ওয়াশিংটন, ২০ নভেম্বর- ৩৭ বছরের মাথায় দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশি রিয়াজ তালুকদারকে। ২০ নভেম্বর সোমবার তাঁকে হাজিরা দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস পুলিশ-আইস দপ্তর কার্যালয়ে। সেখানেই তার দেশে ফেরার চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক হবে। আর সেটা হলে, দুই সন্তান আর ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীকে রেখে এ দেশে ছেড়ে যেতে হবে। এ কথা বলতে গিয়ে মূল ধারার কিছু গণমাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ৫০ বছর বয়স্ক রিয়াজ তালুকদার। নিউইয়র্কের সর্বাধিক প্রচারিত টেলিভিশন চ্যানেল নিউইয়র্ক ওয়ান রিয়াজ তালুকদারকে নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রচার করেছে দিনভর। সেখানে, দেখা যাচ্ছে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন রিয়াজ তালুকদার, তার স্ত্রী আর দুই সন্তান। এর আগে জ্যাকসন হাইটসে কিছু মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক আর তার অভিবাসন নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কাছে এ পরিবারটিকে বিচ্ছিন্ন না করার আকুল আবেদন তুলে ধরেন। দেখুন এ মানুষটির বিরুদ্ধে গত ৩৭ বছরে একটিও ফৌজদারি প্রতিবেদন নেই (ক্রিমিনাল রিপোর্ট)। তার সন্তানেরা এই দেশে পড়ছে। আইন ভাঙার কোনো রেকর্ড নেই। সে নিয়মিত সরকারকে কর প্রদান করছে। তবুও কেন, তাকে চলে যেতে হবে এ দেশ থেকে? যেখানে দেশে তার জীবন শঙ্কার মধ্যে কাটবে, ছেলে মেয়েরা পিতাকে হারিয়ে পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে! এক নাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন রিয়াজ তালুকাদরের আইনজীবী অ্যাডওয়ার্ড কুসিয়া। ২০১০ সালে তার বিতাড়নের আদেশ হয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে। তারও আগে, ১৯৮০ সালে এই দেশে আসেন তরুণ রিয়াজ তালুকদার। তখনো কেউ গ্রিন কার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করত না। ১৯৯০ সালে দেরিতে আবেদনকারীদের জন্য গ্রিন কার্ড আবেদনের নিয়ম চালু হলে, রাজনৈতিক আশ্রয়ের রীতি মেনে সেটাতে আবেদন করেন রিয়াজ। তবে, আইনজীবীর দেওয়া কাগজপত্রের গোঁজামিলে সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। কিন্তু গ্রহণ না করার ফলে পরিণতি কি হতে পারে সেটা জানা ছিল না রিয়াজ তালুকদারের। কেননা, তার মতো এমন লাখ লাখ মানুষ এখনো বসবাস করে নিউইয়র্কসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১০ সালে একবার ইমিগ্রেশন পুলিশ যখন তার বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে তখন তিনি প্রথমবার জানতে পারেন, যে তার দেশে ফেরত যেতে হবে। তবে, ওবামার আমলের নিয়মানুযায়ী সন্তানদের লেখা পড়া ও দেশে আইন ভাঙার রেকর্ড না থাকা পরিবারগুলো আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা পাওয়ার বিধান করেন, সেটার মাধ্যমে এত দিন ইমিগ্রেশন দপ্তরে হাজিরা দিয়েই কেটেছে। আশা ছিল, আর কয়েকটি বছর। কেননা, রিয়াজ তালুকাদরের বড় সন্তান রাফির বয়স এখন ১৭। যখন বয়স ২১ বছর হবে, তখন রাফি বাবার জন্য সহজেই গ্রিন কার্ডের আবেদন করতে পারত। সেই ভরসায় ছিলেন রিয়াজ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে কোনো বাছ-বিচার হচ্ছে না। বিতাড়নের আদেশ থাকলেই তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছেযার খড়্গ এবার জুটল বাংলাদেশি রিয়াজ তালুকদারের কপালে। ২০ নভেম্বর ম্যানহাটনের ফেডারেল প্লাজায় ইমিগ্রেশন পুলিশ দপ্তরে হাজিরা রিয়াজ যখন হাজিরা দিতে যাবেন তখন বাইরে একটি বড় প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে স্থানীয় কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের। ডেসিস রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং- ড্রাম সেসব সংগঠনের একটি। এর একজন বাংলাদেশি সংগঠন কাজী ফৌজিয়া এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ কালে জানান, এ পর্যন্ত রিয়াজ তালুকদারের পক্ষে প্রায় সাত হাজার অনলাইন আবেদন জমা হয়েছে। আমরা দাঁড়াব প্রতিবাদ করতে। তবে, প্রশাসন না চাইলে হয়তো তার দেশে প্রত্যাবর্তন ঠেকানো যাবে না। এর আগে মাস দুয়েক আগে এমন ১১ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল ইমিগ্রেশন পুলিশ। তালিকায় রিয়াজ তালুকদারের মতো আরও অনেকেই আছেন বলে জানিয়েছেন কাজী ফৌজিয়া। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো এআর/০০:১৫/২০ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2zW8hwH
November 20, 2017 at 06:18AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন