মুম্বাই, ০২ নভেম্বর- শাহরুখ খান একবার বলেছিলেন, তারকা খ্যাতি যখন আমাকে মাথায় উঠিয়ে দেয়, নিজেকে যখন বিরাট কিছু ভাবতে শুরু করি, তখনই আমি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তখন আমার সব অহংকার, মহাতারকা হওয়ার গৌরব এক নিমেষেই ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেন। খুব রূঢ় ও তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও শাহরুখ এভাবে বর্ণনা করেন। এটাই তাঁর স্বভাব। স্ত্রী গৌরী নাকি কিং খান-এর এই সেন্স অব হিউমার দেখে প্রেমে পড়েছিলেন। শুধু গৌরী নন, শাহরুখের এমন অনেক ভক্ত আছেন, যাঁরা তাঁকে অভিনেতা হিসেবে ফুল মার্কস না দিলেও তাঁর রসবোধের জন্য পারলে বোনাস নম্বর দেবেন। শাহরুখ তাঁর অতীতের কথা যতটা হাসিঠাট্টার সঙ্গে বর্ণনা করেন, আদতে সেই গল্পগুলো এত মধুর নয়। অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে শাহরুখ আজ এই অবস্থানে এসেছেন। এখন এই তারকার কাছে সব আছে। দামি গাড়ি, প্রাসাদসম বাড়ি, ফার্ম হাউস, ব্যক্তিগত জেট, আরও অনেক কিছু। একদিন শাহরুখের কাছে কিছুই ছিল না। অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারিয়ে তাঁর দিশেহারা হয়ে ঘোরার কথা ছিল। শাহরুখ তা করেননি। নিজের জীবনের দিশা খুঁজেছেন থিয়েটারে, রোজগারের জন্য দিল্লির দরিয়াগঞ্জে একটি রেস্তোরাঁও চালিয়েছিলেন কিছুদিন। এর মধ্যে এক পার্টিতে গৌরীর সঙ্গে দেখা। শাহরুখের ভাষ্য, গৌরী আমার জীবনের প্রথম নারী, যে আমার সঙ্গে সাড়ে তিন মিনিটের বেশি কথা বলে। আর এতেই আমি প্রশ্রয় পেয়ে যাই। কিছুদিন পর তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসি। মেয়ে রাজি হয়ে যাওয়ায় আমার তখন পোয়া বারো। শাহরুখ আপ কি আদালত অনুষ্ঠানে সাংবাদিক রজত শর্মাকে বলেন, সিনেমায় অভিনয়ের কোনো পরিকল্পনাই নাকি ছিল না তাঁর। সব সময় খেলোয়াড় হতে চাইতেন। বিশেষ করে হকি খেলার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল ভীষণ। পিঠে চোট পাওয়ার কারণে খেলাধুলার ক্যারিয়ারকে তখনই বিদায় জানাতে হয়। একসময় চিন্তা করলেন, মুম্বাইয়ে গিয়ে টেলিভিশন সিরিয়ালে নাম লেখাবেন। ছোটবেলা থেকে থিয়েটারের নাটক দেখে দেখে অভিনয় তাঁর ভালোই আয়ত্তে চলে এসেছিল। কিন্তু আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুরা তাঁকে টিভিতে মুখ দেখানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে। সবাই বলল, তুই নায়ক হতে যাস নে। তোর চেহারা খুব বিশ্রী। এই রূপ নিয়ে তোকে কে নায়ক বানাবে? কথাগুলো শুনে শাহরুখের মন খারাপ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তিনি দমে যাননি। মুম্বাই আসার পর বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মনসুর খানের কাছে যান। মনসুর কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবির পরিচালক। শাহরুখকে প্রথম দেখায় তিনি পছন্দ করলেন। তিনি নাকি কিং খানকে বলেছিলেন, তোমাকে দিয়েই হবে। তোমার চেহারা এতই খারাপ যে আমি তোমাকে দিয়ে যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করাতে পারব! এ কথা শোনার পর আর কার মনোবল থাকে? দাঁতে দাঁত চেপে শাহরুখ তা সহ্য করলেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কোনো বাছবাছাই করেননি এই তারকা। ছোট পর্দায় অনেক ছোটখাটো চরিত্রে কাজ করেছেন। বড় পর্দায় যখন ডাক পড়ে, তখনো নায়ক, না খলনায়কের চরিত্রে কাজ করছেন, এসব নিয়ে মাথা ঘামাননি। অভিনয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আর নিষ্ঠাই তাঁকে বলিউড বাদশা বানিয়েছে। মুম্বাইয়ে শাহরুখের বিশাল বাড়ি মান্নাত তৈরির সময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাঁকে। বাড়ি তৈরির টাকা জোগাড় করার জন্য নাকি তখন নাকেমুখে কাজ করে আয় করতে হয়েছে। শাহরুখের এই বাড়ি তৈরির পেছনের অন্যতম কারণ, নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করা। মান্নাত-এ খুব সুন্দর একটি প্রার্থনার ঘর আছে শাহরুখের। আগে ভিডিও গেম খেলার খুব শখ ছিল, শখ ছিল দেশ-বিদেশে ঘোরার। জীবনের ৫২টি বছর পার করে নিজের আর কোনো শখ নেই। শাহরুখ বলেন, এখন আমার তিন সন্তান আরিয়ান, সুহানা আর আব্রামকে ঘিরেই সব শখ। আজ ২ নভেম্বর বলিউডের এই রাজার জন্মদিন। পরিবার ও কাছের বন্ধুদের নিয়ে গতকাল বুধবার শাহরুখ নিজের উড়োজাহাজে চড়ে আলিবাগে তাঁর ফার্ম হাউসে রওনা দেন। জন্মদিনের প্রথম প্রহরে ৫২টি মোমবাতি নিভিয়ে উদ্যাপন শুরু হয়েছে। রাতভর চলেছে পার্টি। শাহরুখ সব সময় এমনই প্রাণোচ্ছল থাকুক, আনন্দ আর রসবোধে তাঁর মন থাকুক ভরপুর। শুভ জন্মদিন শাহরুখ। এমএ/০২:৪৮/০২ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2z76rbT
November 02, 2017 at 09:03PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন