বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: ধোঁয়াশা তৈরি করেছিল ডিএনএ টেস্ট। তখন থেকেই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ। লন্ডন প্রবাসী ওয়াহাব আলী নিজেই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত অবিশ্বাসের ঘেরাটোপে পড়ে তিনি ডিভোর্স দিয়েছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রী আলেয়া বিবিকে। ঘটনাটি ১৫ বছর আগের। ওয়াহাব আলী মারা গেছেন।
কিন্তু আলেয়ার মেয়ে শাহানারা এখন পিতার দাবি ছাড়েননি। সৎ ভাই দাবি করে তিনি ওয়াহাবের প্রথম স্ত্রী সন্তান কলন্দরের পক্ষে লড়াইয়ে নেমেছেন। একই সঙ্গে কলন্দর আলীও কম যাননি। তিনি কোনো ভাবেই শাহানাকে সৎ বোন মানতে নারাজ। তিনিও নেমেছেন পাল্টা লড়াইয়ে। আর এই লড়াই নিয়ে সিলেটের বিশ্বনাথে তোলপাড় চলছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে- ১৯৯৪ সালের ৫ই মে বিশ্বনাথের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওয়াহাব আলী বিয়ে করেন আলেয়া বিবিকে। লন্ডন প্রবাসী ওয়াহাবের দ্বিতীয় বিয়ে এটি। তার প্রথম স্ত্রী নসিরা বিবি সন্তানদের নিয়ে লন্ডনে বসবাস করেন। আর আলেয়া বেগম থেকে যান দেশে। ২০০২ সালে ওয়াহাব চেয়েছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রীকেও যুক্তরাজ্যে নিতে। তখন আলেয়ার দুই সন্তান। একজন মেয়ে, অপরজন ছেলে। ওই সময় ওয়াহাব আলী তাদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে বৃটিশ হাইকমিশনে আবেদন করেন। কিন্তু বৃটিশ দূতাবাস ওই দুই সন্তান ওয়াহাব আলীর কী না-তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্ট করায়। ডিএনএ টেস্টে এসে দেখা দেয় বিপত্তি। ডিএন টেস্টের রিপোর্টে প্রমাণিত হয় পিতার সঙ্গে আলেয়া বেগমের দুই সন্তানের কোনো মিল নেই। এ কারণে ঢাকাস্থ বৃটিশ দূতাবাস ওই সময় আলেয়া বিবি ও তার সন্তানদের ভিসা বাতিল করে দেয়। এই ডিএনএ রিপোর্টের পর থেকে আলেয়া বিবির সঙ্গে ওয়াহাবের পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। ওয়াহাব পড়েন দ্বিধায়। দেখা দেয় বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বে পড়ে ২০০২ সালে ওয়াহাব আলী বিশ্বনাথে থাকা দ্বিতীয় স্ত্রী আলেয়াকে ডিভোর্স দিয়ে দেন। একই সঙ্গে তিনি আলেয়ার কাবিনের সব টাকা পরিশোধও করেন। কিন্তু আলেয়ার গর্ভে জন্ম নেয়া দুই সন্তানের কোনো সুরাহা হয়নি।
মামলা সূত্র মতে- আলেয়াকে ডিভোর্সের পরে ২০১০ সালে ওয়াহাব আলী মারা যান। এরপর থেকে আলেয়ার সন্তানরা পিতার সম্পত্তির ভাগের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেন। সম্প্রতি আলেয়া বিবির গর্ভের সেই সন্তানেরা নিজেদের ওয়াহাব আলীর সন্তান দাবি করে চাচ্ছেন সম্পত্তির ভাগ। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মামলাও চলছে। আর ওই মামলা এবং উত্তরাধিকারী তৈরির নেপথ্যে কী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই অবস্থায় বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমীর আলী ওয়াহাব আলীর উত্তরাধিকারী হিসেবে দুটি সদনপত্রে প্রতি স্বাক্ষর করেছেন। একটিতে ওয়াহাব আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী এবং গর্ভের সন্তানদের নাম না থাকলেও অপরটিতে তাঁদের নাম রয়েছে। চলতি বছরের ২৩শে এপ্রিল এবং ২৩শে জুলাই পৃথক দুটি সনদপত্র দেয়া হয়। চেয়ারম্যান আমীর আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ‘প্রথম সনদপত্রে আলেয়া বিবির গর্ভের দুই সন্তানের নামোল্লেখ না হওয়ায় দ্বিতীয়বার তাঁদের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ওয়াহাব আলী দুই বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে তিনি ২০০২ সালে তালাক দেন। কিন্তু এ বিয়ের পর যে দুই সন্তান হয়েছে তারাতো পিতার সম্পত্তির দাবিদার।
এদিকে- আলেয়ার গর্ভের কন্যা সন্তান শাহানারা বেগম ওয়াহাব আলীকে পিতা দাবি করে সম্পত্তির জন্য করেছেন মামলা। কিন্তু ওয়াহাব আলীর সন্তনেরা তাদের সৎ মায়ের সন্তান বলে মেনে নিচ্ছেন না। তাদের দাবি, শাহানারারা ওয়াহাব আলীর ঔরসজাত সন্তান হলে অবশ্যই তাদের সম্পত্তির ভাগ দেয়া হতো। ওয়াহাব আলীর বড় ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী কলন্দর আলী মানবজামনিকে জানিয়েছেন- ‘২০০২ সালে প্রমাণিত হয়েছে, শাহানারা এবং তার ভাই আমার বাবার সন্তান নয়। আমার বাবা তাদের যুক্তরাজ্যে নেয়ার জন্য ভিসার আবেদন করেন। কিন্তু ডিএনএ প্রতিবেদনে দেখা যায়, আমার বাবার ঔরসজাত সন্তান নয় তারা। পরে বাবা আলেয়া বিবিকে তালাক দেন এবং কাবিনের হিসেবও শেষ করেন। সে হিসেবে আমাদের সঙ্গে রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই শাহানারাদের। এদিকে, পিতৃসম্পতি রক্ষায় ওয়াহাব আলীর বড় ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী কলন্দর আলী আদালতে মামলা করেছেন। এর আগে বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী দাবি করে শাহানারাও মামলা করেছেন। দুটি মামলাই এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাহানারা বেগম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- সৎভাই কলন্দর আলী আমাকে, আমার মা ও ভাইকে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে নানাভাবে হয়রানি করছেন। তিনি সম্পত্তি একা গ্রাসের জন্য আমার মাকে বাবা তালাক দিয়েছেন বলে ভুয়া তালাকনামা এবং ডিএনএ রিপোর্টে আমরা বাবার সন্তান নই, এমন ভুয়া কাগজ তৈরি করেছেন। প্রকৃত কথা হচ্ছে- আমরা এই বাড়িতে বসবাস করি এবং আমার মাকে বাবা কোনো দিনই তালাক দেননি। আমরা বাবার সম্পদ পেতে আদালতে মামলা করেছি।
বিশ্বনাথ থানার ওসি সামসুদ্দোহা পিপিএম জানান- শাহানরারা দীর্ঘদিন ওয়াহাব আলীর বাড়িতে ছিলেন না। কিছুদিন আগে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাড়িতে ওঠেন। তিনি বাড়িতে ওঠে ভূমিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। যার কারণে তাঁকে সরিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে প্রবাসী কলন্দর আলী তাঁর পিতার বাড়িতে ওঠতে পারছেন না। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা চলছে। এখন আদালত বিষয়টির সুরাহা করবেন বলে জানান তিনি।
সূত্র: মানবজমিন
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://ift.tt/2iARAye
November 06, 2017 at 11:31AM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন