কলকাতা, ২৭ নভেম্বর- রাজ্যে বিদ্যুৎ উত্পাদনে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এল৷ তা দিয়ে সমুদ্রের বুকে দুটি গ্যাস টারবাইন -চালিত বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্র গড়তে চায় নরওয়ে এবং সিঙ্গাপুরের কনসর্টিয়াম৷ তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী , ওই বিদ্যুত্কেন্দ্র থেকে রোজ গড়ে ৫৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ তৈরি হবে৷ পুরো প্রকল্পটি গড়ে উঠবে সমুদ্রের উপর৷ ফলে বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্র গড়তে এক ছটাকও জমি লাগবে না৷ এই প্রকল্প গড়ে তুলতে যে খরচ হবে , তার পুরোটাই সংস্থাটি বহন করবে৷ তার বিনিময়ে সেখানে যে বিদ্যুৎ তৈরি হবে , তা পুরোটাই কিনে নিতে হবে রাজ্য সরকারকে৷ সম্প্রতি এই মর্মে একটি প্রস্তাব জমা পড়েছে বিদ্যুৎ দন্তরে৷ রাজ্যের আসন্ন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মুখে এই বিনিয়োগের প্রস্তাবে স্বভাবতই আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন সরকারি কর্তারা৷ এ ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে সবুজ সংকেত দিয়েছেন বিদ্যুত্মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়৷ চূড়ান্ত সম্মতি দেওয়ার আগে তাতে আখেরে রাজ্যের কতটুকু লাভ হবে , তা ভালো করে খতিয়ে দেখছে বিদ্যুৎ দন্তর৷ ছাড়পত্র মিললেই দুএক বছরের মধ্যে কাজ শুরু হবে৷ বিদ্যুত্মন্ত্রীর দাবি , রাজ্যে বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষেত্রে এত বড় বিনিয়োগের প্রস্তাব এর আগে কখনও আসেনি৷ তাই এ ব্যাপারে যথেষ্ট উত্সাহী তাঁরা৷ তিনি জানিয়েছেন , এই প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্য সরকার কতটা লাভবান হবে , সেটা খতিয়ে দেখছেন বিদ্যুৎ দন্তরের আধিকারিকরা৷ বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে৷ সব শুনে তিনিও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ মন্ত্রীর ইচ্ছা , সাগর দ্বীপের লাগোয়া বঙ্গোপসাগরের বুকেই এই গ্যাসচালিত বিদ্যুত্কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক৷ তাতে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেও সুবিধা হবে৷ ভবিষ্যতে সাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির যে ভাবনা -চিন্তা চলছে , সেখানেও এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে৷ চাইলে নদীর বুকেও এই প্রকল্প গড়ে তোলা যেতে পারে৷ তবে নদীর জলের গভীরতা ন্যূনতম ১৫ মিটার হতেই হবে৷ বিদ্যুত্ দন্তর সূত্রের খবর , প্রস্তাবিত ওই বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্রে দুটি পৃথক ইউনিট থাকবে৷ সমুদ্রের উপর ভাসমান দুটি জাহাজের মধ্যে সমস্ত যন্ত্রপাতি বসানো থাকবে৷ প্রতিটি ইউনিট থেকে ২৭০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুত্ তৈরি হবে৷ এখানে কয়লার বদলে তরল প্রাকৃতিক গ্যাসকে (এলএনজি ) জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হবে৷ তা দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হবে৷ সেই বিদ্যুৎ চলে যাবে সরকারি গ্রিডে৷ তার জন্য সমুদ্রের পাশে কোনও জায়গায় সাবস্টেশন গড়ে তুলতে হবে রাজ্যকে৷ শর্ত অনুসারে , নির্দিষ্ট দামে সেই বিদ্যুৎ কিনতে হবে রাজ্যকে৷ তবে বিদ্যুতের দাম কত হবে , সেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ বিদ্যুৎ দপ্তরের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন , সংস্থাটি প্রথমে ইউনিট পিছু বিদ্যুতের দাম ধার্য করেছিল ৫ টাকা ৪০ পয়সা৷ যদিও সেই প্রস্তাব প্রথমেই খারিজ করে দেন মন্ত্রী৷ কারণ , রাজ্য সরকার নিজেদের ঘাটতি মেটাতে তার থেকে অনেক কম দামে বিদ্যুৎ কিনে থাকে৷ পরবর্তীকালে অবশ্য সংস্থার তরফে জানানো হয় , দুতরফে আলোচনা করেই বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হবে৷ যদিও বিদ্যুতের দামের বিষয়টি রীতিমতো ভাবাচ্ছে বিদ্যুৎ দন্তরের কর্তাদের৷ এক আধিকারিক বলেন , বাজারে এখন যে টাকায় বিদ্যুত্ পাওয়া যায় , তার প্রায় দ্বিগুন দাম চাইছে ওই কনসর্টিয়াম৷ এই দামে রাজ্য সরকার বিদ্যুত্ কিনলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে৷ তা ছাড়া , ওরা বিদ্যুৎ বিক্রি করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে৷ কাজে না লাগলেও বিদ্যুৎ কিনতে হবে৷ রাজ্য সরকারের পক্ষে এই শর্ত মানা মুশকিল৷ তবে যেহেতু এই প্রকল্পে সরকারকে কোনও জমি দিতে হচ্ছে না এবং টাকাও ঢালতে হচ্ছে না , তাই এমন একটি লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া মানে হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা৷ তা ছা .ডা , ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই ধরনের বিদ্যুত্কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ তাই সব দিক ভেবেচিন্তেই প্রকল্প রূপায়ণের পথে এগোবে বিদ্যুৎ দন্তর৷ মোট বিনিয়োগ ১২ হাজার কোটি সমুদ্রের উপর গড়ে উঠবে বিদ্যুত্কেন্দ্র উত্পাদন ক্ষমতা ৫৪০ মেগাওয়াট জ্বালানি হিসাবে ব্যবহূত হবে গ্যাস নির্দিষ্ট দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে রাজ্যকেবিদ্যুতে বিপুল বিনিয়োগ৷ সূত্র: এইসময় আর/১৭:১৪/২৭ নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2AAKBkq
November 28, 2017 at 12:07AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top