বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের তদারকিতে সিলেটের বিশ্বনাথে প্রায় ১১ কোটি ৩০লাখ টাকা ব্যয়ে চলমান উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়মের কথা স্বীকার করলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম বদরুল ইসলাম। সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- বর্তমান সাংসদ এহিয়া চৌধুরীর অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় জানালায় ব্যবহৃত নিম্নের ফ্রেইম খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি বিল্ডিং পাইলিংয়ের পুরাতন ভাঙ্গা ডাষ্ট দিয়ে ভবনের কাজ না করার নির্দেশও দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
অনিক ট্রেডিং করপোরেশন নামের ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়। আগামী জুনে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। প্রায় ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনার নির্মান কাজে নিম্নমানের পাথর, পাইলিং ভাঙ্গা ডাস্ট, জানালায় নি¤œমানের এঙ্গেল ব্যবহার ও চালনি না দিয়ে ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের কাজে পাথর বা ইটের খোঁয়া দিয়ে নির্মান কাজ করার কথা থাকলেও টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন পুরাতন বিল্ডিং-এর পাইলিংয়ের ডাস্ট (ব্যবহৃত নি¤œমানের পাথর) দিয়ে কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের ছাদ ঢালাই’সহ পিলার নির্মানের কাজ করছে। তাও যে পাথর মাটি ও ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। তা সত্যেও চালনি না দিয়ে চলছে কাজ। ফিলারের রডের সাথে বাঁধা রিং-এর দূরত্ব প্রায় ৬-৭ ইঞ্চি পর পর হওয়ার কথা থাকলেও সেই রিংগুলো দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৪-১৬ ইঞ্চি পর পর। কাঁচের জানালায় ব্যবহৃত গ্রীলের এঙ্গেল ৩ এমএম’র পরিবর্তে দেড় এমএম ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন জানালার মাপেও দেখা গেছে প্রায় ১ ইঞ্চি করে কম।
নির্মান কাজে এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া অনিয়ন-দূর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার প্রাথমিকভাবে চলমান কাজ পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। সেদিন (বৃহস্পতিবার) তিনি প্রকল্পের চলমান নির্মান কাজে অনিয়ম হাতে নাতে ধরেন। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রকৌশলীর সাথে তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে কথা বলেন এবং শনিবার (২৮অক্টোবর) তাদের সাথে নিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেন। এসময় এমপি ডাস্ট দিয়ে যেসকল কাজ চলমান তা বন্ধ রেখে অন্যান্য কাজ করার জন্য নির্মাণকাজে নিয়োজিত সাইট ইঞ্জিনিয়ার অঞ্জন মন্ডলকে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্ত শনিবার বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নূর উদ্দিন, বিশ্বনাথ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক, সিলেট থেকে আসা ইঞ্জিনিয়ার ছদরুল ইসলাম, বিশ্বনাথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন ও সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে সরেজমিন নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। ওই দিন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপস্থিত হননি স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রকৌশলী বা সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার। এসময় পুরাতন পিলারের ডাস্ট (নি¤œমানের পাথর) ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে সাইট ইঞ্জিনিয়ার অঞ্জন মন্ডল বলেন, উর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষের অনুমতি স্বাপেক্ষে তিনি দুটি ভবনের ভিটার পাকায় এগুলো ব্যবহার করেছেন। আর জানালায় ব্যবহৃত ষ্টিলের এঙ্গেলে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে।
এদিকে, শনিবার (২৮অক্টোবর) জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কাজের টিকাদারের কাছে ৩০লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন এমপি এহিয়া চৌধুরী। সপ্তাহ খানেক আগে সাংসদের কয়েকজন অনুসারী আবারও চাঁদা দাবি করেন। আর চাঁদা না দেওয়ায় রাজু শিকদার নামের এক নির্মাণকর্মীকে মারধর করে চাঁদাবাজেরা। এ ঘটনায় ১০ অক্টোবর তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন রাজু। এর এক সপ্তাহ পর প্রধান আসামি শাহনুর মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ওই দিনই সাংসদ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন এবং প্রকৌশলী ও ঠিকাদারকে পেঠানোর হুমকি দেন। প্রকাশিত সংবাদে সিলেট-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর উদৃত্তি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, তিনি বলেছেন ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ যথাযথভাবেই হচ্ছে। আমি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের বলেছি, আপনারা সাংসদের নির্দেশে সেখানে যাবেন না। দেখি উনি কী করতে পারেন।’
আজ সোমবার দুপুরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং কাজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে নির্মাণ কাজ পরিদর্শণ করেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। পরিদর্শণের পূর্বে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব পংকি খানের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিক চৌধুরী ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের সত্ত্বাধিকারী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি বলেন কাজে অনিয়ম হলে পরকালে এর জবাব দিতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। সভা ও হাসপাতাল পরিদর্শণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম বদরুল ইসলাম
জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য এহিয়া চৌধুরীর অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় জানালায় ব্যবহৃত নি¤œমানের প্রেইম খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বিল্ডিং পাইলিংয়ের পুরাতন ভাঙ্গা ডাষ্ট দিয়ে ভবনের যে দুটি ফ্লরে কাজ করা হয়েছে তা ভেঙ্গে নতুন করে কাজ করার এবং
পুরাতন ভাঙ্গা ডাষ্ট দিয়ে কাজ না করার নির্দেশও দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে প্রকল্পের নির্মান কাজে অনিয়ন-দূর্নীতি দেখতে পাই। সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে বলে যাই শনিবার আবারও এখানে (স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে) আসব। তখন যেন তাদের উর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষও এখানে (স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে) উপস্থিত থাকেন। অথচ শনিবার সেখানে গিয়ে কাউকে পাই নি। বরং আমি যাতে প্রকল্প এলাকায় না যেতে পারি সেজন্য একটি কুচক্রি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়ন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনিত চাঁদা দাবির অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, চাঁদাবাজির মামলায় শানুর নামের যে লোক গ্রেফতার হয়েছে সে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, সাবেক এমপি (শফিক চৌধুরী) নির্মাণ কাজ পরিদর্শনের পূর্বেই ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ যথাযথভাবেই হচ্ছে’ বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। আর আজকে (সোমবার) কাজে অনিয়মের দায় স্বীকার করে আপনাদের কাছে (সাংবাদিকদের) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে কি প্রমাণিত হয়? অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে যদি নি¤œমানের কাজ হয় তাহলে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2hoaYyQ
October 30, 2017 at 11:31PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.