকিব যে কারখানায় কাজ করতেন, সে কারখানায় রাতেও থাকতেন। তার থাকার ঘরে একটি কুশন পাওয়া গেছে। এই কুশনেও অস্পষ্ট কিছু লেখা রয়েছে।

রাকিবের মামাতো ভাই আনোয়ার হোসেন বলেন,‘রাকিব দিন-রাত কাজ করতো। সে ব্লু হোয়েল গেম খেলবে কখন! এসব তার জানার কথা নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘চার ভাইয়ের মধ্যে রাকিব সবার বড়। তার অন্য তিন ভাইয়ের নাম- হৃদয়, রাতুল ও রাব্বি হাসান। তারা সবাই মাদারীপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন।রাকিব দুই বছর ইস্ট বেঙ্গল কারখানায় কাজ করেছে। এরপর বছর খানেক সে অন্য কারখানায় কাজ করে। গত ২০ দিন আগে সে আবার ইস্ট বেঙ্গল কারখানায় কাজ শুরু করে। এর মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে।’

চিরকুটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চিরকুটগুলো দেখেছি। সেগুলো পুলিশ সংগ্রহ করেছে। তবে সে কেন এমন করলো, তা আমরাও বুঝতে পারছি না।’

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা রাকিবের পকেটের চিরকুটের সঙ্গে তার খাতার লেখা মিলিয়ে দেখেছি। তাতে মনে হয়েছে চিরকুট তারই লেখা।’

তিনি বলেন, ‘রাকিব কোন ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়েছে, তা জানা যায়নি। সদরঘাটের ওই সড়কের দুই পাশে দুই মার্কেট। একপাশে শরীফ মার্কেট, অন্য পাশে ইস্ট বেঙ্গল  মার্কেট। ইস্ট বেঙ্গল মার্কেটটি সূত্রাপুর থানাধীন। সে কোন মার্কেট থেকে লাফিয়ে পড়েছে, তা জানা যায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সে ইস্ট বেঙ্গল মার্কেটের ১১ তলায় একটি পাঞ্জাবির কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করতো। গতকালের ঘটনা হঠাৎ ঘটেছে। কেউ বলতে পারছে না যে সে কোন ভবন থেকে পড়েছে। ওই কারখানার মালিক মিজানুর রহমান ঘটনার পর এসেছিলেন। তিনিও কিছু বলতে পারেননি।’

রাকিবুলের কাছ থেকে একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি স্যামস্যাং ব্র্যান্ডের মোবাইল। এর পেছনে লেখা এলটিই। মোবাইল ফোনটিতে পাসওয়ার্ড দেওয়া। আমরা মোবাইলটি ওপেন করতে পারিনি। আলামত হিসেবে রাকিবের ব্যবহৃত মোবাইল ও চিরকুট সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার পর জানা যাবে আসলে কী ঘটেছে।’

ডান হাতের ক্ষতের দাগকে নীল তিমি দাবি করে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী বলছেন, ধাপে ধাপে প্ররোচিত করে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার অনলাইন গেম ব্লু হোয়েলের শিকার রাকিব। এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য জানতে চাইলে এসআই আজিম উদ্দিন বলেন, ‘তার হাতের দাগ আগের নয়। ছাদ থেকে লাফ দেওয়ার পরেই এই দাগ হয়েছে। কোথাও ঘষা লেগে হাতের চামড়া উঠে এ দাগ হয়েছে। আমরা ব্লু হোয়েলের কোনও আলামত পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) রাতেই মাদারীপুর থেকে রাকিবের বাবা এসেছিলেন। তার কাছে শনিবার বিকালে ময়নাতদন্তের পর লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। রাকিবের দাফন শেষে তাকে (রাকিবের বাবা) আবার আসতে বলছি।’ রাকিবুল যাদের সঙ্গে কাজ করতেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান এসআই  আজিম।

শুক্রবার রাতে রাকিবের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তার ছবি তুলেন ও ভিডিও করেন। অনেকেই সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন এবং রাকিবের হাতের ক্ষতটিকে নীল তিমি দাবি করে বলেন,‘রাকিব ব্লু হোয়েল গেমের বলি’। এ নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তবে পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা রাকিবের ব্লু হোয়েল গেম খেলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, রাকিবের যে শিক্ষাগত যোগ্যতা তাতে তার পক্ষে সব নির্দেশনা মেনে ব্লু হোয়েল গেম খেলা সম্ভব নয়। সে অন্য কোনও কারণে আত্মহত্যা করেছে।

The post ব্লু হোয়েলের বলি? নাকি নিতান্তই আত্মহত্যা! appeared first on Comillar Barta.



from Comillar Barta http://ift.tt/2z9GYx5

October 15, 2017 at 12:54PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top