বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথে থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি)’র বিরুদ্ধে ‘সালিশ বৈঠকে
এলাকার মুরব্বীদের ছাড়াই (অনুপস্থিতিতে)’ উপজেলার নতুন বাজারের
বিরুদপূর্ণ সেই দোকান কোঠার রায় এক প্রবাসী পক্ষে দেওয়ার ও থানা পুলিশের
সেল্টারে প্রতিপক্ষের তালা ভেঙ্গে সেই প্রবাসী কর্তৃক সেই দোকান কোঠা
দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার সকালে ওসির ওই রায় ঘোষণার সময় একটি
পক্ষও অনুপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে।
এলাকার মুরব্বীদের ছাড়াই গতকাল বুধবার সকালের সালিশ বৈঠক ও একটি পক্ষের
অনুপস্থিতে প্রবাসীর পক্ষকে বিরুদপূর্ণ দোকান কোঠাটি বুঝিয়ে দেওয়ার ঘটনায়
চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। দু’পক্ষের মধ্যে আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও
দখল-পাল্টা দখলের আশংঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে
বিরুদপূর্ণ দোকান কোঠার আশপাশ এলাকায় থানা পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য
করেছেন স্থানীয় জনতা ও সাংবাদিকরা।
জানা গেছে, উপজেলার নতুন বাজার এলাকার সেই দোকান কোঠা নিয়ে চলতি বছরের ১৬
আগস্ট থেকে ৩টি পক্ষের (উপজেলার মিরেরচর গ্রামের রফিক হাসান মেম্বার,
যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামাল হোসেন, জানাইয়া গ্রামের জুনাব আলী জুনাই গং)
মধ্যে বিরুদ চলে আসছে। এনিয়ে ৩ পক্ষের মধ্যে একাধিকবার আপোষ-মিমাংশার
বৈঠক এবং দখল-পাল্টা দখল ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।
সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর রাতে রফিক হাসান গং ও জুনাব আলী জুনাই গংদের মধ্যে
দখল-পাল্টা দখল নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে নতুন বাজার বণিক
কল্যাণ সমিতির সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম কবির’সহ ১০ জন আহত হন।
এলাকার মুরব্বীদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিয়ন্ত্রনে আসে। এসময় উভয় পক্ষকে
মুরব্বীরা অবহিত করে ছিলেন যে থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামছুদ্দোহা
পিপিএম এবং উপজেলার প্রবীন সালিশী ব্যক্তিত্ব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খানের উপস্থিতিতে বিষয়টি আপোষ-মিমাংশায় শেষ করা হবে।
এরপর বিষয়টি মিমাংশা করার জন্য থানায় একাধিকবার এলাকার মুরব্বীদের
উপস্থিতিতে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। থানা কমপাউন্ডে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে
থানার ওসি শামছুদ্দোহা ও এলাকা মুরব্বীগন উভয় পক্ষকে নিজেদের পক্ষে থাকা
ভূমির মূল কাগজপত্র উপস্থান করার কথা বলেন। এসময় থানার ওসি ও মুরব্বীদের
কথা মতো রফিক হাসান পক্ষ মূলকাগজ উপস্থাপন করলেও প্রবাসী কামাল হোসেন
তাতে ব্যর্থ হন এবং ফটোকপি ছাড়া ভূমি ক্রয়ের মূল কাগজ নেই বলে বৈঠকে
উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে জানান। সেই ফটোকপিতে একাধিক কাটাছেড়া থাকায় সেটি
অবৈধ বলে দাবি করেন রফিক হাসান পক্ষ। এরপরও বুধবার সকালে মুরব্বীদের
ছাড়াই অনুষ্ঠিত সভায় রায় নিজের পক্ষে পেয়ে প্রবাসী কামাল হোসেন পক্ষ
পুলিশের উপস্থিতিতে দোকান কোঠায় রফিক পক্ষের মারা তালা ভেঙ্গে দখল করেন
বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে রফিক হাসান মেম্বার বলেন, বুধবার সকালে থানায় অনুষ্ঠিত বৈঠক
এলাকার মুরব্বীদের ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে জানতে পেরে আমি সে বৈঠকে উপস্থিত
হইনি। থানায় অনুষ্ঠিত বিগত বৈঠকে দোকান কোঠা ক্রয়ের মূল কাগজপত্র কামাল
গংরা দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার পরও আজ সকালে (বুধবার) এলাকার মুরব্বীদের ছাড়াই
ওসি সাহেব নিজের প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে আমার (পিতার ক্রয়কৃত) দখলীয়
সম্পত্তি (দোকান কোঠা) পুলিশ পাঠিয়ে দোকান কোঠায় আমার মারা তালা ভেঙ্গে
দিয়ে কামাল গংদেরকে দখল করিয়ে দিয়েছেন। আমার বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও আমি
ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি। সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে আমি ন্যায়
বিচার চাই।
এব্যাপারে কামাল হোসেন বলেন, আমি দোকান কোঠা দখল করতে আসলে সেখানে
প্রতিপক্ষের লোকজনের উপস্থিতি দেখতে পাই। এজন্য আমি থানা পুলিশের
সহযোগীতা চাই। পরবর্তিতে পুলিশের সহযোগীতায় দোকান কোঠা দখল করি।
পুলিশ পাঠিয়ে তালা ভেঙ্গে দখল করিয়ে দেওয়া ও প্রবাসীর পক্ষালম্বন করার
বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামছুদ্দোহা
পিপিএম বলেন, ওই ভূমির মূলমালিক হচ্ছে সরকার। দখলীয় সূত্রে মালিক দাবিদার
উভয় পক্ষ বিষয়টি মিমাংশা করার জন্য আমার কাছে নিজেদের কাগজপত্র জমা দেন।
উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখাগেছে ৪২ বছর ধরে ওই ভূমি কামাল
হোসেন পক্ষের দখলে রয়েছে। তারা তাতে দ্বিতল ভবনও নির্মাণ করেছেন। সরকারের
সাথে মামলাও করেছেন। এতদিন কেউ মালিকা দাবি করেননি। মূল কাগজ না থাকলেও
দীর্ঘদিন ধরে কামাল পক্ষ ভূমিটি নিজের দখলে রাখায় তাদের অনেক প্রমাণ
রয়েছে। তাই দোকান কোঠা তাদের (কামাল) দখলেই থাকবে। অন্য কোন পক্ষ মালিক
হলে আদালতের রায় নিয়ে আসতে হবে। কেউ জোরপূর্বক দখল করতে আসলে আইনানুগ
ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এব্যাপারে প্রবীন সালিশী ব্যক্তিত্ব ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি
আলহাজ্ব পংকি খান বলেন, বিষয়টি শেষ করার জন্য এলাকার মুরব্বীদের সাথে
নিয়ে আমি আপোষ-বৈঠকের উদ্যোগ নিয়ে ছিলাম। ওসি সাহেব ও এলাকার মুরব্বীদের
উপস্থিতিতে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। কিšুÍ আজ (বুধবার) সকালে আমি (পংকি)’সহ
এলাকার মুরব্বীদের অনুপস্থিতিতে ও আমাদের মতামত ছাড়াই ওসি (শামছুদ্দোহা)
সাহেব নিজের প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে দোকান কোঠাটি একটি পক্ষকে দিয়ে দিলেন।
অপর পক্ষটিও সে সময় অনুপস্থিত ছিল। সকল পক্ষের উপস্থিতিতে ও মুরববীদের
মতামতের ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধান না হলে, আইনের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত
ছিল। ওসি সাহেবের এভাবে পক্ষ দেওয়া ঠিক হয়নি।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান পিপিএম বলেন, বিষয়টি নিয়ে নানান
বক্তব্য রয়েছে। তাই তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি দেখা হবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2lhOQdO
October 26, 2017 at 12:11PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন